আঞ্চলিক সংবাদ

লংগদুতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ত্রাণ বিতরণ

এস জে চাকমা, লংগদু থেকে ফিরে: ৩০ জুন এবং ১লা জুলাই ২০১৭ বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে লংগদুতে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক অগ্নি সংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ী ২১০ পরিবারকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে ১০০ কেজি চাল এবং এক বান্ডিল ঢেউটিন প্রদান করা হয়। ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক তাপস হোড়ের নের্তৃত্বে ১০ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের চট্টগ্রামের সভাপতি শরৎ জ্যোতি চাকমা,ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. নিতাই প্রসাদ ঘোষ, সহ-সভাপতি এ্যাড. প্রদীপ কুমার চৌধুরী,অর্থ সম্পাদক সুভাষ দাশ,যুন্ম সম্পাদক মতি লাল দেওয়ানজি,কেন্দ্রীয় সদস্য প্রণব দাশগুপ্ত, সাবেক ছাত্র নেতা বাচ্চু চাকমা, পিসিপি’র রিন্টু চাকমা এবং সুলভ চাকমা। লংগদুর বাত্যাপাড়া, মানিকজোড়ছড়া এবং তিনটিলা গ্রামে ত্রাণ বিতরণ শেষে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা এলাকা পরিদর্শন করে। গ্রাম তিনটি ঘুরে দেখা যায় সেটেলার বাঙালিরা পাহাড়ীদের ঘরে আগুন দিয়ে সব শেষ করে দিয়েছে। ঘরে তোলা ফসল,ধান পুড়ে গেছে। লোক জন এখনো বাড়ী ফিরতে পারেনি। সরকারের পক্ষ থেকে বাড়ি নির্মাণের সহযোগীতা প্রদানের কথা থাকলেও কার্যকর হয়নি। ভষ্মিভূত বাড়িগুলোর জায়গায় এক মাসে ঘাস জন্মাতে শুরু করেছে। নতুন করে বাড়ি বানানোর খুটিও চোখে পড়েনি। নেই বাড়ি তৈরির ব্যস্ততা। আশেপাশে অনেক অস্থায়ী পুলিশ ফাঁরি, সেনাবাহিনীর টহলটীমের আনাঘোনা, বিজিবি সদস্যদের অবস্থান সবই আছে কিন্তু কোন আদিবাসী তাদের কাছে নিজেদের নিরাপদ মনে করেনা বলে জানিয়েছেন অনেক গৃহ হারা। ত্রাণ বিতরণের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রতিনিধি দলের প্রধান তাপস হোড় গৃহ হারা আদিবাসীদের দু:খ দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে যান এবং তাদের কষ্টের এমন দিনে সশরীরে উপস্থিত হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেন। তিনি বলেন, আমরা যা দিচ্ছি খুবই সামান্য। আপনারা ঘর হারিয়েছেন। জীবনের সঞ্চিত সব সম্পত্তি হারিয়েছেন। এই ক্ষতি কোন দিন পূরণ হবেনা। আমরা ঘটনা যারা ঘটিয়েছে উপযুক্ত শাস্তি দাবি করি এবং এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। তিনি ক্ষতি গ্রস্তদের ধৈর্য সহকারে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহবান জানান।ত্রাণ বিতরণকালে স্থানীয়ভাবে গঠিত ত্রাণবিতরণ কমিটির আহবায়ক অশ্বিনী কুমার চাকমা মনিশংকর চাকমাসহ পাড়ার মুরুব্বি ও ক্ষতিগ্রস্তরা উপস্থিত ছিলেন। লংগদুতে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে মনি শংকর চাকমা দুর্দিনে ঐক্য পরিষদের এমন সহযোগীতার জন্য প্রতিনিধি দলকে ধন্যবাদ জানান।
উল্লেখ্য গত ২ জুন ২০১৭ মোটর সাইকেল চালক নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ খাগড়াছড়ির দীঘিনালার চার মাইল এলাকায় পাওয়া গেলে তাকে কেন্দ্র করে লংগদুর তিনটিলা,বাত্যাপাড়া এবং মানিকজোরছড়ায় আদিবাসী বাড়িতে সেনা পুলিশের সহযোগীতায় সেটেলার বাঙালিরা ২২৪টি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে যায় এবং ৭৩টি ঘরে লুটপাট ও বাংচুর চালায়। এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সেটেলার বাঙালিরা প্রথমে জুম্মদের ঘরবাড়িতে পেট্রোল ও কেরোসিন ঢেলে একের পর এক অগ্নিসংযোগ করে। সেটেলাররা এক ধরনের গ্যাসের বোতলও ব্যবহার করেছে। ফলে পাকা ও আধা পাকা ঘরবাড়িতে দ্রুত আগুন লাগে এবং পুড়ে ছাই হয়ে যায়। মানবেতর জীবন যাপন করছে গৃহ হারা মানুষেরা। আর বর্ষা মৌসুমে গৃহহীন থাকার বেদনা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা।

Back to top button