চট্টগ্রামে ঐক্য ন্যাপের সমাবেশ অনুষ্ঠিত
চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ “ঐক্য ন্যাপ চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে ২৫/০৯/২০১৬ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিকাল ৪.০০ ঘটিকায়- “জঙ্গীবাদ সাম্প্রদায়িকতা সন্ত্রাস নির্মূল শিক্ষা ও নির্বাচন ব্যবস্থার অর্থবহ সংস্কার,আদিবাসী মোজাহের সহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে” সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঐক্য ন্যাপ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি,সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবুল মোমেন,বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি রণজিৎ সাহা,পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা,কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহ আলম প্রমুখ। এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঐক্য ন্যাপ চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অজিত দাশ,বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি শরৎজ্যোতি চাকমা,সুকান্ত দত্ত,দীলিপ নাথ,বিশিষ্ট আইনজীবি এড. আনোয়ারুল কবির এবং যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর রায়ের অন্যতম সাক্ষী হাসিনা খাতুন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পংকজ ভট্টাচার্য বলেন,ব্যাংকের মত রাষ্ট্র যখন ঋণখেলাপী হয়,তখন দেশের সাধারণ মানুষ অত্যাধিক হারে অত্যচারিত হয়।আক্রান্ত হয় শিক্ষা,সংস্কৃতি,সর্বত্র আক্রান্ত হয় নারী অধিকার,এরুপ বাস্তবতায় আক্রান্ত হয় মুক্তবুদ্ধি,ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং আদিবাসীরা।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল আমেরিকার বিপক্ষে,সৌদি আরবের বিপক্ষে,চীনের বিপক্ষে(দূর্ভাগ্য বশত)।কিন্তু আজ মনে হয়,রাষ্ট্রের মধ্যে,সরকারের মধ্যে একটা মৌলবাদ রয়েছে,যার কারণে সৌদি আরবের সাথে সামরিক জোট করেছে বাংলাদেশ।আমরা জানি প্রত্যেক জাতিরই বিচ্ছিন্ন হবার অধিকার রয়েছে,প্রত্যেক জাতিরই আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের অধিকার রয়েছে।১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে,কিন্তু আজকে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী দিয়ে সেই জনসংহতি সমিতির অফিস ভাংচুর করা হচ্ছে,তল্লাশি চালানো হচ্ছে,গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।তাই তিনি অচিরেই জাতীয় চারনীতির মূলে ফেরত যাওয়া এবং আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী শক্তিপদ ত্রিপুরা বলেন,বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে একটি শোষণহীন,অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য।কিন্তু আজকের বাস্তবতায় ৭১ সালের আওয়ামীলীগের শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের যে আকাঙ্খা, চেতনা সেটা ১৬ সালের আওয়ামীলীগের মধ্যে দেখতে পায় না।২২ হাজার পরিবার আজ ১৬ কোটি মানুষকে শোষণ করছে।বাংলাদেশের সংবিধানেও রয়েছে কিছু অসম্পূর্ণতা, এখানে “বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাঙালী বলিয়া আখ্যায়িত হইবেন” মর্মে উল্লেখ করে এদেশের আদিবাসীদেরকে সাংবিধানিকভাবে অস্বীকার করা হয়েছে।আমরা এও দেখতে পায়, বাংলাদেশের বাঙালীদেরকে শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে কিন্তু আদিবাসীদেরকে সেই স্বীকৃতি দেয়া হয় নি। বাঙালী শিশুরা তাদের নিজ মাতৃভাষায় পড়াশুনার সুযোগ পাচ্ছে কিন্তু আদিবাসী শিশুরা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত।পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমতলের আদিবাসীদের ভূমি নানাভাবে বেদখল করা হচ্ছে।তাই একটি শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানান। কবি,সাংবাদিক ও কলামিষ্ট আবুল মোমেন বলেন,তৎকালীন বাংলাদেশের সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেয়া হয় নি,তার জন্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা প্রতিবাদ করেছিলেন।তৎপরবর্তী বঙ্গবন্ধু আবার রাঙামাটিতে গিয়ে ঘোষণা করলেন যে “তোমরা সবাই বাঙালী হয়ে যাও”। বাঙালী কৃষকদের একটা সংস্কৃতি হচ্ছে ঝোপঝাড় কেটে সাফ করা,আর আর্মিদের একটা সংস্কৃতি হচ্ছে,যা নড়াচড়া করে তার উপর গুলি চালানো এবং যা কিছু স্থির তাকে সাদা রং করে দেয়া।পার্বত্য চট্টগ্রামে এই দুই শক্তি মিলিত হয়েছে,যার ফলে বনের সাথে যারা মিশে গিয়েছে,প্রকৃতির সাথে রয়েছে যাদের গভীর সম্পর্ক,তাদেরকে ঐ অপশক্তি অতিষ্ট করেছে। তিনি আরো বলেন,আমাদের সমাজ এখনো পিছিয়ে রয়েছে,আমাদের সমাজ থেকে মুক্তবিদ্যার পরিষদটা হারিয়ে গেছে।শিক্ষাঙ্গনেই আজ মুক্তবিদ্যার পথরোধ করা হচ্ছে।এদেশের জনসংখ্যার ৬০ ভাগ হচ্ছে তরুণ,৫ কোটি শিশু,যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। কিভাবে আমরা তরুণদেরকে দেশের কাজে,সমাজের কাজে লাগাবো,সেটা আমাদের ভাবতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।”