একজন উদ্ভাবনী শক্তি অচিন্ত হাজং-এর মৃত্যু
সোহেল হাজং: মানুষ স্বপ্ন দেখে বহুকিছু করার। অনেকের কাছেই স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যায়। তবুও মানুষ স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে। পৃথিবীর খুব কম লোকই আছে, যারা স্বপ্ন পূরণে ওঠেপড়ে লাগে। নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার চকপাড়া গ্রামের অচিন্ত হাজং (৩৫) পেশায় একজন মোটর বাইক মেকানিক ছিলেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল, মোটর বাইকের পুরাতন ইঞ্জিন ও যন্ত্রপাতি দিয়ে একটি থ্রি-হুইলার যান বানাবে। বুদ্ধি খাটিয়ে তৈরি করে ফেলেছেনও সেটি। কিন্তু তাঁর নিজ হাতে উদ্ভাবিত এই যানটি ট্রায়াল দিতে গিয়ে রাস্তায় চাপা পড়ে দূর্ঘটনায় প্রাণ হারায় এই আদিবাসী উদ্ভাবকের।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ১২ মে ২০১৯ রবিবার বিকেলে কলমাকান্দার গোবিন্দপুর বাজারের সড়কে। উপজেলার চকপাড়া গ্রামের কংসরাজ হাজং-এর ছেলে অচিন্ত হাজং। মা-বাবা, স্ত্রী ও দুইমেয়ে শিশুকে নিয়ে তাঁর সংসার। ছোটবেলা থেকেই যন্ত্রপাতি দিয়ে এটা-সেটা বানানোর তাঁর শখ ছিল। এরপর কারিতাস প্রতিষ্ঠান থেকে মোটর বাইকের মেকানিক-এর ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে শীঘ্রই দক্ষ মেকানিক হয়ে ওঠেন। স্থানীয় গোবিন্দপুর বাজারে একটি ছোট মেকানিক এর দোকান দিয়ে এলাকায় এ কাজে জনপ্রিয়ও হয়ে ওঠেন। তাঁর এ কর্মের আয় থেকেই পরিবারের দৈনন্দিন খরচ চলে যায়। কিন্তু তাঁর স্বপ্নের গড়া থ্রি হুইলারটি পরীক্ষা মুলকভাবে চালাতে গিয়ে একসময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা লাগলে বুকে চাপা লেগে প্রাণ হারায়। সেসাথে তাঁরমতো উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ থেমে গেল চিরতরে। তাঁর এ অকাল মৃত্যুতে দুই শিশু-সন্তানসহ তাঁর পরিবারের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। অচিন্ত হাজং-এর এ অকস্মাৎ মৃত্যুর ঘটনা মেনে নিতে পারেনি কেউই । এ সম্পর্কে বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠনের সভাপতি আশীষ কুমার হাজং বলেছেন, “আমরা একজন উদ্যোক্তাকে হারিয়েছি যা অপূরণীয়। বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে এসেও মরে গেলো আরেক স্বপ্ন। আমরা তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।”