জাতীয়

জনগণের অর্থ অপচয় বন্ধ করুন: বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতি

বন্ধ চিনিকলে অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য শোধণাগার বসিয়ে জনগণের অর্থ অপচয়ের প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ২৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক। বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয় ২০০৪ সাল থেকে বন্ধ অবস্থায় পড়ে থাকা গোবিন্দগঞ্জের রংপুর সুগারমিল সহ তিনটি চিনিকলে ইটিপি (বর্জ্য শোধনাগার) বসিয়ে জনগণের অর্থ অপচয়সহ নানা প্রকল্পের নামে জনগণের অর্থ আত্মসাত করা হচ্ছে। বিবৃতি প্রদানকারীরা এসমস্ত ঘটনার স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানতে পারলাম যে, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন-এর আওতাধীন ৩টি চিনিকলে বছরের পর বছর বন্ধ থাকার মধ্যেই অতি সম্প্রতি ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার বা ইটিপি স্থাপন করা হয়েছে। এই বন্ধ থাকা চিনিকল ৩টি হচ্ছে- গোবিন্দগঞ্জের রংপুর সুগার মিলস লিমিটেড, দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ সুগার মিলস লিমিটেড এবং পঞ্চগড় জেলার পঞ্চগড় সুগার মিলস লিমিটেড। এই ৩টি সুগার মিলই অনেক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে- এই মিলগুলিতে কোন চিনি উৎপাদন হয়না। এদের মধ্যে গোবিন্দগঞ্জের রংপুর সুগার মিলস লি: ২০০৪ সাল থেকেই বন্ধ আছে। এখানে কোন চিনি উৎপাদন কিংবা এই চিনিকলের নামে সাওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে আখ উৎপাদনের জন্য যে ১৮৪০ একর জমি রিকুইজিশনের মাধ্যমে নেয়া হয়েছিল সেখানে এখন আর কোন আখও উৎপাদন হয়না। বরং ঐ সব জমিতে ধান, গম, সবজিসহ সারাবছর কমপক্ষে তিনবার অন্য ফসল ফলানো হয়।”

এছাড়াও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, “দেশে বিরাজমান নানা সংকটের মধ্যে যখন সরকার সব ধরনের অপচয় রোধ এবং কৃচ্ছ্র সাধনের কথা বার বার বলে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন কিংবা সংশ্লিষ্ট মিল কর্তৃপক্ষ কি করে এই বহু বছরের বন্ধ শিল্প কারখানার জন্য অপ্রয়োজনীয় ইটিপি স্থাপনে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প নিতে পারে দেশবাসী ও ট্যাক্সদাতা নাগরিক হিসেবে সেটাই আমাদের জিজ্ঞাসা। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কিভাবে এই অপচয়ের প্রকল্পগুলি অনুমোদন দিয়েছে, সেটাও দেশবাসীর জানার অধিকার নিশ্চয়ই আছে।”

বিবৃতিতে ক্ষোভ জানিয়ে বলা হয়েছে, “আমরা গভীর ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করছি যে সকল শিল্পে ইটিপি দরকার সেখানে ইটিপি স্থাপনে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যে উদ্যোগ ও তাগিদ একান্ত কাম্য সেটা প্রায় অনুপস্থিত। সাভারের ট্যানারী শিল্পসহ অন্যান্য অনেক কারখানায় ইটিপি বসানো হলেও তা কার্যকরভাবে নিয়মমতো চালু রাখা হয় না, যার পরিণতি পরিবেশের জন্য ভয়াবহ। এই সব ব্যাপারে সরকারের তদারকি কিংবা আইন প্রয়োগের কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ লক্ষ করা যায় না। অথচ অপ্রয়োজনীয় ইটিপি বসিয়ে জনগণের ট্যাক্সের কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হচ্ছে। এই বিষয়টির পেছনে কাদের সক্রিয় ভ‚মিকা ছিল তার সুষ্ঠু স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। যারা এই অপচয়ের প্রকল্প প্রনয়ণ ও অনুমোদনের জন্য দায়ী তাদের উপযুক্ত শাস্তি ও জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। বন্ধ চিনিকলের ইটিপি বসানো ছাড়াও আর কোন কোন ক্ষেত্রে এ ধরণের জনগণের অর্থের অপচয়-এর জন্য অপ্রয়োজনীয় জনস্বার্থবিরোধী প্রকল্প বানিয়ে এক শ্রেনীর লোকের দ্বারা লুটপাটের ব্যবস্থা হয়েছে এবং হচ্ছে- তার তথ্য উদঘাটনের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানানোর পাশাপাশি গণতদন্ত কমিশন গঠনের জন্য বৃহত্তর নাগরিক সমাজের কাছেও আমরা আহবান জানাই।”

বেসরকারি সংস্থা এএলআরডি নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা স্বাক্ষরিত সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বার্তা অনুযায়ী বিবৃতিতে সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল সহ দেশের ২৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক স্বাক্ষর প্রদান করেছেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী নাগরিকেরা হলেন-

মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, নিজেরা করি-র সমন্বয়কারী খুশী কবির, মানবাধিকার কর্মী ড. হামিদা হোসেন, নারীপক্ষ-র সদস্য শিরিন হক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র-র সভাপতি অ্যাড. জেড আই খান পান্না, অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এর সাধারণ সম্পাদক এড. রাণা দাশগুপ্ত, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি-র ভাইস চ্যন্সেলর ড. পারভীন হাসান, বেলা-র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান, সুব্রত চৌধুরী, কাজল দেবনাথ, এড. তবারক হোসেইন, এএলআরডি-র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এর সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, নাগরিক উদ্যোগ এর নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র-র নির্বাহী পরিচালক মো: নুর খান, এড. সাইদুর রহমান, ব্যারিস্টার মো: আশরাফ আলী, এড. মিনহাজুল হক চৌধুরী, ব্যারিস্টার শুভ্র চক্রবর্তী, রোজিনা বেগম, দীপায়ন খীসা, জোবাইদা নাসরীন কণা, তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সুমাইয়া খাতুন, হানা শামস আহমেদ প্রমুখ।

#আইপিএসসি

Back to top button