ঠাকুরগাঁওয়ে সাঁওতালদের জমি দখলে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ
ঠাকুরগাঁওয়ের উপজেলাধীন জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন ও তাঁর স্বজনদের বিরুদ্ধে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের জমি দখলের জন্য হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে ভুক্তভোগী পরিবারটি আদালতে মামলা করেছে।
ভুক্তভোগী মার্টিনা হাসদা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, গত মাসের শেষের দিকে তিনি বাড়ির পাশের পৈতৃক জমির ওপর টিনের চালা নির্মাণ করছিলেন। তখন জগন্নাথপুর ইউপির চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন, তাঁর তিন আত্মীয় মো. মোতাল্লেব, আবুল বাসার ও মো. কাউসার এবং ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. রায়হানসহ কয়েকজন এসে বাধা দেন। চেয়ারম্যান এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হুমকি দিয়ে তিনি এখানকার ৫৫ শতক জমি মার্টিনা হাসদার বাবার কাছ থেকে কিনেছেন বলে দাবি করেন। তবে জমির মালিকানার বিষয়ে তাঁরা কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
এ ঘটনায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মার্টিনা হাসদার ভগ্নিপতি সমু মুরমু ভয়ভীতি দেখানো, হুমকি ও হামলার অভিযোগে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মো. রায়হান ও আবুল বাসারের নামে মামলা করেন। এ ছাড়া ৯ মার্চ ঠাকুরগাঁও থানায় লিখিত অভিযোগ করেন মার্টিনা হাসদা। এরপরও ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ করেন মার্টিনা হাসদা।
মার্টিনা হাসদা সংবাদ মাধ্যমকে আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষে যাঁরা কথা বলেছেন, চেয়ারম্যানের লোকজন তাঁদেরও হুমকি দিচ্ছে।’
মার্টিনা হাসদার বোনের স্বামী সমু মুরমু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে জমি নিয়ে কথা বলতে গেলে চেয়ারম্যানের লোকজন গৌরীপুরের গেন্দানাথ নামের এক ব্যক্তিকে মারধর করেছেন। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’ আমার সন্তান ভয়ে স্কুলে যেতে পারছেনা।
মার্টিনা হাজদার চাচাতো ভাই রবি হাসদা (৩৬) সংবাদকর্মীদের বলেন, ২০০৬ সালে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ১০ বছরের জন্য ২৮ শতক জমি গ্রামের মো. হারুনের কাছে তিনি বন্ধক রেখেছিলেন। বন্ধকের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে হারুন বলেন তিনি জমি কিনে নিয়েছেন। কয়েক দিন আগে সেই জমি ফেরত চেয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। এখনো কোনো সুরাহা হয়নি।
জেলা জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি সূর্য মুরমু সংবাদমাধ্যমকে বলেন, জগন্নাথপুর ইউনিয়নের খোঁচাবাড়ির ওই এলাকায় (দৌলতপুর) ৪০টি সাঁওতাল পরিবার বসবাস করত। এখন টিকে আছে মাত্র ১২ পরিবার। বাকিরা স্থানীয় জমি দখলদারদের অত্যাচারে জমি হারিয়ে অন্য জায়গায় চলে গেছে।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। বিষয়টি মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত জমিতে ঘর তোলা বন্ধ রাখতে সাঁওতাল পরিবারের লোকজনকে অনুরোধ করেছিলাম। তাঁর বিরুদ্ধে সাঁওতালদের জমি দখল, নির্যাতন বা হুমকি দেওয়ার যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়।’
ঠাকুরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, ‘আদিবাসী লোকজনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। যাতে কেউ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটনাতে না পারেন, সে জন্য ওই এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’