১৮ বছরেও চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্যাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল, উদ্বেগজনকঃ সন্তু লারমা
গত ৮ই মে রাজধানীর বেইলী রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সের ভিত্তিফলক উন্মোচন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সের ভিত্তিফলক উন্মোচন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে পার্বত্য অধিবাসীদের পক্ষে ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন এবং পাশাপাশি অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সকলকেও আন্তরিক সাধুবাদ জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স এর ভিত্তিফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা বলেনঃ
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সের ভিত্তিফলক উন্মোচন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর ভিত্তিফলক উন্মোচন করেছেন। প্রসঙ্গত ইহা উল্লেখ্য করতে চাই যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদসহ পার্বত্য অঞ্চলের সুধী সমাজ দীর্ঘদিন ধরে এই কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য সরকারের নিকট আবেদন জানিয়ে এসেছে।
চারদলীয ঐক্যজোট সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রাথমিক উদ্যোগ গ্রহণ করলেও শেষ পর্যন্ত অজ্ঞাত কারণে সে উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু বর্তমান সরকার সেই আবেদনে সাড়া দেওয়ায় আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স-এর ভিত্তিফলক উন্মোচিত হলো।
আজকের এই দিনটি নি:সন্দেহে পার্বত্যবাসীদের একটি শুভ দিন – শুভ মুহুর্ত। একটা আনন্দঘন পরিবেশেও এই মহতি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীরা অবশ্যই খুশী হবে এবং তাদের অন্তরে নতুন করে আশা-আকাঙ্ক্ষার সঞ্চার করবে।
কিন্তু তা সত্ত্বেও একটা প্রশ্ন অনেকের মনে উদিত হতে পারে যে, আজকের এই আয়োজন ও পরিবেশ পার্বত্যাঞ্চলের সামগ্রিক পরিস্থিতির সাথে কতটুকু সঙ্গতিপূর্ণ। কারণ পার্বত্যাঞ্চলের বিরাজমান পরিস্থিতির কোন অবস্থাতেই সুখদায়ক ও আশাব্যঞ্জক নয়।
আজকের এই শুভ অনুষ্ঠানে তেমন কিছু বলার অবকাশ নেই। তবুও পরিশেষে প্রসঙ্গত একটুকু বলতে চাই – পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যেই ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তি দীর্ঘ ১৮ বছর পরেও যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে পার্বত্যাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল, উদ্বেগজনক ও হতাশাব্যঞ্জক এবং অবিশ্বাস ও সন্দেহের দূরত্ব ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে – পার্বত্যবাসীদের মনে হতাশা ও নিরাশা চেপে বসেছে – নিরাপত্তাহীন ও অনিশ্চিত ভবিষ্যত ভাবনায় তারা আজ বিপর্যস্ত। জাতীয় স্বার্থে এই বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনার দাবি রাখে।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণ নেতৃত্বে যেমনি পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স নির্মাণ সম্ভব হলো, তেমনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে পার্বত্য জেলা পরিষদের কার্যাবলীর সকল দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানসমূহ নির্বাহী আদেশে হস্তান্তরকরণ, আঞ্চলিক পরিষদের কমপ্লেক্স নির্মাণ, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট আইনসমূহ সংশোধনকরণসহ পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হতে পারে।