শিল্প ও সংস্কৃতি

ঢাকায় শুরু হলো চাকমা ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্স

ঢাকা; নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গত ৭ই অক্টোবর শুক্রবার রাজধানীর কাজীপাড়ায় সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কাচালং ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র উদ্যোগে রাজধানীতে শুরু হলো চাকমা বর্ণমালা প্রশিক্ষণ কোর্স। জুম্ম ভলান্টারি ব্লাড ডোনারস অ্যাসোসিয়েশন (জুবদা ) একাডেমির সেমিনার হলে মোমবাতি জ্বালিয়ে এই কোর্সের উদ্বোধন করা হয়।
প্রশিক্ষণ কোর্সের শুভ উদ্বোধন করেন কাচালং ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি বাবুমনি চাকমা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জুবদার সভাপতি সুখেন চাকমা, বিশেষ অতিথি ছিলেন কাচালং ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নির্বাহী উপদেষ্টা পরিষদের সমন্বয়কারী সৈকত চাকমা।
প্রশিক্ষণ কোর্স সমন্বয়কারী মিতান চাকমা জানান, চাকমা বর্ণমালার এই প্রশিক্ষণ কোর্স চলবে মোট তিন মাস। সপ্তাহে দুদিন করে মোট ২৪টি ক্লাস নেওয়া হবে। প্রথম ব্যাচে ১৫ জন প্রশিক্ষণার্থী রয়েছেন। দুজন অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক তাঁদের চাকমা বর্ণমালার ওপর প্রশিক্ষণ দেবেন।
ঢাকায় বসে নিজস্ব বর্ণমালা শেখার সুযোগ পেয়ে খুব ভালো লাগছে বলে জানান প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী হিতৈষী চাকমা মুন্নি। তিনি বলেন, কিছুদিন পর নিজস্ব বর্ণমালা লিখব ও পড়ব ভাবতেই মনটা আনন্দে-গর্বে ভরে উঠছে।
প্রশিক্ষণ কোর্সের প্রশিক্ষক খোকা মনি চাকমা মহৎ এই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য কাচালং ওয়েলফেয়ার সোসাইটিকে ধন্যবাদ দেন। কোর্সটি যেন চলমান থাকে, সে জন্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন আরেক প্রশিক্ষক কৌশিক চাকমা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুখেন চাকমা বলেন, কাচালং ওয়েলফেয়ার সোসাইটির এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠীর তার নিজস্ব মাতৃভাষায় কথা বলা ও বর্ণমালায় লেখাপড়া করতে পারা বিরাট গর্বের বিষয়।
সভাপতির বক্তব্যে বাবুমনি চাকমা বলেন, চাকমারা নিজস্ব ভাষায় কথা বললেও বেশির ভাগই নিজস্ব বর্ণমালা লিখতে ও পড়তে পারেন না। তাই এই কোর্সের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চাকমা বর্ণমালা শেখার প্রতি আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সংস্কৃতির সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ উপাদান হল ভাষা। বাংলাদেশে বাংলা ভাষা ছাড়াও আরও প্রায় বিশটি ভাষা এখনো বেঁচে আছে। কিন্তু এই ভাষাগুলোও বাংলা ভাষার আধিপত্য এবং আকাশ সংস্কৃতির কারণে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। বাংলাদেশে বাঙ্গালী ছাড়াও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীদের মধ্যে চাকমা অন্যতম। চাকমাদেরও আছে নিজস্ব ভাষা। কিন্তু চর্চার অভাবে সেই ভাষাও আজ প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বে ভাষার একচেটিয়াকরণের বিপরীতে চাকমা ভাষার চর্চার এই মহৎ উদ্যোগ আদিবাসী তথা সকল ভাষাভাষি মানুষের জন্যে একটি উজ্জ্বল মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে দাবি করেন ভাষা বিশেষজ্ঞরা।

Back to top button