জাতীয়

ভার্চুয়াল প্রতিবাদে কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৪ বছর: এখনো বিচার দাবী

সতেজ চাকমা: ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রতিবাদী আবহে কল্পনা চাকমাকে স্মরণ করেছে দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব ও তরুণরাও এ প্রতিবাদে অংশগ্রহন করেছে নানাভাবে।

পাহাড়ের নারীদের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল হিল উইমেন্স ফেডারেশনের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমাকে ১৯৯৬ সালে রাতের আঁধারে ১২ জুন অপহরণ করা হয়। অপহরণের অভিযোগ উঠে পাহাড়ের তৎকালীন নিরাপত্তাবাহিনীর কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে। রাতের আঁধারে রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার নিউলাল্যেঘোনা গ্রাম থেকে এই নারী নেত্রীকে অপহরণের ২৪ বছর পরও কোনো প্রকার হদিস পাওয়া যায়নি। যার ফলে পাহাড়ী জুম্ম তথা দেশের প্রগতিশীল মহলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশিত হয়েছে অপহরণের ২৪ বছর পূর্তিকে সামনে রেখে। অনেকেই এটিকে ‘রাষ্ট্রীয় বিচারহীনতার ২৪ বছর’ বলে ক্ষোভ জানাচ্ছেন এবং সেই সাথে এখনো কতিপয় অপহরণকারীদের বিচারের আওতায় এনে কল্পনার সন্ধান দাবী করছেন বিচার প্রার্থী নাগরিকরা।

এ উপলক্ষ্যে হিল উইমেন্স ফেডারেশন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কল্পনা অপহরণের বিচার চেয়ে প্রতিবাদী ফেসবুক ফ্রেম ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছে। এ নিয়ে সবাইকে এ প্রতিবাদী ক্যাম্পেইনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক শান্তিদেবী তঞ্চংগ্যা তাঁর ফেসবুক ওয়ালে ক্ষোভ জানিয়ে লিখেছেন, “কল্পনা তুমি আজো আছোই আমাদের সকলের কল্পনায়, আমাদের ধমনীতে কল্পনার রক্ত”।

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিভূ রঞ্জন সরকার তাঁর ফেসবুক ওয়ালে নিজের সংযোজনে অপর এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর প্রতিবাদী লেখা শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, “অপরাধ কখনো তামাদি হয়। ২৪ বছর লম্বা সময়। আর দেরী নয়। অপরাধীদেও প্রশ্রয় দেওয়ার ঘৃণ্য ধারা থেকে বেরিয়ে রহস্য-উন্মোচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে কলঙ্ক মুক্ত ও মানবিক করার উদ্যোগ নেওয়া হোক।”

বিশিষ্ট লেখক ও আইনজীবি ইমতিয়াজ মাহমুদ কল্পনা চাকমাকে নিয়ে তাঁর ফেসবুক ওয়ালে লিখেন, ‘কল্পনা চাকমা ছিল হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক। অতি সাধারন ঘরের এক পাহাড়ী মেয়ে। পাহাড়ের মানুষের জন্যে আর নারী মুক্তির জন্যে যে লড়েছিল রাজনৈতিক লড়াই। অতি সাধারন একজন পাহাড়ী মেয়ে কল্পনাকে অসাধারণ করেছিল পাহাড়ের প্রতি পাহাড়ের মানুষের প্রতি অসাধারণ ভালোবাসা আর পাহাড়ের প্রতি চলমান অন্যায়ের বিরুদ্ধে ওর বুকের ভেতর জ্বলতে থাকা স্ফুলিঙ্গ।”

এদিকে চাকমা সার্কেলের উপদেষ্টা ও চাকমা রানী ইয়েন ইয়েন গানের দল মাদলের গানের কলিকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন, ‘প্রায় দুই দশক আগে কল্পনা চাকমা একটি স্বপ্ন বুনে দিয়ে গিয়েছিলেন। লেঃ ফেরদৌসের নেতৃত্বে তার অপহরণ হওয়ার ২৪ বছরেও এর বিচার হয়নি, বিচারের নামের তদন্তের নামে হয়েছে প্রহসন। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন ? সেই স্বপ্ন মনে প্রাণে ধারণ করে লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত কী?” কল্পনা চাকমা’র স্বপ্ন-চেতনা আবারো জাগিয়ে তুলবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এদিকে কল্পনা চাকমা’র সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক সভানেত্রী বিশিষ্ট নারী নেত্রী চঞ্চনা চাকমা তাঁর ফেসবুক ওয়ালে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেন, “২৪ টি বছরেও এই দেশের বিচার ব্যবস্থা কল্পনা চাকমার কোনো হদিস দিতে পারলো না। কল্পনার বড় ভাই একটি মামলা করেছিল। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এখনো তার কূল কিনারা পায়নি।”

এদিকে ইউপিডিএফ সমর্থিত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের উদ্যোগে খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটির কাউখালিতে প্রতিবাদী আলোচনা সভাও আয়োজন করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ “-Voice Of PCP – কেওক্রডং” থেকেও কল্পনা অপহরণের ২৪ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রতিবাদী কবিতা পাঠ ও কল্পনাকে নিয়ে লেখা ছাপিয়েছে।

আইপিনিউজও তার নিজস্ব ফেসবুক পেইজ থেকে প্রতিবাদী গানের আয়োজন করেছে। এই প্রতিবাদী গানে অংশ নেন গানের দল মাদল, প্লুং ব্যান্ড, এফ মাইনর ও নবনীতা হৃদি।

এভাবে সব মহলে কল্পনা অপহরণের ২৪ বছর উপলক্ষ্যে জোরালো দাবী উঠেছে রাষ্ট্রীয় বিচার হীনতার কলঙ্ক মোচনে কল্পনাকে সন্ধান দিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা।

উল্লেখ্য কল্পনার অপহরণের বিচার চেয়ে কল্পনা চাকমার আপন ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা মামলা করলেও সে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের ক্ষেত্রে নানা গড়িমসি চলছে এই ২৪ বছর ধরে। বহুবার পেছানো হয়েছে মামলার শুনানি ও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে মুক্তি চায় কল্পনা অপহরণের বিচার প্রার্থী নাগরিকরা।

Back to top button