বেজিংয়ে ওয়ার্কার্স পার্টি ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত
“রোহিঙ্গা সমস্যার জন্য বাংলাদেশ কখনই দায়ী নয়। মায়ানমার বরং এই সমস্যা বাংলাদেশের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মায়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা, তাদের আবাসনে অগ্নি সংযোগ, নারীদের ধর্ষণ ও শিশু হত্যা তাদের নিজ বাসভূমি ছেড়ে আসতে বাধ্য করেছে। বাংলাদেশ মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু এখন দু’বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও তাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির পরও মায়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিচ্ছে না। বাংলাদেশ কখনও রোহিঙ্গা সমস্যাকে আন্তর্জাতিকরণ করেনি, বরং দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছে। এটা বরং আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর দায়িত্ব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজভূমে নিরাপদ পরিবেশে ফিরিয়ে নেয়া। মিয়ানমার ও বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে চীন এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে বাংলাদেশের জনগণ এ ব্যাপারে কিছুটা হতাশ। তবে এখনও আশা করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চীন মায়ানমারকে আরও উৎসাহিত করবে।”
আজ ৭ সেপ্টেম্বর বেজিং-এ চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের দপ্তরে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়ে চীনের ভাইস মিনিস্টার ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান কমরেড গুয়ো ইয়াজুও এর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন এ কথা বলেন। এই দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিনিধি দলের রাশেদ খান মেননের সাথে ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমরেড আলী আহমেদ এনামুল হক এমরান। অপরদিকে চীনা ভাইস মিনিস্টারের সাথে ছিলেন মা জুয়োসং হু জিয়াদং এবং তান ওয়েই।
রাশেদ খান মেনন রোহিঙ্গা সমস্যার জরুরি সমধানের প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করে বলেন, ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের এলাকায় পাহাড় ও বনভূূমি ধ্বংস হওয়ায় পরিবেশ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক সমস্যা। এবং রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে মার্কিন কংগ্রেস সদস্য রোহিঙ্গাদের জন্য আরাকান সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ অঞ্চলকে নিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা ভূমির কথা বলেছে। উগ্রপন্থী আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীরা রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করতে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে, রোহিঙ্গা শিবিরে অর্থ ও অস্ত্রের জোগান দেওয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবসনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য সরকার দুটি আন্তর্জাতিক ইসলামিক এনজিওর কার্যক্রম বন্ধ করেছে। কিন্তু আইএসআইয়ের মদদপুষ্ট আল-খিদমা সেখানে এখনও তৎপর। মেনন চীনা কমিউনিস্ট নেতাদের বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার আঞ্চলিক সমস্যায় রূপ নেয়ার আগে তার সমাধান করা প্রয়োজন। চীনা ভাইস মিনিস্টার, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবসনে চীনের অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং বলেন, সমস্যাটি জটিল এবং আরও জটিল না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থেকে এগুতে হবে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করার ব্যাপারে ওয়ার্কার্স পার্টি ৪ দফা প্রস্তাবের জবাবে ভাইস মিনিস্টার বলেন যে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ওয়ার্কার্স পার্টিকে অবহিত করবে। তিনি বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভের ব্যাপারে ওয়ার্কার্স পার্টিসহ অন্যান্য বাম দলসমূহের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এবং বলেন, দু’পার্টির মধ্যে আন্তযোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে। বৈঠকের শুরুতে কমরেড রাশেদ খান মেনন চীনের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে চীনের প্রেসিডেন্ট ও সিপিসি-র সাধারণ সম্পাদক কমরেড ঝি জিনপিংকে ওয়ার্কার্স পার্টির অভিনন্দন বার্তা হস্তান্তর করেন।