ধানের দাম নিয়ে কৃষক সমিতির বিক্ষোভ সমাবেশ
বাংলাদেশ কৃষক সমিতি ধানের লাভজনক দাম নিশ্চিত করতে সরকারের আন্তরিক পদক্ষেপ দাবি করেছে। আজ ১৭ মে ২০১৯ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কৃষক সমিতির সভাপতি অ্যাড. এস এম এ সবুর। বক্তব্য রাখেন, কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নুরুর রহমান সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হোসেন খান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলতাফ হোসেন, সুনামগঞ্জের কৃষকনেতা অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, কেবল ধান নয় এখন যাই উতপাদন করে কৃষক তার দাম পায় না। ধানের সময় ধান, আলু, সবজি, গম, ভুট্টা, টমেটো প্রতিটি ফসল ঘরে ওঠার মৌসুমে এই দাম নিয়ে কৃষকের ক্ষোভ বিক্ষোভের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু দেখা যায় তাতক্ষণিক কিছু সরকারি আশ্বাস ছাড়া কার্যকর স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না। বক্তারা বলেন, কৃষিমন্ত্রী বলছেন ধানের দাম নিশ্চিত করতে বাধা হচ্ছে স্থানীয় রাজনৈতিক চক্র। আমরা জানি সেই চক্রের সদস্য কারা। সরকার এই চক্রকে চিনে কিন্তু তাদের উচ্ছেদ না করে নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করে।
বক্তারা আরও বলেন, সরকার দাবি করে তারা প্রাইভেট খাতকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের সর্ববৃহত প্রাইভেট খাত কৃষি নিয়ে প্রতিবছর যে চিত্র সারা বাংলায় দেখা যায় তার সাথে সরকারের ওই দাবির কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। সরকার প্রাইভেট সেক্টর বলতে কেবল তৈরি পোশাক মালিক ও আমাদানিকারকদের সুবিধা দেওয়াকে সামনে তুলে আনে।
বক্তারা বলেন, সরকার ধানের দাম ঠিক করে দিয়েছে, তাহলে কৃষকের দাম পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা থাকার কথা না। সরকার নির্ধারিত প্রতিমণ ধান ১,০৪০ টাকা কৃষকরা মেনে নিয়েছে। তাহলে তারা ৫০০-৬০০ টাকার মধ্যে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে কেন? এই সমস্যাটি খুঁজে বের করে সমাধান করলেই ধানের দাম নিয়ে কৃষকের এই ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয় না। আসল সমস্যা হলো সরকারের লোকজন প্রতিটি সেক্টর থেকে নিজেদের পকেটে টাকা ভরতে চায়। যেটা কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য থেকেও বেরিয়ে এসেছে। যে ছাত্রনেতা সারাবছর পানি উন্নয়ন বোর্ডে ঠিকাদারি করে এই মৌসুম এলেই সে ধানের ব্যবসায়ী হয়ে যায়। যে যুবনেতা খাদ্য বিভাগে ঠিকাদারি করে এই মৌসুমে সে ধানের ব্যবসায়ী হয়ে কৃষকের পাওনা পেতে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। বক্তারা কৃষক ও ক্রয়কেন্দ্রের মধ্যের এই অশুভ শক্তির উপস্থিতি অপসারণের দাবি জানান।
রংপুরের কৃষকনেতা আলতাফ হোসেন বলেন, কৃষির একমাত্র সমস্যা ধানের দাম নয়। কৃষি উপকরণের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, ভেজাল উপকরণ গ্রামের কৃষিব্যবস্থাকে সংকটাপন্ন করে তুলেছে। আমরা প্রতিবছর এভাবে লোকসান দিতে থাকলে আমরা ধান চাষ ছেড়ে দিতে বাধ্য হব।
হাওরের কৃষকনেতা চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, আমাদের পেটে ক্ষুধা। ঋণ করে যে ধান ফলিয়েছি সেই ধান কেটে এনে বাজারে বিক্রি করলে শ্রমিকের মজুরিও উঠে আসে না। এই ঝকমকে শহরে বসে সরকার অনুধাবন করতে পারছে না গ্রামের কৃষক কতটা সংকটে আছে। তাদের ভেতরে প্রতিনিয়ত যে ক্ষোভ দানা বাঁধছে তা বিস্ফোরিত হলে অনেক কিছুই তছনছ হয়ে যাবে।
সমাবেশ থেকে বক্তারা বলেন, আগে বলা হতো কৃষক পানির দামে ফসল বিক্রি করছে। এখন ১ কেজি ধানের দাম সাড়ে ১২ টাকা আর ১ লিটার পানির দাম ১৫ টাকা। কাজেই দেখা যাচ্ছে ফসলের দাম এখন পানির থেকেও কম। বক্তারা আগামী বাজেটে কৃষিখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, ধান ক্রয়ে লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণ বৃদ্ধি, প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে সরাসরি ধান কিনতে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দ্রæততার সাথে অপসারণ, প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্য গুদাম নির্মাণ, কৃষিঋণ আদায়ের জন্য কৃষকের নামে সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারি পরোয়ানা বন্ধের দাবি জানান।
সমাবেশের আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল পুরানা পল্টন-বাইতুল মোকারম-তোপখানা রোড প্রদক্ষিণ করে।