২১ শে বইমেলায় প্রকাশিত হচ্ছে তরুণ আদিবাসী লেখকদের বেশ কটি নতুন বই
বছর ঘুরে আবারো রাজধানীর বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে শুরু হয়েছে অমর একুশের বইমেলা। দেশের লেখক-পাঠকরা সারা বছর এই সময়টির জন্য অধীর আগ্রহে মুখিয়ে থাকেন। প্রতিবছর লেখক-প্রকাশকরা এসময় নতুন নতুন বই নিয়ে হাজির হন। নবীন লেখকেরাও এই সময়ে হাজির হন পাঠকদের মাঝে। এবছর চলতি ২১শে বইমেলা ২০২৪ কে সামনে রেখে বেশ কয়েকজন নবীন আদিবাসী লেখক তাদের লেখা গ্রন্থ নিয়ে পাঠকদের মাঝে হাজির হয়েছেন।
বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি জনপদে বেড়ে ওঠা নু থোয়াই মারমা পড়ছেন ঢাকা বিশবিদ্যালয়ে। এবছরের বইমেলায় তাঁর লেখা “পাহাড় তং পেড়িয়ে” বইটি প্রকাশিত হচ্ছে উৎস প্রকাশন থেকে। নতুন বই প্রকাশের অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি আইপিনিউজকে বলেন, “মারমা ভাষায় তং-এর শব্দগত অর্থ হলো পর্বত। আর পাহাড়কে কোং নামেই অভিহিত করি। ‘পাহাড় তং পেরিয়ে’ বইটি সংস্কৃতিনির্ভর একটি ভ্রমণকাহিনী। আমরা নিজ বাড়ির উঠোন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে যতোটা অভ্যস্ত, বাড়ির বাইরে সমাজ ও তার চারপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে ততোটা আগ্রহী নই। কেননা আমরা দিনদিন ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থে বন্দী হয়ে পড়ছি। আমরা ভাবছি নিজে ভালো থাকতে পারলেই বেঁচে যাই। সামাজের যা ইচ্ছে হোক। কিন্তু সামগ্রিকভাবে ভালো না থাকতে পারলে সেটাকে ভালো থাকা বলে না। পাহাড়ে আদিবাসীদের ওপর চলমান নিপীড়নের ইতিহাস বেশ পুরোনো। আদিবাসীদের ভিটে-মাটি বেদখল, বন ধ্বংস, ঝিরির পাথর উত্তোলন, পুঁজিবাদী বাজার ব্যবস্থার সুনিপুণ কৌশল, রমরমা পর্যটন শিল্প ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের নামে স্থানীয় নৃ-গোষ্ঠীদের উচ্ছেদ, পরিবেশ দূষণ ও সাংস্কৃতিক সংকট তৈরি করাও কোনো নিত্যনতুন ঘটনা নয়। এসব পাহাড়ি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জাতীয় অস্তিত্বের প্রশ্ন। যেসব প্রশ্নের সমাধান খুবই জরুরি। প্রকৃতিবাদী দর্শন যা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনচর্চার অন্যতম উপকরণ, সেই দর্শনের আলো যেন সাধারণ পাঠকবৃন্দের মাঝে প্রজ্জলিত হয়, সে প্রচেষ্টা চালিয়েছি উক্ত ভ্রমণকাহিনিতে। আমার বিশ্বাস, নতুন প্রজন্ম আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংকট নিয়ে নতুন করে ভাববে। সমাধানের পথ বের করবে।” বইটি পাওয়া যাবে স্টল নং ৩৬০, ৩৬১, ৩৬২ এ।
নবীন লেখক সুজালো যশ বেশ প্রতিশ্রুতি নিয়ে সাহিত্যচর্চায় পথচলা শুরু করেছেন। বইমেলায় প্রকাশিত হচ্ছে তার দুটি নতুন বই। বাউণ্ডুলে থেকে প্রকাশিত হচ্ছে কাব্যগ্রন্থ “পাহাড়ি ব্যঞ্জনে বিবিব তলোয়ার”। কাব্যগ্রন্থটি সম্পর্কে কবি নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, “শব্দের প্রকৃতিস্থতা খুঁজতে ছন্দের নামে প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে সব অনুভূতি কবিতা মূলত কোন উদ্দেশ্য নয়, ষড়যন্ত্র।” প্রকাশনা সংস্থা বাউন্ডুলে নবীন এই লেখক সম্পর্কে নিজেদের ফেসবুক পেজ এ লিখেছে, “সুজালো যশ একজন আদিবাসী লেখক। অধ্যয়নক্ষেত্র নাট্যশাস্ত্র এবং অ্যান্টি-কলোনি বিষয়ে আগ্রহী পাঠক। অ্যান্টি-কলোনিয়াজম তার লেখার একটি বড়ো অংশজুড়ে বিরাজ করে। ‘পাহাড়ি ব্যঞ্জনে বিবিধ তলোয়ারে’ গ্রন্থে পাহাড়ের ঘটে যাওয়া নানা সংকট নিয়ে লেখকের নিজস্ব চিন্তা ও ক্ষতের বহিঃপ্রকাশ।” একুশে বইমেলার স্টল নং ৩১০ এ পাওযা যাবে এ বইটি।
এছাড়াও প্রকাশনা সংস্থা নব ভাবনা থেকে এই নবীন লেখকের নাট্যগ্রন্থ “এ কনভিক্টেড অ্যাপল” প্রকাশিত হচ্ছে। নাট্যগ্রন্থটির লেখক সুজালো যশ তার ফেসবুকে লিখেছেন, “নাটকের সকল চরিত্রের রয়েছে ঐতিহাসিক ভূমিকা। ফলে এই নাটক কেবলই নাটক নয়, ঐতিহাসিক পরিচিত চরিত্র গুলোর নতুন বিন্যাস, তাদের মনস্তাত্ত্বিক নানা সংকট…” একুশে বইমেলায় স্টল নং ১১২ এ পাওয়া যাবে এ বইটি।
নবীন গারো লেখক জাদিল মৃ প্রকাশ করছেন তাঁর নতুন উপন্যাস “আমি এক শূন্য জবা ফুল”। বইটি প্রকাশ করছে বোধ প্রকাশনী। পাওয়া যাবে একুশে বইমেলার ৪৮২ নাম্বার স্টলে। বইটি সম্পর্কে লেখক নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, “এই যে আমাদের জীবন, বেঁচে থাকার জন্য আমাদের প্রকৃতি থেকে অনেক কিছুই নিতে হয়। সুতরাং মানুষ ও প্রকৃতি আলাদা কিছু নয় বরং মানুষও প্রকৃতির। আমরা প্রকৃতি কে ছেড়ে যেতে পারি না,অস্বীকার করতে পারি না। কোন না কোন ভাবে প্রকৃতির সাথে আমাদের বেঁচে থাকতে হয়। কিন্তুু বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় রাজনৈতিক আগ্রাসনে অর্থনৈতিক শোষণে প্রকৃতির সাথে আমাদের আত্নিক সম্পর্ক ছিন্ন হচ্ছে। ফলত প্রাণ প্রকৃতি বারবার একধাপ করে ধ্বংশের দ্বারপ্রান্তে ধাবিত হচ্ছে। সুতরাং প্রাণ প্রকৃতির সুরক্ষায় আত্নিক সম্পর্ক উন্নয়নে এক বাক্যে শপথ নিতে হবে। আমরা প্রাণ প্রকৃতির কাছে আবার ফিরে যাবো।”