জাতীয়

চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে যুক্ত থাকায় শত শত জেএসএস নেতা-কর্মী এলাকাছাড়া

বিশেষ প্রতিবেদন: পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে রাজনৈতিকভাবে সমাধানের জন্য ১৯৯৭ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু ২২ বছরেও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা হয় নি। এমতাবস্থায়, জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন চলছে। কিন্তু সারা দেশে যেমনি নানা অপবাদ দিয়ে বিরোধী আন্দোলন দমন করে বিরোধী দল শূন্য করা হয়েছে ঠিক তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামেও চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলনকর্মীদের সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, অবৈধ অস্ত্রধারী এরকম নানা অপবাদ দিয়ে তাদেরকে কোণঠাসা এবং চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় তিন পার্বত্য জেলায় বিশেষ করে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলায় ক্ষমতাসীন স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং প্রশাসন উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য ও সমর্থকসহ নিরীহ গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করার ষড়যন্ত্র জোরদার করা হয়েছে। অন্যদিকে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার নামে যৌথবাহিনী জেএসএস কর্মীদের ঘরবাড়ি তল্লাসি, নির্যাতন, হয়রানি, গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জেলে প্রেরণ ইত্যাদি নানা ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা চলমান রেখেছে। কোনো একটা ঘটনা ঘটলেই তদন্ত ব্যতিরিকেই জেএসএসকে দোষারোপ এবং মামলা দিয়ে হয়রানি ও এলাকাছাড়া করার হীন প্রয়াস করে চলেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

জেএসএস সূত্র জানাচ্ছে , ২০১৯ সালে এ পর্যন্ত ৪টি মিথ্যা মামলা হয়েছে ১০০ জন নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে এবং তাদের মধ্যে ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০১৮ সালে ৫টি মিথ্যা মামলায় ১১৭ জনকে জড়ানো হয়েছে এবং ৭৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০১৭ সালে ১৬১ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করা হয়েছে এবং কমপক্ষে ১৪১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নভেম্বর ২০১৭ থেকে মার্চ ২০১৮ পর্যন্ত সময়ে রাঙ্গামাটি জেলাধীন জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও রাঙ্গামাটি সদর উপজেলায় ১০ টি মিথ্যা মামলায় ১৮৭ জনকে ফাঁসানো হয়েছে। ২০১৬ সালে বান্দরবনে ৭জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ ১৫০ জন জেএসএস কর্মী ও আদিবাসী অধিকারকর্মীদের সাজানো ও মিথ্যা মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং তাদের মধ্যে ৪০জনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া ১৫০জন অধিকারকর্মীকে এলাকা ত্যাগে বাধ্য করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে ১৩৭টি মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটেছে। ২৫ জন শিশু ও ২৩ জন নারীসহ মোট ৩০৯ জন নিরপরাধ আদিবাসী ও ১৬৩ টি আদিবাসী পরিবার মানবাধিকার লংঘনের শিকার হয়েছে এবং ৯০ টির মত ঘরবাড়িতে তল্লাসি ও ঘেরাও করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

অতি সম্প্রতি, গত ২৫ মে ২০১৯ তারিখে আন্ঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কে এস মং মারমা ও জেএসএস বান্দরবান জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ক্যাবা মং মারমাকে আলোচনার জন্য ডাকা হয়। কিন্তু প্রায় ২ ঘন্টা পর তাদেরকে বান্দরবন জেলা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। অন্যদিকে, প্রায় একই সময়ে কলাক্কিয়ং মৌজার হেডম্যান থোয়াই হ্লা প্রু মারমা ও জডার্ন পাড়ার কার্বারী মং হ্লা ত্রিপুরাকে গ্রেফতার করে থানায় প্রেরণ করা হয়। তাদের সকলকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে ইদানিং বেআইনীভাবে গ্রেফতার, মিথ্যা ও সাজানো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলে প্রেরণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। একইভাবে জুম্মদের ঘরবাড়ি তল্লাসি ও যৌথবাহিনীর নানা অভিযান পরিচালনা জুম্মদের জনজীবনকে দুর্বিষহ, আতঙ্কগ্রস্ত ও হুকমীতে ফেলে দিয়েছে। তারা নিজেদের বাড়িতে থাকতেও ভয় পাচ্ছে। এমতাবস্থায়, প্রায় ৫০০ জন জেএসএস নেতা-কর্মী গ্রেফতার ও হয়রানি এড়াতে এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে।

উল্লেখ্য গত ১৬ জুন ২০১৯ তারিখে ঢাকায় ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে পুনর্গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি’র তৃতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে কমিটির আহ্বায়ক জনাব আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ সামগ্রিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত আলোচনায় জেএসএস’র বিরুদ্ধে সকল মিথ্যা মামলা তুলে নেওয়ার উপর জোর দেন। তিনি উক্ত বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবকে নির্দেশনাও দেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। তিনি আরও বলেন- পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাথে সরকার চুক্তি করেছে। তাদের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব সরকারের। তাদের বিরুদ্ধে যেসকল মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে তা তুলে নিতে হবে।

Back to top button