রাজশাহীতে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের ‘অবস্থান কর্মসূচি’
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহীঃ গত ৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের আদিবাসী ও বাঙালিদের উপর রংপুর চিনি কল ও পুলিশের হামলা মামলা, লুটপাট, খুন, উচ্ছেদ, অগ্নিসংযোগ, হয়রানির প্রতিবাদ ও লুটেরা- সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ রাজশাহী জেলা কমিটির উদ্দ্যোগে আজ ৬ মার্চ রাজশাহী কোর্ট শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে “অবস্থান কর্মসূচি” অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদ রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়ার এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ- সাধারণ সম্পাদক গণেশ মার্ডি, দপ্তর সম্পাদক সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম, রাজশাহী মহানগর সভাপতি সুমিলা টুড়ু, তানোর থানা সভাপতি কর্নেলিউস মার্ডি, আদিবাসী যুব পরিষদ রাজশাহী জেলা যুগ্ম-আহব্বায়ক হুরেন মুরমু, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিভূতি ভুষন মাহাতো, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হেমন্ত মাহাতো এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য তরুন মুন্ডা।
সংহতি বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি রাজশাহী মহানগর দেবাশিষ প্রামানিক দেবু, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী রাজশাহী জেলা সভাপতি মনির উদ্দিন পান্না, একাত্তরের ঘাতক দালাল নিমূল কমিটির রাজশাহী জেলা সভাপতি শাহজাহান আলী বরজাহান, মুক্তিযোদ্ধা চেতনা বাস্তাবায়ন মঞ্চ রাজশাহী মহানগর সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটি সদস্য খোরশেদ আলম, বাংলাদেশ রবিদাস উন্নয়ন পরিষদ রাজশাহী জেলা সভাপতি রঘুনাথ রবিদাস, পারগানা পরিষদ গোদাগাড়ি রবীন্দ্রনাথ হেমব্রম, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী রাজশাহী মহানগর সাধারন সম্পাদক তামিম শিরাজী, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ রাজশাহী মহানগর সাধারন সম্পাদক দীপেন চাকমা।
বক্তরা বলেন, আক্রান্তদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার ও হয়রানী বন্ধ করতে হবে। বিনষ্ট করা ক্ষেতের ফসল, পুকুরের মাছের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্থ সকল পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পূর্ণ নিশ্চয়তাসহ আবারো তাদের নিজ বাসভূমে স্থায়ীভাবে বসবাসের নিশ্চয়তা দিতে হবে। পুড়ে যাওয়া বাসস্থান, স্কুল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অবিলম্বে তৈরি করে দিতে হবে। র্ফাম এলাকার আদিবাসীদের বসত ঘেঁষা কাঁটাতারের বেড়া তুলে দিতে হবে। এই কাঁটাতারের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচল, গবাদি পশু চরানোসহ নিত্যদিনের সব কাজ বিঘিœত হচ্ছে। হামলায় পরিকল্পনাকারী, ইন্ধনদাতা ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনসহ তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
উল্লেখ্য, এদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে আক্রান্তদের পক্ষ থেকে থোমাস হেমরম ২৬/১১/২০১৬ তারিখে গোবিন্দগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সাঁওতালদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগকারী পুলিশ ও তাদের নির্দেশ দানকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে। হামলায় সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তাদের প্রহসন মূলক শাস্তি নয় বরং যথাযথ শাস্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। রংপুর চিনিকল অচল হয়ে যাওয়ার পর সাহেবগঞ্জ-বাগদার্ফামের জমিকে রিকুইজিসনের শর্ত ভঙ্গ করে ইজারা দেওয়া মিল কর্তৃপক্ষের অবৈধ কাজ ও দুর্নীতির তদন্ত করতে হবে। ১৯৬২ সালের চুক্তির ধারা মোতাবেক যেসব পরিবারের জমি রিকুইজসন করা হয়েছিল তাদের নিকট তাদের পূর্বতন ভূমি আইনী অধিকারসহ ফিরিয়ে দিতে হবে। সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সংকট নিরসনে পৃথক ও স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।
১৯৬২ থেকে ২০১৬, দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে চিনি উৎপাদনের অজুহাতে রাষ্ট্র সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্মের ভূমি উদ্বাস্তু হাজারো মানুষের সাথে বর্ণবাদী অন্যায় করে চলেছে এবং সর্বশেষ গত ৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের আদিবাসী ও বাঙালিদের উপর রংপুর চিনিকল ও পুলিশের হামলা, মামলা, লুটপাট, খুন, উচ্ছেদ ও হয়রানির ঘটনা স্বাধীন রাষ্ট্রের সংবিধান, মানবিকতা ও আইন সবকিছুকেই লংঘন করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত উক্ত ঘটনায় কার্যত দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করতে পারেনি। গত ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের এমপি মহোদয়ের সাথে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দদের মধ্যেকার বৈঠকে আদিবাসীদের আশ্বাস দিলেও কোন ধরনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ হয়নি। এমনকি মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়ার কথা বললেও তিনি সেখানে যাননি এবং এখন পর্যন্ত আদিবাসীদের সাথে তারা আর কোন যোগাযোগও করেননি।
অবস্থান কর্মসূচিতে সমাবেশ পরিচালনা করেন আদিবাসী ছাত্র পরিষদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সাধারন সম্পাদক নকুল পাহান।