জাতীয়

বেইলি রোডে অগ্নি দুর্ঘটনায় প্রানহানিতে শোক জ্ঞাপন এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধে ব্যবস্থা দাবি

বেইলি রোডের অগ্নি দুর্ঘটনার শিকার সকল পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে আজ ৩রা মার্চ , ২০২৪ তারিখ দেশের ৪৮ জন নাগরিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ তারিখ বৃহষ্পতিবার রাতে বেইলি রোডের বহুতল বিল্ডিং এ অগ্নি দুর্ঘটনায় সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৪৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু এবং আরো কয়েকজনের অবস্থা খুবই আশংকাজনক বলে যে খবর জানলাম তাতে আমরা দেশবাসীর মতো গভীরভাবে মর্মাহত এবং উদ্বিগ্ন।

এর আগে ২০১০ সালে পুরাতন ঢাকার নিমতলীতে একটি রাসায়নিক গুদামে অনুরূপ দুর্ঘটনায় ১২৪ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালে চকবাজারে একই ধরনের দুর্ঘটনায় ৭১ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। একই বছর বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লেগে ২৭ জন মানুষ প্রান হারান। হাসেম ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ এবং তাজরিন গার্মেন্টসহ এর আগে যে সকল অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটেছে তা থেকে বেইলি রোডের দুর্ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ভাবার উপায় নেই। এটি ঐসব মর্মান্তিক দুর্ঘটনাগুলিরই ধারাবাহিকতা বলে আমরা মনে করি। পূর্বের ঘটনাগুলির যেটুকু তদন্ত হয়েছে তা থেকে আমরা জানি যেসকল স্থানে ঐ দুর্ঘটনাগুলি ঘটেছে তার কারণ ঐ সকল প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যে চরম অবহেলা প্রধানত দায়ী। আমরা জানতে পেরেছি রাজউক কর্তৃপক্ষ এই ভবনটি শুধুমাত্র বানিজ্যিক অফিস ব্যবহারের শর্তে অনুমোদন দিয়েছিল। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ এই ভবনটিকে অগ্নিকান্ডের জন্য ঝঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনবার নোটিশ পাঠিয়েছে বলেও জানা যায়। নোটিশ পাঠানোর পর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এখানে অবশ্যই প্রশ্ন হচ্ছে শুধুমাত্র নোটিশ দিয়েই কি ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? তাদের আইনগত ব্যবস্থা নেয়ারও ক্ষমতা রয়েছে, তা তারা কেন করল না? নকশা অনুযায়ী বিল্ডিং হয়েছে কিনা তা রাজউকের তদারক করার কথা কিন্তু লোকবল নেই এই অজুহাতে রাজউকে কোন অবস্থায় দায় এড়াতে পারেনা। তাই বেইলি রোডের বহুতল ভবনে দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবার ও স্বজনদের সীমাহীন দু:খ ও শোকের সঙ্গে সহমর্মিতা জানানোর সাথে সাথে রাজউক এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সকল কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের একান্ত জিজ্ঞাসা, এই ধরনের দু:খজনক দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে তারা আর কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন? তা দেশবাসীকে সবিস্তারে জানানো, জবাবদিহিতা করা আজ সময়ের দাবি। কারণ এমন দুর্ঘটনা আমরা একাধিক গার্মেন্টস কারখানাসহ অসংখ্য শিল্প ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও ঘটতে দেখেছি, এখনো দেখছি। সেই সব দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার বা প্রতিকার মানুষ আজও পায়নি। এমন অব্যবস্থা, বিচারহীনতা, প্রতিকারবিহীন অবস্থা অব্যাহতভাবে চলতে পারে না।
আমরা সরকারের কাছে অতীতের সকল অগ্নি দুর্ঘটনাসহ বেইলি রোডে গত বৃহষ্পতিবার রাতে ঘটে যাওয়া অগ্নি দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করার জন্য অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করার জোর দাবি জানাচ্ছি। আংশিক নয়, সার্বিক তদন্ত চাই।

এ বাদেও ক) তদন্তের মাধ্যমে ঐ বহুতল ভবনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভ‚মিকা এবং সিটি কর্পোরেশন ও রাজউকসহ বিভিন্ন সরকারি কর্তৃপক্ষের অবহেলা, ব্যর্থতা ও নজরদারির অনুপস্থিতি কতটা দায়ী তাও সার্বিকভাবে শনাক্ত করতে হবে।

