১৯০০ সালের পার্বত্য শাসনবিধি বানচাল করতে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে: সন্তু লারমা
সরকারের বিশেষ একটি মহল ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি বানচাল করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। এটি জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব বিলুপ্তির জন্য এক গভীর ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা।
গতকাল শুক্রবার রাঙ্গামাটির রাজদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক এর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সিএচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক এর এক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার যথাযথ কার্যকর ভূমিকা রাখেনি। পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের পরে বারবার ক্ষমতায় আসলেও আওয়ামীলীগ সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে কোন দৃশ্যমান উদ্যাগ গ্রহণ করেনি। উপরন্তু চুক্তি যেন বাস্তবায়িত না হতে পারে সেজন্য আজ নানাভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সংশোধনের নামে পার্বত্য শাসনবিধির কোনো অংশ পার্বত্য চুক্তির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হলে তা মেনে নেওয়া হবে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এবং ১৯০০ সালের শাসনবিধি নিয়ে যেকোন ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হেডম্যান, কারবারিসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সভাপতি কংজরি চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন চাকমা সার্কেল চীফ রাজা দেবাশীষ রায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, জেলা হেডম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য সুবীর কুমার চাকমা, নারী হেডম্যান নেটওয়ার্কের সভাপতি জয়া ত্রিপুরা প্রমুখ।
পার্বত্য অঞ্চলের প্রথাগত ভূমি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত হেডম্যানদের এই সন্মেলন উদ্বোধন করেন মং সার্কেল চিফ সাচিংপ্রু চৌধুরী। সম্মেলনের প্রধান বক্তা চাকমা সার্কেল চিফ রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, ১৯০০ সালের শাসনবিধি ১২৪ ধরে জীবিত। এই শাসনবিধি পার্বত্য অঞ্চলে প্রচলিত সকল প্রথাগত আইন, রীতি-নীতি থেকে এই বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং পার্বত্য চুক্তিতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে স্থান পেয়েছে। ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মূলে এ শাসনবিধি অর্ন্তনিহিতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। কাজেই, ১৯০০ সালের পার্বত্য শাসনবিধিতে কোনরুপ আঘাত আসলে আমরা তা মানবো না। প্রয়োজনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমি আইন মন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছি। আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ও ইদানিংকালে সাক্ষাৎ করেছেন বলে আমি শুনেছি। যাতে আইন মন্ত্রী মহোদয় পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলকে যথাযথ নির্দেশ ও পরামর্শ দেন। তবে এটা হচ্ছে কেবল সরকারের ভূমিকা। আপাতত: সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেলের সাথে পরামর্শ করে এই লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন কিনা আমি জানি না। কিন্তু আমি বলবো যে এটা সরকার বিরোধী। সরকার চুক্তি করেছে, আঞ্চলিক পরিষদের সাথে আলোচনা না করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিরোধী কোন অবস্থান নিতে পারে না। তাহলে অ্যাটর্নি জেনারেল সরকার বিরোধী অবস্থান নিচ্ছেন, চুক্তি বিরোধী অবস্থান নিচ্ছেন। আমি নিন্দা জানাই।
সম্মেলনের শেষে কংজরী চৌধুরীকে সভাপতি ও শান্তি বিজয় চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক করে আগামী তিন বছরের জন্য সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের ৩১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়।