শিল্প ও সংস্কৃতি

দিনাজপুরে ২৩-২৪ মার্চ সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর বাহা উৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে

দিনাজপুরের পার্বতীপুর থানার বারকোনা মাঠে আগামী ২৩-২৪ মার্চ সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ‘বাহা’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথির পর থেকে এ উৎসব পালন করা হয়। শাল গাছে তখন ফুল ফোটে, ইচৗক আর মুরুপ্ ফুল ফোটে এবং মহুয়া গাছে ফুল ধরতে শুরু করে। বাহা উৎসব পালন না করা পর্যন্ত সাঁওতালরা ইচৗক আর মুরুপ্ ফুলের মধু খায়না, শাল ফুল মাথায় দেয়না। আর মহুয়া ফুলও খায়না। যারা খায় তাদের বাড়িতে নায়কে (পুরোহিত) বাহা উৎসব না হওয়া পর্যন্ত প্রবেশও করেনা, তাদের দেয়া কোনো খাবার গ্রহণও করেনা।

বাহা উৎসবের সাথে আদিবাসী ভূমি, জীবন ও পরিবেশের সম্পর্ক:

আদিবাসীদের সব উৎসবের সঙ্গেই ভূমি, পরিবেশ, প্রকৃতির ঋতুচক্র, ফসল উৎপাদনের খুবই নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ফলে সাঁওতালসহ আদিবাসীদের বিভিন্ন উৎসব থেকে প্রকৃতির কোন সম্পদ কখন ব্যবহার করতে হবে, সেটি ব্যবহারের এক ধরনের নির্দেশনা পাওয়া যায়। ভূমিকে কিভাবে ব্যবহার করলে তার উর্বরতা ঠিক থাকবে সেটিও জানা যায়। এসব কিছুর মধ্য দিয়ে সময়সূচিভিত্তিক সম্পদ ব্যবহারের এক দিক নির্দেশনা থাকে। ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশ নিজের ঘাটতিগুলো পূরণ করার সময় পায়।

বাহা পরবের সময় অর্থাৎ ফাল্গুন মাসে যখন প্রকৃতিতে নতুন নতুন ফুল ফল পাতা আসে, সেই সময়কে সাঁওতালরা মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালের সঙ্গে তুলনা করে। সাঁওতালি ভাষায় মেয়েদের এ বয়ঃসিন্ধকালীন সময়কে ‘বাহাঃ কানায়’ বলে। এর আক্ষরিক অনুবাদ করলে দাঁড়ায় ফুল ফুটছে। প্রকৃতপক্ষে এর মধ্য দিয়ে নতুন জীবনী শক্তি সঞ্চারের বিষয়টিই বোঝানো হয়। নারীরা বয়ঃসন্ধিকাল পার করে নতুন জীবনী শক্তি সৃষ্টির অধিকারী হয়, তেমনি ফাল্গুন মাসে পৃথিবীটাও নারীদের মতো বয়ঃসন্ধিকালীন সময় পার করে। নতুনভাবে প্রকৃতিতে জীবনী সঞ্চার করে। তাই তো সাঁওতালরা এ সময় বাহা পূজার আগে নতুন ফুল খোঁপায় দেয়না, নতুন ফল খায়না। এছাড়াও বাহা পরব শুরু হওয়ার পরেই সাঁওতালরা শিকারে যেতে পারে। কিন্তু আজকের এ আধুনিক পৃথিবীতে আমরা শুধু ভোগ-বিলাসিতার জীবনযাপনের জন্য পৃথিবীর সম্পদ কোনো হিসাব ছাড়াই আহরণ ও ব্যবহার করছি। আমাদের পৃথিবীকে তার সম্পদের ঘাটতি পূরণেরও সময় দিচ্ছিনা। এভাবেই হয়তো আমাদের এ সুন্দর পৃথিবী একদিন তার যৌবন হারাবে, বন্ধ হবে তার ঋতুচক্র, শেষ হয়ে যাবে পৃথিবীর সব সম্পদ। অর্থাৎ ধ্বংস হবে পৃথিবী, ধ্বংস হবে মানবসভ্যতা।

বাহা উৎসবের মধ্যে আদিবাসী ভূমি, জীবন, পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষার বিশাল দর্শন লুকায়িত থাকলেও তা আজ নানা কারণে অবহেলিত। তাই বাহা পরবের পুরোনো জৌলুসকে ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরী। এর মধ্য দিয়ে আদিবাসী ভূমি, প্রাণ ও প্রকৃতিকে নতুন করে বাঁচানো সম্ভব হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

অনুষ্ঠান সূচি:

২৩ মার্চ ২০১৭: প্রথম দিন (উম):
সকাল ৯টা: বাহা পূজা।
বিকাল ৩টা: আদিবাসীদের ভূমি অধিকার ও পরিবেশ বিষয়ক আলোচনা ও
জনপ্রিয় সাঁওতালি ও বাউল সঙ্গীত শিল্পী রথীন কিস্কুর পরিবেশনা ও স্থানীয় শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
২৪ মার্চ ২০১৭:দ্বিতীয় দিন (বাহা সৗরদি দিন):
সকাল ৯টা: বাহা পূজার দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম।
বিকাল ৩টা: পরিবেশ ও সংস্কৃতি রক্ষায় বাহার তাৎপর্য বিষয়ক আলোচনা ও
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুরস্কার বিতরনী।

বাহা উৎসব উদযাপন কমিটি এবং আদিবাসী সাংস্কৃতিক পরিষদের আয়োজনে এই বাহা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।

Back to top button