আদিবাসী নেতা অনিল মারান্ডীর অবদান আদিবাসীরা ভুলবেনা: স্মরণ সভায় আলোচকরা
আদিবাসী নেতা অনিল মারান্ডীর অবদান চিরকাল স্মরণে রাখবে আদিবাসীরা।তাঁর চিন্তা ও কর্মে তিনি বেঁচে থাকবেন বলে তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের উদ্যোগে অনলাইন আলোচনায় এসব কথা বলেন আলোচকরা।গতকাল (৭ জানুয়ারী, ২০২০) সন্ধ্যা ৬ টায় আইপিনিউজ এর ফেইসবুক পেইজে এই স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং এর সভাপতিত্বে সংগঠনটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হরেন্দ্র নাথ সিং এর সঞ্চালনায় উক্ত স্মরণ আয়োজনে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের টেকনোক্র্যট সদস্য জান্নাত-এ- ফেরদৌসী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য।
আদিবাসী নেতা অনিল মারান্ডীর স্মরণে আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের টেকনোক্র্যট সদস্য ও বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী জান্নাত-এ- ফেরদৌসী’র একটি গান দিয়ে উক্ত স্মরণ আয়োজনটি শুরু হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, অনিল মারান্ডী মাটির সংলগ্ন একজন মানুষ। তিনি খুবই সাধারণ জীবন যাপনকারী একজন নেতা ছিলেন। তিনি একসময় রিক্সা চালিয়েছেন। নিজ এলাকায় ভ্যানও চালিয়েছেন।একেবারেই শ্রমজীবি অবস্থান থেকে যখন রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংস্পর্শে এসেছেন তখন তিনি আদিবাসীদের ভূমি লুট হয়ে যাওয়ার রাজনীতিকে বুঝতে চেয়েছেন। এমন অবস্থান থেকে উঠে এসে তিনি আদিবাসী লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
ওয়াকার্স পার্টির সাধারন সম্পাদক ও সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, অনিল মারান্ডী এসময়কালের বীরসা মুন্ডা না হতে পারেন কিন্তু তাঁর ধারাবাহিকতা। তিনি ছিলেন আদিবাসীদের মাটির নেতা।
তিনি আরো বলেন, মাতৃভাষায় শিক্ষার জন্য অনিল মারান্ডীর অসাধারণ প্রচেষ্টা ছিল।তাঁর প্রচেষ্টায় সুন্দরপুরে গড়ে ওঠে মাতৃভাষা শিক্ষার একটি স্কুল। এই স্কুলের জন্য কিছু করার চেষ্টা করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, নেতা হিসেবে অনীল মারান্ডীর ছিল অকপট সত্য বলার সাহস।তার কথার মধ্যেও কোনো অতিবক্তৃতা, অতিভাষণ, কপটতা ছিলনা। আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার এবং অধিকারের বিষয়টিকে খুব সোজাভাবে তুলে ধরতেন বলেও মন্তব্য করেন এই প্রবীণ নেতা।
সভাপতির বক্তব্যে সঞ্জীব দ্রং বলেন, আদিবাসী মানুষের মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে অনিল মারান্ডীকে স্মরণে রাখতে হবে। আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, ভূমি অধিকার সহ মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে অনিল মারান্ডীর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে। উত্তরবঙ্গের বরেন্দ্র ভূমিতে সাওঁতালি সোহরায়, বাহা উৎসব যতদিন থাকবে এবং সাওঁতালি গ্রামে মাদল যতদিন বাজবে ততদিন অনিল মারান্ডি বেঁচে থাকবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই আদিবাসী নেতা।
উল্লেখ্য, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অনিল মারান্ডী ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি সোমবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পাঁচগাছিয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। জীবদ্দশায় তিনি জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।