উপজাতি শব্দটি বাঙালির দেমাগ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে- রাহমান নাসির
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: উপজাতি বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই, ইহা বাঙালির দেমাগ থেকে সৃষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. রাহমান নাসির উদ্দিন।
আন্তর্জাতিক আদিাসী দিবস উপলক্ষে গত ৯ আগস্ট ২০১৭ চট্টগ্রামে আয়োজিত আলোচনা সভা র্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম চট্টগ্রাম অঞ্চল আয়োজিত অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক (অব.) ড.সুনীতি ভূষণ কানুনগো। উদ্বোধনের পর চট্টগ্রামের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় আদিবাসী সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়।
আলোচনা সভায় তিনি আদিবাসী দিবসের ইতিহাস এবং এর প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরে আরও বলেন, এমডিজি শেষ করে এখন জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি পালনের জন্য সরকার নানা কথা বলছে। সরকারকে মনে রাখতে হবে দেশে ৩০ লক্ষ আদিবাসী মানুষকে পিছনে ফেলে রেখে,আদিবাসীদের রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যতীত এসডিজি বাস্তবায়ন হবেনা। তিনি বলেন, আমি এমন মানুষদের নিয়ে কথা বলছি যাদেরকে বাংলাদেশের লিগ্যাল ফ্রেমওর্য়াকে রাখা হয় নাই। ১৯৭২ সালে সংবিধানে আদিবাসীদের অস্বীকার করা হয়েছে। এখানে বাঙ্গালি উগ্রজাত্যাভিমান বিদ্যমান। তিনি বলেন, ২০০৯-১০ সালের আদিবাসী দিবসে প্রধানমন্ত্রী আইনমন্ত্রী দিপুমনিরা আদিবাসীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন কিন্তু ২০১১ সালে এসে হঠাৎ বলা হলো বাংলাদেশে আদিবাসী নাই। সারা বিশ্বে যখন আদিবাসী বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপ্রত্রের এক দশক পালন করা হচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের আদিাসীরা এখনও তাদের আত্মপরিচয় পাওয়ার জন্য লড়াই করছে। এটা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাকর। আমরা যদি সমতলের কথা বলি, ময়মনসিংহে পাকিস্তান আমলে ১৯৬৫ সালে ৪২০০০একর ভূমি দখল করা হয়েছে। বাংলাদেশ আমলে ১৯৮৬ সালে ৩৩০০০ একর ইকোর্পাকের নামে দখল করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত হলেও ২০ বছরে এর বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করতে হয়। খুবই দূ:খ জনক।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি শরৎ জ্যোতি চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি ও প্রাবন্ধিক জনাব আবুল মোমেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ আবদুল ওয়াজেদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মঙ্গল কুমার চাকমা, বাংলাদেদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির অশোক সাহা, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের তাপস হোড়,আইনজীবী ও নারী নেত্রী রেহেনা বেগম রানু, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের জাতীয় কমিটির সদস্য ফুল কুমার ত্রিপুরা,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনন্দ বিকাশ চাকমা প্রমুখ।
আবুল মোমেন বলেন, বাঙালিদের স্বভাব হচ্চে ঝোপঝাড় কেটে ফেলা এবং পাহাড় কেটে সেটাকে সমতল বানানোর চেষ্টা করা। আর আদিবাসীরা সেগুলোর উপর নির্ভর করেই জীবন ধারণ করে। এখানেই স্বার্থের সংঘাত। কেউ অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই কেউ অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইকে স্বীকার করেনা। তিনি বলেন, বৃটিশরা যখন এখানে আসে তারা একা আসেনি। তাদের সংস্কৃতিকেও নিয়ে এসেছিল। আর আমরা সেই সংস্কৃতি ধারণ করে এগিয়েছি। আদিবাসীরাও সেই সাংস্কৃতিক কালান্তর থেকে মুক্ত নয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা বলেন, বিশ্বে অন্যান্য দেশে আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেওয়া হলেও বাংলাদেশে এখনও আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। বরং সংবিধানে একটি নতুন অনুচ্ছেদ যুক্ত করে আদিবাসীদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি, সম্প্রদায়, উপজাতি এবং ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা বলে অভিহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ শাসন ব্যবস্থার কথা স্বীকার করা হলেও আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদকে অর্থব করে রাখা হয়েছে। অনির্বাচিত এবং দলীয় লোক বসিয়ে জেলা পরিষদকে দুর্নীতির আখরায় পরিণত করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত আদিবাসীদের ভূমি দখল করে তাদেরকে নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। উদাহারণ হিসেবে ২ জুন ২০১৭ লংগদুর ঘটনাকে উল্লেখ করেন তিনি। সমাবেশ থেকে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের জোর দাবি জানানো হয়। আলোচনা শেষে একটি র্যালি নগরির বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়।