শিল্প ও সংস্কৃতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত

”চেতনায় অবিরাম শেকড়ের টান” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ ১৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ইং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০১৭ কে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল উপাসনালয় প্রাঙ্গনে ”জুম লিটারেচার এন্ড কালচারাল সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়” এক সাংস্কৃতিক বৈচিত্র উৎসবের আয়োজন করে। দিনব্যাপী এই আয়োজনের ১ম পর্বে উৎসব আয়োজন কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব অমরশান্তি চাকমার পরিচালনায় যুগ্ম আহবায়ক জয়বর্ধন চাকমার সভাপতিত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ভাষায় উপস্থিত বক্তৃতা ও বিতর্ক এবং বাংলা ভাষায় বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। সংক্ষিপ্ত স্বাগত বক্তব্য রাখেন উৎসব আয়োজন কমিটির যুগ্ম আহবায়ক রক্তিম চাকমা। মাতৃভাষায় বক্তৃতা ও বিতর্কের পাশাপাশি ”এক টুকরো পার্বত্য চট্টগ্রাম” শিরোনামে চলে ফটোগ্রাফী প্রদর্শনী। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পেশাদার-অপেশাদার ফটোগ্রাফ নিয়ে এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৈচিত্রময় সংস্কৃতি ও প্রাণ-প্রকৃতির অপূর্ব উপস্থাপণ। এছাড়াও ১ম পর্বে ”বর্ণমালা প্রদর্শনী”-র আয়োজনও ছিল দেখার মত, যেখানে প্রদর্শন করা হয় দেশের বিভিন্ন ভাষার বর্ণমালা।
সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য উৎসব -২০১৭ আয়োজন কমিটির আহবায়ক মংটিন মারমার সভাপতিত্বে ২য় পর্বে অনুষ্ঠিত আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক মহোদয়। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ হলের সম্মানিত প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড: অসীম সরকার, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং এবং জুম লিটারেচার ইয়ং সোসাইটির সাবেক সভাপতি হিরনমিত্র চাকমা।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জুম লিটারেচার ও কালচারাল সোসাইটির এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে ঢাকা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আদিবাসী পাহাড়ী ছাত্রদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক উদ্যোগগুলো প্রশংসামূলক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের কার্যক্রমগুলোর সাথে একাত্মতা পোষণ করে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও পাহাড়ী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ন্যায় দাবীর প্রতি সদয় থাকবে বলেও অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন।
অধ্যাপক ড. অসীম সরকার বলেন, পাহাড়ী ছাত্রদের মধ্যে পারস্পারিক ভ্রাতৃত্ববোধের চেতনাটা অত্যন্ত প্রবল। জগন্নাথ হল সবসময় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। তিনি পড়াশুনা এবং সহশিক্ষামূলক
কার্যক্রমে জগন্নাথ হলে বসবাসরত পাহাড়ী ছাত্রদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, পাহাড়ী শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে দক্ষতার কারণে জগন্নাথ হল একটি পূর্ণাঙ্গ হলে পরিণত হয়েছে। তিনি আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিটি কার্যক্রমের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং অনুষ্ঠানের সাথে পূর্ণ সংহতি জ্ঞাপন করে বক্তব্য শেষ করেন।
সঞ্জীব দ্রং বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমগ্র বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসীদের স্বকীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রয়েছে। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা এবং বহুত্ববাদের উপড় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। তিনি জুম লিটারেচার এন্ড কালচারাল সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ উদ্যোগ ভবিষ্যতে চলমান রাখার জন্য সবসময় পাশে থাকবেন বলেও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
হিরনমিত্র চাকমা স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, বিগত সময়ে জুম লিটারেচার এ্যান্ড কালচারাল সোসাইটির সাংগঠনিক রুপ না থাকার কারণে এ সাংস্কৃতিক সংগঠনটির কার্যক্রমে বিভিন্ন ধরণের বাধা থাকতো। তিনি এ সংগঠনটির পুনর্গঠনের বিষয়টি জানতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত এবং সংগঠনটির উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করেন।
আলোচনাসভার পরে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে ”জুম লিটারেচার এন্ড কালচারাল সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের” সাংস্কৃতিক কর্মীরা প্রয়াস রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রামের বৈচিত্রময় ভাষা, সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির এক মনোমুগ্ধকর পরিবশেনা। পরে রাত ৮ থেকে ১০ টা পর্যন্ত চলে তথ্যচিত্র ও চলচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন। পরে এডিট দেওয়ানকে সভাপতি ও জুলিয়ান বম কে সাধারণ সম্পাদক এবং নিশৈ মং মারমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে আগামী একবছরের জন্য ৩৬ সদস্যবিশিষ্ট “জুম লিটারেচার এন্ড কালচারাল, সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়” এর কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিয়মিতভাবে শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে ”জুম লিটারেচার এন্ড কালচারাল সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Back to top button