বান্দরবানে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে
বান্দরবান প্রতিনিধি: বান্দরবানে ডায়রিয়া প্রকোপে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। দুষিত পানি কিংবা আবাহাওয়া পরিবর্তন হওয়ার কারণে ডায়রিয়া সমস্যা দেখা দিয়েছে পার্বত্য জনপদে। গত এক সপ্তাহে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৪২ জন ভর্তি হয়েছে। তবে শুধুমাত্র গত একদিনে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
বান্দরবান সদর হাসপাতাল এর তথ্য মতে , ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে গত ২৩ হতে ২৯ মার্চ পর্যন্ত এক সপ্তাহে সদর হাসপাতালে ৪২জন ভর্তি হয়েছেন। আর গত একদিনে (৩০ মার্চ) সকাল পর্যন্ত ৭ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ৬ মাসের শিশুও রয়েছে। ৭ জনের মধ্যে চারজনই শিশু, অন্য ৩ জন ১৮- ৪৮ বছরের মধ্যে।
এদিকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৭জন ভর্তি হলেও কেউ কেউ হাসপাতালের বর্হিবিভাগ থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ও ওষুধ নিয়ে যাচ্ছে। তবে বান্দরবানের বিভিন্ন ওষুধের দোকানে (ফার্মেসী) লোকজন গিয়ে পল্লী চিকিৎসক/ফার্মাসিস্টদের কাছে রোগী দেখিয়ে ওষুধ নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বান্দরবান শহরের মধ্যমপাড়ার ফার্মেসীর মালিক পল্লী চিকিৎসক সেন্টু চৌধুরী বলেন, গত কয়দিন যাবত তাঁর ওষুধের দোকানে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে লোকজন আসছেন। এরমধ্যে বয়স্ক লোকই বেশি।
সেন্টু চৌধুরী জানান, মঙ্গলবার তাঁর দোকানে ৬/৭জন লোক ডায়রিয়ার ওষুধ কিনতে আসেন। বুধবার সাপ্তাহিক হাটবারে তাঁর দোকানে বেলা ১২টা পর্যন্ত ৪জন ডায়রিয়ার রোগী ওষুধ নিতে আসেন।
বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. নীহার রঞ্জন নন্দী জানান, ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়া নিয়ে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শিশুরা ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, ডায়রিয়া আক্রান্তরা সদর উপজেলার হলেও জেলার অন্য ৬ উপজেলায় গত কয়দিনে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নেই।
সিভিল সার্জন ডা. নীহার রঞ্জন নন্দী বলেন, পানিজনিত ও আবহাওয়া জনিত কারণে বর্তমানে কিছু লোক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে সদর উপজেলাতে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হলেও জেলার অন্য ছয় উপজেলায় ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা নেই।
সিভিল সার্জন লোকজনকে আতংকিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এখন প্রচন্ড গরম পড়ছে, তাই খাবার খাওয়ার সময় সচেতন হতে হবে। পানি সমস্যা কিছুটা হলেও পানি ফুটিয়ে পান করার পরামর্শ দেন।
চিকিৎসকরা বলেছেন, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তিন মাস এবং অক্টোবর ও নভেম্বর এ দু মাস ডায়রিয়া আক্রান্ত হয় বেশি।
এদিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সদর উপজেলায় ৪২৯জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর আগে ২০২১ সালে এক বছরে মোট এক হাজার ৫৪৮জন সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। তবে এদের মধ্যে কেউ মারা যায়নি।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আক্রান্তদের মধ্যে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট হয়ে ভর্তি হওয়ায়দের উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে প্রেরণ (রেফার) করা হয়। তবে ডায়রিয়া ও ম্যালেরিয়া আক্রান্তদের বান্দরবান হাসপাতালেই চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
বান্দরবান সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. জিয়াউল হায়দার বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে এখন, তাই শিশু ও বয়স্করা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, জ্বর এবং সর্দি-কার্শিতে আক্রান্ত হচ্ছেন।
এদিকে বান্দরবান সিভিল সার্জন কার্যালয় তথ্য মতে , ২০২১ সালে জেলায় শিশু ও বয়স্ক মিলে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছিল ছয় হাজার ৪৪৪ জন। এরমধ্যে জেলার আলীকদমে ৬ ও থানচিতে একজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এটি সরকারি হিসাব হলেও বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা আরও বেশি।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তথ্য জানা যায়, গত বছরের ১০ নভেম্বর হতে চলতি বছরের ১৪ মার্চ পর্যন্ত জেলায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৯৫৬ জন। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে জেলায় ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ২৩১ জন। এরমধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি ও আলীকদম উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।