আদিবাসী অধিকার আইন প্রণয়ন করার দাবি বিশিষ্টজনদের
বাংলাদেশের আদিবাসীদের সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান, সমতল অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করা এবং আদিবাসীদের জন্য আদিবাসী অধিকার আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
আজ ২৫ শে জুলাই ২০২১ ইং বাংলাদেশ কোচ আদিবাসী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনলাইন মতবিনিময় সভায় এসকল দাবি জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ কোচ আদিবাসী সংগঠনের সভাপতি রমেশ কুমার কোচ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। তিনি বলেন, সংবিধানে আমাদেরকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয় নি। সংবিধানের ২৩ক তে বলা হয়েছে “রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।” সংবিধান স্বীকৃত এই ধারার আলোকেও আদিবাসীদের জন্য অনেক আইন বা নীতিমালা প্রণীত হতে পারে। এবংকি আদিবাসীদের পক্ষ থেকে ইতোপূর্বে আদিবাসী অধিকার আইন প্রণয়ণের জন্য প্রস্থাবনা সহকারে সংসদে খসড়াও পাঠিয়েছেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য সরকার তেমন এগিয়ে আসে নি।
তিনি আরো বলেন- ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান সহ বহু দেশ জাতিসংঘ ঘোষিত আদিবাসী অধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। অথচ অজানা কারণে বাংলাদেশ এই বিষয়েও স্বীকৃতি প্রদানে বিরত থেকেছে।
আরডিসি-র সাধারণ সম্পাদক জান্নাত এ ফেরদৌসী লাকী বলেন, আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাস আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্নভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। আমরা দেখতে পেয়েছি পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন আইন ১৬ বছর পরে হলেও সংশোধিত হয়েছে। সুতরাং আমরা কিছুটা আশাবাদী যে, আগামী দিনে আদিবাসী অধিকার বিষয়ক আইন প্রণীত হবে।
প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, যেসব দাবিসমূহকে সামনে রেখে আজকের এই মতবিনিময় সভা করা হচ্ছে সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবীটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক ভাষা, এক জাতি, এক ধর্মের রাষ্ট্র বহুত্ববাদীতাকে অস্বীকার করে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি এবং আদিবাসী সবারই রক্ত মিশে আছে। কাজেই আদিবাসীদের অস্বীকার করা বা বহুত্ববাদীতাকে অস্বীকার করার প্রবণতা ঠিক নয়। সেকারণেই আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দরকার।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম এমপি বলেন, প্রত্যেক মানুষ আইনের দৃষ্টিতে সমান। কাজেই আইনগতভাবে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত হওয়া দরকার।
ঐক্য ন্যাপের আহবায়ক বর্ষীয়ান রাজনীতিক পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, দেশের সকল আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে সকল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তালিকা সংবিধানের পরিশিষ্টে নামসহ উল্লেখ করতে হবে। আদিবাসীদের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রণালয় করতে হবে। নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষায় দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।
আলোচনার শেষান্তে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, সংবিধানের ২৩ক অনুসারে পরোক্ষভাবে হলেও কিছুটা স্বীকৃতি মিলেছে। আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি সহ সংবিধান বিষয়ে বিভিন্ন বিতর্ক ও যেসব ঘাটতি রয়েছে সেগুলো নিয়ে আগামীতে কাজ করার সুযোগ আছে। নামের বিভ্রান্তি, সংখ্যার বিভ্রান্তি দূর করে আদিবাসীদের হালনাগাদ পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও তথ্য প্রকাশ করা উচিত। আদিবাসী অধিকার আইন প্রণয়ণে যারা বিরোধিতা করে তারা অজ্ঞতা, মূর্খতা বা খন্ডিত তথ্যের কারণেই বিরোধিতা করে। আদিবাসী অধিকার বিষয়ক কমিশন গঠনের মাধ্যমে আদিবাসীদের আইনগত সুরক্ষা তৈরী হতে পারে।