আঞ্চলিক সংবাদ
পার্বত্য চুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তিতে বাঘাইছড়িতে জনসভা: দ্রুত চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি
চুক্তি দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ে আগুন জ্বলবে বলে হুশিয়ারী দেয়া হয় সভায়।
আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছরপূর্তি উপলক্ষে রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল (২ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত সভায় বক্তাগণ বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন না করার জন্য সরকার ও সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রেও একটি বিশেষ মহল আগেও সক্রিয় ছিল এবং বর্তমানেও রয়েছে।
“জুম্ম জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সুদৃঢ় করুন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী সকল কার্যক্রম প্রতিহত করুন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্দোলনে শামিল হন” শ্লোগান নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক সুমিতা চাকমা। উপজেলার খেদারমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিল্টু চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক নজরুল কবীর, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী সুমি খান। এছাড়াও সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বাঘাইছড়ি উপজেলার জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান ও বিভিন্ন কলেজ ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সুশীল সমাজের নেতৃবন্দ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাঘাইছড়ি উপজেলার ৩২নং বাঘাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইতিময় চাকমা অলিভ।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি নজরুল কবীর বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন না করার জন্য সরকারের কাছের একটি বিশেষ মহল ও সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের একটি বিশেষ অংশ আগেও সক্রিয়ভাবে কাজ করে গেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে।” পার্বত্য চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ অধিকার আদায়ের জন্য জুম্ম জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সুদৃঢ় করার আহ্বান জানান তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুমি খান বলেন, “পাহাড়ে এখনো ব্রিটিশদের সেই ‘ভাগ কর, শাসন কর’ ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা চলমান রয়েছে। উন্নয়নের নামে আদিবাসীদের ধ্বংস করা হচ্ছে, তাদেরকে ভিটেমাটি হারা করা হচ্ছে।”
রূপকারী মৌজার হেডম্যান ও রূপকারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চাকমা বলেন, “নিপীড়িত-নির্যাতিত জুম্ম জনগণের মহান আত্মবলিদান ও অবর্ণনীয় ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে জুম্ম জনগণ তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি-বাঙালি স্থায়ী অধিবাসীদের অধিকার সনদ এই পার্বত্য চুক্তি অর্জিত হয়েছে। কিন্তু ২৫ বছরেও এই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় জুম্মদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।” তিনি চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়ে বলেন, “চুক্তি দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ে আগুন জ্বলবে।”
প্রত্যাগত জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে জ্যোতিস্মন চাকমা বলেন, “সুদীর্ঘ ২৫ বছর আগে ঐতিহাসিক এইদিনে সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘ দুই যুগের অধিক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটে। এরই মধ্যে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে সাময়িক শান্তি ফিরে আসে। চুক্তির মধ্যে দিয়ে আমাদের আশা ছিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের নিরাপত্তা বিধান করবেন। আমাদের প্রত্যাগত জনসংহতি সমিতির সদস্যদের যথাযথ পুনর্বাসন করবেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, চুক্তি স্বাক্ষরের বছর দুয়েক যেতে না যেতেই প্রত্যাগত জনসংহতি সমিতির সদস্যদের উপর নেমে আছে চরম হতাশা, নিরাশা, নিরপত্তাহীনতা ও বেকারত্ব। এছাড়াও আরও আমাদের উপর নেমে আসে নানা প্রকারের হামলা, মিথ্যা মামলা, হয়রানি ও নানান দমন-পীড়ন। আজ আমরা দিশেহারা ও অসহায়ত্ব নিয়ে দিনাতিপাত করছি। আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর বর্ষপূর্তির দিনে আমরা পুনর্বার সদাশয় গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস রেখে অপেক্ষা করছি যে, তিনি আমাদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করবেন, যথাযথ পুনর্বাসন করবেন এবং সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন করবেন।”
স্বাগত বক্তব্যে চেয়ারম্যান ইতিময় চাকমা অলিভ বলেন, ‘সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বহু ধারা, বহু বিষয় বাস্তবায়ন করলেও এখনো পর্যন্ত চুক্তির যে মৌলিক রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করেনি। ফলে সরকার জুম্ম জনগণকে সেই চুক্তির ২৫ বছর আগের সময়কালে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করছে।’
এছাড়া সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কাচালং সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ দেবপ্রসাদ দেওয়ান, সাবেক বাঘাইছড়ি ভাইস চেয়ারম্যান সাগরিকা চাকমা প্রমূখ।