বাংলাদেশের আদিবাসী ভাষার সংরক্ষণ ও ডিজিটাইজেশন নিয়ে রাঙ্গামাটিতে আলোচনা সভা
‘বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠী ভাষার ডিজিটাইজেশন’ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে শনিবার রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ মিলনায়তনে একটি কমিউনিটি সচেতনতা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে ৪০টি ভাষার অন্তত ১২,০০০ মিনিট স্পিচের আইপিএ উচ্চারণসহ একটি ডিজিটাল রিসোর্স রিপোজিটরি তৈরি করে সেখানে বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠী ভাষাসমূহ সংরক্ষণ করা হবে, এবং সেই সাথে প্রতিটি ভাষার জন্য ত্রৈভাষিক শব্দকোষ ও লিখিত রূপ থাকা ভাষাসমূহের জন্য ইউনিভার্সাল কিবোর্ড তৈরি করা হবে জানানো হয়। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর “গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ” প্রকল্প (ইবিএলআইসিটি) এবং বাস্তবায়ন সহযোগী ড্রিম ৭১ বাংলাদেশ লিমিটেড কর্তৃক আয়োজিত দিনব্যাপি এই সভায় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, পাংখোয়া, খিয়াং, গুর্খা, অহমিয়া, তঞ্চঙ্গ্যা ভাষার প্রতিনিধিবৃন্দ, ভাষা-সম্প্রদায়ের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, ভাষা বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও গণমাধ্যম কর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইবিএলআইসিটি-র প্রকল্প পরিচালক মাহবুব করিম, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ইবিএলআইসিটি-র প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ খন্দকার রাজেকুল ইসলাম। আমন্ত্রিত রিসোর্স পার্সন হিসেবে বক্তব্য রাখেন চাকমা ভাষা প্রশিক্ষক ও এমএলই রাইটার্স প্যানেলের সদস্য প্রসন্ন কুমার চাকমা, রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল ইন্সটিটিউটের গবেষণা কর্মকর্তা শুভ্রজ্যোতি চাকমা, গুর্খা কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বাহাদুর, মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মউচিং মারমা, এবং মাটিরাঙ্গা সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল প্রশান্ত কুমার ত্রিপুরা।
কারিগরি অধিবেশন ও উন্মুক্ত আলোচনা- এই দুই ভাগে বিভক্ত এই সভার স্বাগত বক্তব্য দেন ড্রিম ৭১ এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক নাজমুল গণি। সঞ্চালনা করেন প্রকল্পের ডাটা কালেকশন স্পেশালিষ্ট রিবেং দেওয়ান এবং প্রোগ্রাম অফিসার মেসবাহুল ইবনে মুনীর। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন নৃগোষ্ঠী ভাষা বিশেষজ্ঞ মৃদুল কান্তি সাংমা এবং প্রকল্প গবেষক চারু হক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহবুব করিম কেন ইবিএলআইসিটি নামক বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ প্রকল্প দেশের অন্যান্য ভাষার সংরক্ষণ ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। এ সময় তিনি বাঙালিদের সাথে দেশের অন্যান্য জাতির সহাবস্থানগত ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক এবং একইভাবে বাংলা ভাষার সাথে অন্যান্য ভাষার সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরেন। সেই বিবেচনায় ‘বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠী ভাষার ডিজিটাইজেশন’ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রতিটি ভাষা এবং সংশ্লিষ্ট ভাষার ব্যবহারকারীদের আত্মপরিচয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সুরক্ষিত হবে উল্লেখ করেন।
রিসোর্স পার্সনদের বক্তব্য ও উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ভাষা-প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনায় রাঙ্গামাটির নৃগোষ্ঠী ভাষাসমূহের বর্তমান পরিস্থিতি, এবং ভাষা উন্নয়নের অগ্রগতি এগিয়ে নিতে কী কী করা দরকার এ বিষয়ে নানাবিধ সুপারিশ উঠে আসে। পাশাপাশি, যেসমস্ত ভাষা-সম্প্রদায় নিজস্বভাবে নিজ নিজ ভাষার উন্নয়নে কাজ করছে তাদেরকে কীভাবে সরকারি এই উদ্যোগের সাথে সম্পর্কিত করা যায় তার কৌশল নির্ধারণ এবং একাধিক উপভাষা থাকা ভাষাগুলোর নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে যথাযথ বিবেচনা বজায় রাখার আহবান জানানো হয় এই সভায়।
ইবিএলআইসিটি প্রকল্পের এই কম্পোনেন্টটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশের নৃগোষ্ঠী ভাষাগুলোর ডিজিটাল আর্কাইভিং এর পাশাপাশি নৃতাত্ত্বিক ভাষাভাষী মানুষেরা কিবোর্ডে নিজ নিজ মাতৃভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল জগতে নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারবেন এবং সংগৃহীত ভাষা-নমুনা ভবিষ্যতে ভাষার পুনরুজ্জীবন ও নানাবিধ গবেষণার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। ‘বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠী ভাষার ডিজিটাইজেশন’ কম্পোনেন্টটির বাস্তবায়নে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ড্রিম ৭১ বাংলাদেশ লিমিটেড।