আঞ্চলিক সংবাদ

৭ দফা দাবিতে বান্দরবানে জুম্ম ছাত্র-যুব সমাজের বিক্ষোভঃ পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি

আইপিনিউজ, বান্দরবার প্রতিনিধি: পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যে গ্রাফীটি অংকনে বাধা দেওয়া ও মুছে দেওয়ার প্রতিবাদে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ দেশের আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান ও পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিতে বান্দরবান পার্বত্য জেলা সদরে জুম্ম ছাত্র-যুব সমাজের উদ্যোগে আজ (২১ আগস্ট) এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সমাবেশ থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে সে ৭ দফা দাবি জানানো হয়, সেগুলি হল- (ক) পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। (খ) আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। (গ) গ্রাফীটি আঁকার স্বাধীনতা দিতে হবে। (ঘ) বম জনগোষ্ঠী ও পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজবন্দী নারী, শিশু সহ সকলকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। (ঙ) পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি অধিকার আইন নিশ্চিত করতে হবে। (চ) ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন নিয়ে ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। (ছ) পর্যটনের নামে ভূমি বেদখল বন্ধ করতে হবে।
‘বৈষম্য বিরোধী আদিবাসী ছাত্র সমাজ, বান্দরবান পার্বত্য জেলা’ এর ব্যানারে এই বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও গণসঙ্গীতের আয়োজন করা হয়।
বিকাল ৩ টায়, প্রথমে পুরান রাজার মাঠ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ পড়ুয়া জুম্ম ছাত্র-ছাত্রী ও যুবক-যুবতীদের একটি বিরাট বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বান্দরবান প্রেস ক্লাবে এসে সমাপ্ত হয়। এরপর সেখানেই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সেখান থেকে গণসঙ্গীত গেয়ে গেয়ে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা বড় রাজার মাঠে এসে তাদের কর্মসূচি শেষ করেন।
সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি জন ত্রিপুরা, বম জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি জেমস বম, মারমা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি ও গ্রীন ভয়েস পার্বত্য চট্টগ্রাম এর প্রধান সমন্বয়ক সাচিংনু মারমা, ছাত্রদের পক্ষ থেকে মংচশৈ মারমা, অং অং মারমা প্রমুখ।
সমাবেশে অংশগ্রহনকারীদের একাংশ। 
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার যদি এই পার্বত্য চট্টগ্রামকে সমগ্র বাংলাদেশের সাথে সংহত করতে চায় তাহলে এই আদিবাসী স্বীকৃতি দিতে হবে। দেশের জীবনধারায় আমাদেরকে যদি যুক্ত করতে চায়, তাহলে আমাদের অধিকার আমাদের দিতে হবে। আমরা বেশি কিছু চাই না, আমরা শুধু নিজেদের মত করে বাঁচতে চাই।
বক্তারা আরো বলেন, কুকি-চিন নামে এক ক্ষুদ্র গোষ্ঠী সন্ত্রাসী হতে পারে, কিন্তু গোটা বম জাতি সন্ত্রাসী নয়। কিন্তু গোটা বম জাতিকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে নিরীহ বম নারী-পুরুষদের নির্যাতন করা হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে। তা হতে দেওয়া যাবে না। নিরীহ বম নারী-পুরুষ যাদেরকে আজ জেলে বন্দী রাখা হয়েছে, তাদেরকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
বক্তারা বলেন, বান্দরবানে আজ যে অরাজকতা করা হচ্ছে তার পেছনে কারা জড়িত সেটা সঠিক তদন্ত করে তাদেরকে যেন শাস্তির আওতায় আনা হয়।
মিছিলে ও সমাবেশে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-যুবকরা ‘তুমি কে, আমি কে, আদিবাসী, আদিবাসী’, ‘দিতে হবে, দিতে হবে, আদিবাসী স্বীকৃতি, আদিবাসী স্বীকৃতি’, ‘অবিলম্বে ভূমি অধিকার, দিয়ে দাও, দিতে হবে’, ‘অবিলম্বে পার্বত্য চুক্তি, বাস্তবায়ন কর, করতে হবে’ ইত্যাদি মুহুুর্মুহু শ্লোগানে প্রকম্পিত করে আশেপাশের এলাকা। এছাড়া প্ল্যাকার্ডে প্রদর্শন করা হয় ‘আমরাই কল্পনা চাকমা’, ‘ইতিহাস পর্যালোচনা কর আদিবাসী কারা’, ‘ক্ষুদ্র নই, উপজাতি নই, আদিবাসী আমরা’, ‘আমার ভূমি, আমার প্রাণ’, ‘আমার গ্রাফীটি মোছা হলো কেন’ ইত্যাদি বিভিন্ন বক্তব্য ও দাবি।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র জানায়, বান্দরবান শহর এলাকাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকেও হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী ও যুব সমাজ স্বতস্ফূর্তভাবে এই মিছিল ও সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। অনেকের মতে, এটি বান্দরবানের ইতিহাসে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ মিছিল ও সমাবেশ। মিছিলটি শুধু সমগ্র বান্দরবানে নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য জেলার ছাত্র ও যুব সমাজকেও যথেষ্ট অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করেছে। মিছিল ও সমাবেশে নারীদের অংশগ্রহণও ছিলো অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। প্রায় সমপরিমাণ নারী এই অনুষ্ঠানে স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।

Back to top button