আজ মহান মে দিবস
আজ মহান মে দিবস। দিনটি গোটা বিশ্বে ‘মে ডে’ বা শ্রম দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ও অর্জনের কথা মনে করিয়ে দিতে এই দিনটি পালন করা হয়। মূলত কাজের পরিবেশ আরো উন্নত করা এবং ট্রেড ইউনিয়নকে আরো শক্তিশালী করার দাবিতে বিশ্বজুড়ে এদিন নানা কর্মসূচি হতে দেখা যায়। শুরুর দিকে এ দিবসটি বিভিন্ন সামাজিক ও সমাজতান্ত্রিক দল এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো পালন করত। যদিও এ দিবসের পেছনের আসল প্রতিবাদটি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে, কিন্তু সেখানে এটি সেপ্টেম্বরের প্রথম সোমবার পালন করা হয়ে থাকে। দিবসটি উপলক্ষে দেশের নানান রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ নানা কর্মসূচি পালন করছে।
এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য- ‘শ্রমিক মালিক গড়ব দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’। মে দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বিশ্বের দেশে দেশে পালিত হয়ে আসছে মে দিবস। দিবসটি হয়ে ওঠে বিশ্বের সব শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের চিরঞ্জীব অনুপ্রেরণার দিন। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে মে দিবস পালন শুরু হয়। সে বছরই দিবসটিতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার।
উল্লেখ্য যে, ১৮৮৬ সালে ব্রিটিশ সমাজ সংস্কারক রবার্ট ওয়েনের এক চিন্তা থেকে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রেড ইউনিয়নগুলো দিনে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে এক বিরাট প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করে। রবার্ট ওয়েন ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি পূরণে স্লোগান ঠিক করেন, ‘আট ঘণ্টা কাজ, আট ঘণ্টা বিনোদন এবং আট ঘণ্টা বিশ্রাম’। সবচেয়ে বড় আন্দোলনটা হয় পহেলা মে শিকাগোতে, যেখানে প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক সমবেত হন। সে সময় শিকাগো ছিল যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প-কারখানা ও ইউনিয়ন সংগঠনগুলোর কেন্দ্র। আন্দোলনে বাধা দিলে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদর মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দেয়, একজন মারা যায় ও অনেকে আহত হয়। পুলিশি নিষ্ঠুরতায় ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত বিক্ষোভকারী এবং শ্রমিক নেতারা পরদিন ৪ মে শিকাগোর বিখ্যাত হে মার্কেট স্কয়ারে কর্মসূচির ডাক দেয়।
এ সময় অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়েন। ওই বিস্ফোরণের ফলে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, সাতজন পুলিশ সদস্য নিহত হয় এবং ৬৭ জন কর্মকর্তা আহত হয়। চারজন বিক্ষোভকারী নিহত এবং ৩০ জনেরও বেশি আহত হয়। এ ঘটনা পরে পরিচিতি পায় হে মার্কেট ম্যাসাকার হিসেবে। পরবর্তী সময়ে আটজন নৈরাজ্যবাদী খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত হন এবং তাদের দোষ ঠিকভাবে প্রমাণের আগেই তাদের অনেককে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এ ঘটনাগুলোর স্মরণে ১৮৮৯ সালে ২০ দেশের সমাজকর্মী, শ্রমিক নেতা ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর এক আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে ১ মে ‘মে দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।