৮২ বছরে জননেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্যঃ শুভানুধ্যয়ীদের অভিনন্দন

দেশের প্রবীন রাজনৈতিক, ষাটের দশকের স্বৈরশাষক বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্যের ৮২ বছরের পর্দাপন করলেন। গতকাল ৬ আগস্ট ছিল তার জন্মদিন। এই উপলক্ষ্যে ঢাকায় সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের কার্যালয়ে গতকাল সকাল ১১টায় এক ভার্চুয়াল সভা- সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। ৬০ এর দশকে আইয়ুবী সামরিক শাসন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে তীব্র ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার এই অগ্রসৈনিক মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সম্মুখের কাতারে অবস্থান নেয়া আপোষহীন ও নির্ভিক ব্যক্তিত্ব।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য ১৯৩৯ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার নয়াপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা প্রফুল্ল কুমার ভট্টাচার্য একজন আদর্শ শিক্ষক ও স্বদেশী আন্দোলনের নিবেদিত প্রাণ। মাতা মণি কুন্তলা দেবী স্বদেশী আন্দোলনের নেতা কর্মীদের আশ্রয়দাত্রী ও অনুপ্রেরণাদানকারী।
জন্মদিন উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে আজাদ, কাজী সালমা সুলতানা, জহিরুল ইসলাম জহির, অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য এ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম, অলক দাশগুপ্ত, ইয়াছরেমিনা বেগম সীমা, কেন্দ্রীয় নেতা ড. সেলু বাসিত, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সবুজ, ঢাকা মহানগর সদস্য সচিব জুবায়ের আলম, মাসুদ আলম, সাবেক ছাত্র নেতা মানবেন্দ্র দেব প্রমুখ।
সভায় ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা, সারওয়ার আলী, এম এম আকাশ, জয়ন্তী রায়, ড. সৈয়দ আব্দুল্লা আল মামুন চৌধুরী ও সাম্প্রদায়িকতা জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. নূর মোহাম্মদ তালুকদার।
সভায় ভার্চুয়াল আলোচনায় শুভেচ্ছা বিনিময় ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য।
সভার শুরুতে বৈশি্বক মহামারী করোনা ও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশ-বিদেশে ৫০ লক্ষের অধিক মানুষের মুত্যুতে গভীর দঃখ ও বেদনা জানিয়ে বলা হয়। আজকের এই শুভ জন্মদিনে দ্রæত সময়ের বৈশি^ক এই মহামারী বিপর্যয় কেটে বিশ্ব মানবতার জয়ধ্বনী বেজে উঠবে আবার বিশ্ব মানবতা জেগে উঠবে এই প্রত্যাশা করি।
সভায় ডা. সারওয়ার আলী বলেন, ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে মানব মুক্তির স্বপ্নে ৮২তম জন্মদিনেও সক্রিয় রয়েছেন ধারাবাহিকভাবে। এটি রাজনীতিতে একটি বিরল ঘটনা ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রীক সমাজ প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন পঙ্কজ ভট্টাচার্য দেখেছেন তা বাস্তবায়নে আজকে নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করা গেলে এই ত্যাগ স্বার্থক হবে।
ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, বৈশ্বিক মহাবিপর্যয়ে এখনো পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে সাধারণ মানুষের সংকট উত্তরণে সক্রিয় ভূমিকা রাখার যে তাগিদ দেখি তাতে পঙ্কজ ভট্টাচার্যের ছাত্র জীবনের দৃঢ় অবস্থানের কথা মনে করিয়ে দেয়। তার মতো নিবেদিত রাজনৈতিক আজকের দ্বিতীয়টি খুজে বেরকরা মুসকিল। তার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ কামনা করছি।
এম এম আকাশ বলেন, মানবমুক্তির লড়াইয়ে সর্বদা অগ্রগামী চিন্তার সংগঠকদের অন্যতম পঙ্কজ ভট্টাচার্য রাজনীতিতে অনেককে পথ খুঁজে নেবার নেপথ্য কারিগর ছিলেন সারা জীবন। সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে সামনের কাতারেই সারা জীবন তাকে দেখেছি। মহামারী করোনা বিপর্যয়ে মধ্যেও তার সক্রিয়তা আমাদের অনুপ্রাণিত করে। তার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু প্রত্যাশা করছি।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলে, আমার ক্ষুদ্র জীবনে বৈষম্য-বঞ্চনা, নীতিহীনতার সাথে আপোষ করিনি। এখনো মনে করি অসাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্র ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে দেশের সকল শ্রমিক, কৃষক, প্রগতিশীল ধারার ব্যক্তি ও সংগঠনের দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও লুটেরাদের রুখতে হলে ধর্ম-বর্ণ ও আদিবাসী সহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে অধিকার আদায়ের লড়াইকে জোরদার করতে হবে। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের এই উদ্যোগের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ।