শিল্প ও সংস্কৃতি

রাজধানীতে মনোঘরের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত

সতেজ চাকমা: মনোঘর পাহাড়ে একনামে খ্যাত এই প্রতিষ্ঠানটি পাহাড়ের প্রত্যন্ত দুর্গম জনপদে ছড়িয়েছে শিক্ষার দ্যুতি। এই প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা নিয়ে অনেক অনাথ দরিদ্র শিশু এখন বর্তমানে দেশে বিদেশে ছড়িয়েছে নিজস্ব আলোকছটা নিয়ে। ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটির যেমন রয়েছে খ্যাতি তেমনি রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। প্রতিষ্ঠার প্রথম থেকেই এই প্রতিষ্ঠানটি চলছে গণ-উত্তোলিত অর্থে। এছাড়া বিভিন্ন শুভাকাঙ্খী ব্যক্তি তথা দেশি-বিদেশি নানা প্রতিষ্ঠান এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন মানবিক আবেদনে সাড়া দিয়ে।বিশেষ করে মনোঘরের সুশীতল পরশে বিকশিত হওয়া যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন তাঁদের অকৃত্রিম আন্তরিকতায় মনোঘর হেল্প কর্মসূচীর আওতায় বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রায় শতের কাছাকাছি দরিদ্র এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে মাসিক হারে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। বর্তমানে এ সংখ্যাটা ৮৬। ২০১১ সালে মাত্র ১৫ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে শুরু হওয়া এ কর্মসূচীর জন্য দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান কর্মসূচীকে আরো গতিশীল করার জন্যই মূলত এ আয়োজন বলে জানান আয়োজকরা। শিল্পকলা একাডেমির নাট্যমঞ্চের মূল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হওয়া মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক আয়োজনের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন মনোঘরের সাবেক মেধাবী ছাত্র এবং মনোঘর পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক কীর্তি নিশান চাকমা। তাঁর বক্তব্যে তিনি বলেন, মনোঘর পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদেরকে শেখায় উচ্চকাঙ্খী স্বপ্ন দেখতে এবং বৈচিত্র্যকে সম্মান করতে। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের বর্ণাঢ্য ও ভিন্ন ভিন্ন ভাষা এবং সংস্কৃতিই এই বৈচিত্র্যের প্রতীক যা মনোঘরের প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী ধারণ করে। মনোঘরের সৃজনশীল মেধাবী শিক্ষার্থী তথা তিন পার্বত্য জেলার খ্যাতিমান শিল্পী ও ব্যান্ডদের নিয়েই এই আয়োজন বলে জানান তিনি। আগামী দিনে দক্ষ ও যোগ্য মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে মনোঘরের অবদান অপরিসীম বলেও জানান তিনি।

মনোঘরের নির্বাহী পরিচালক আইপিনিউজ এর এই প্রতিবেদককে এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, এটাই মনোঘরের উদ্যোগে রাজধানীতে প্রথম আয়োজন। এ আয়োজনের তিনটি প্রধান উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি। প্রথমত- ‘দেশের বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত পাহাড় তথা মূল ধারার জনগোষ্ঠীকে মনোঘরের নানা মানবিক আয়োজনে সহযোগীতা প্রদানে উৎসাহিত করা। দ্বিতীয়ত, শেকড়ের প্রতি এবং আগামী প্রজন্মের প্রতি যে দায় সে দায়বোধের চেতনাকে আরো সমৃদ্ধ করা এবং তৃতীয়ত, পাহাড়ের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিকে রাজধানীতে তুলে ধরা।’

রাঙ্গামাটির খ্যাতনামা নৃত্যশিল্পী ফিফা চাকমা এবং টিটু দেওয়ানের পরিচালনায় মনোমুগ্ধকর নৃত্য যেমন সেখানে অনন্য সাধারণ পরিবেশনা ছিল তেমনি গান করে মাতিয়েছেন বান্দরবানের ‘চিম্বুক’ ব্যান্ড। এছাড়া খ্যাতনামা শিল্পী রূপায়ন দেওয়ান, সুজন দেওয়ান, কালায়ন চাকমা,কনক ত্রিপুরা, দৃপ্ত দেওয়ান বাপ্পি,জলিপ্রু মারমা, পার্কি চাকমা, অনন্যা চাকমা এবং কয়েল চাকমার একক গানে মাতোয়ারা ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজনটি। এছাড়া পাহাড়কে নিয়ে তাঁর লেখা গান করেন ইউএনডিপিতে কর্মরত স্কটল্যান্ডের নাগরিক রবার্ট স্টলমেন্ট। গানের পাশাপাশি কয়েল চাকমা তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, “এখানে আমরা কিছু পাওয়ার জন্য কিংবা ‘এনজয়’ করার জন্য আসিনি। এসেছি মনোঘরের সেই ছোট্ট কচি মেধাবী শিশুদের জন্য।” মনোঘরের সমৃদ্ধিও কামনা করেন এই বিখ্যাত কন্ঠশিল্পী।

ঢাকায় বসবাসরত পাহাড়ের বিভিন্ন গণমাণ্য ব্যক্তি তথা পেশাজীবিদের পাঁচশতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে আয়োজিত উক্ত আয়োজনের সাথে একনিষ্ঠভাবে অন্যান্য যারা জড়িত ছিলেন তাঁরা হলেন, র্কীতি নিশান চাকমা, অশোক কুমার চাকমা, ডা: পরশ খীসা, প্রতুল চন্দ্র দেওয়ান, বিপ্লব চাকমা, নন্দ কিশোর চাকমা, বরেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, যতন মারমা, পূর্ণলাক্ষ চাকমা, নিগিরাধন চাকমা, বাবুমনি চাকমা, পলিটন খীসা প্রমুখ সহ মনোঘরের সাথে সম্পৃক্ত আরো অনেক ব্যক্তি।

Back to top button