খ) অগ্নিকান্ড প্রতিরোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষের তদারকি কার্যকরভাবে হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখে সেই মোতাবেক দ্রুত কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
গ) দায়ী ব্যক্তি বা সংশিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে আইন অনুযায়ী দায় নিতে হবে এবং দায়ীদের শাস্তি প্রদান করতে হবে।
ঘ) অবিলম্বে দীর্ঘমেয়াদি অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধ নীতিমালা প্রনয়ণ ও তার বাস্তবায়ন সুনিশ্চিত করতে হবে। নীতিমালা প্রনয়নে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত রাখতে হবে।
ঙ) ক্ষতিগ্রস্ত সকল পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
চ) নগর ও শিল্পাঞ্চলে এলকাভিত্তিক অগ্নি প্রতিরোধ ও নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।
ছ) অন্তবর্তীকালীন পদক্ষেপ হিসেবে সকল রেস্তোরা, শিল্প-কারখানাসহ যে সব যায়গায় বহু লোকের সমাগম হয় সেখানে দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা যাতে বাধ্যতামূলকভাবে রাখা হয়, তার বিধান কার্যকর করতে হবে।

বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন-

১. সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
২. খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি
৩. ড. হামিদা হোসেন, মানবাধিকার কর্মী
৪. আলী ইমাম মজুমদার, প্রাক্তন মন্ত্রীপরিষদ সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
৫. আনু মোহম্মদ, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৬. ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি
৭. অ্যাড. জেড আই খান পান্না, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
৮. অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
৯. অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান নির্বাহী, বেলা ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
১০. বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)
১১. ড. পারভীন হাসান, ভাইস চ্যান্সেলর, সেন্টাল উইম্যান ইউনিভার্সিটি
১২. অ্যাড. সালমা আলী, নির্বাহী পরিচালক, বি এন ডব্লিউ এল এ
১৩. ফারুক ফয়সাল, নির্বাহী পরিচালক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র
১৪. ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অনারারি নির্বাহী পরিচালক, ব্লাস্ট
১৫. ড. আসিফ নজরুল, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৬. ড. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী
১৭. রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৮. সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
১৯. কাজল দেবনাথ, প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
২০. ডা. নায়লা জে. খান, ডিরেক্টর, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন
২১. শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এসোসিয়েশ ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি)
২২. শিরিন হক, সদস্য, নারীপক্ষ
২৩. গীতি আরা নাসরিন, অধ্যাপক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়
২৪. অ্যাড. তবারক হোসেইন, সহ-সভাপতি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
২৫. অ্যাড. মিনহাজুল হক চৌধুরী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
২৬. মনিন্দ্র কুমার নাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
২৭. তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৮. ফিরদৌস আজিম, অধ্যাপক, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়
২৯. রাহনুমা আহমেদ, কবি ও লেখক
৩০. ড. সুমাইয়া খায়ের, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩১. ড. রুশাদ আফ্রিদি, শিক্ষক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩২. মাইদুল ইসলাম, পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় , পেন্সেলভিয়া , যুক্তরাষ্ট্র
৩৩. সাঈদা গুলরুখ, সাংবাদিক
৩৪. সঞ্জীব দ্রং, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
৩৫. সায়মা খাতুন, নৃবিজ্ঞানী ও প্রাক্তন সহযোগি অধ্যাপক, জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৩৬. অধ্যাপক সায়মা লুৎফা, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩৭. জোবাইদা নাসরীন কণা, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩৮. রোজিনা বেগম, মাহিডন বিশ^বিদ্যালয়, থাইল্যান্ড
৩৯. জাকির হোসেন, নির্বাহী পরিচালক, নাগরিক উদ্যোগ
৪০. অ্যাড. সাইদুর রহমান, প্রধান নির্বাহী, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন
৪১. মো: নুর খান, মানবাধিকার কর্মী
৪২. ব্যারিস্টার আশরাফ আলী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
৪৩. ব্যারিস্টার শুভ্র চক্রবর্তী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
৪৪. ব্যারিস্টার শাহাদাত আলম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
৪৫. দীপায়ন খীসা, কেন্দ্রিয় সদস্য, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
৪৬. হানা শামস আহমেদ, আদিবাসী অধিকার কর্মী
৪৭. অরূপ রাহী, সাংস্কৃতিক কর্মী
৪৮. মুক্তাশ্রী চাকমা, কোর গ্রুপ মেম্বার, সাঙ্গাত

Back to top button