অন্যান্য

হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসাসেবা না পেয়ে মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণের দাবিতে বিশিষ্টজনদের বিবৃতি

হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসাসেবা না পেয়ে মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণের দাবিতে গতকাল ১২ জুন দেশের বিশিষ্টজনরা নিজেদের সাক্ষর সংবলিত একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিটি নিচে হুবুহু দেওয়া হলো।

সম্প্রতি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সারাদেশে অনেক মানুষ সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যাচ্ছে রোগী, যা খুবই উদ্বেগজনক। সংবাদ মাধ্যম থেকে এমনও জানা গেছে, সাভারের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে গভীর রাতে রোগীকে হাসপাতাল ত্যাগ করতে বলেন। কিন্তু উক্ত রোগী হাসপাতাল ছাড়তে না চাইলে তাকে ঐ রাতেই মারধর করে সেই হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরে তার মৃত্যু হয়েছে। আবার রাজধানীতে একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একজন করোনা রোগীর ২টি এক্সরে, ২টি রক্ত পরীক্ষা এবং নাপা ও গ্যাস্ট্রিকের টেবলেট দিয়ে তার কাছ থেকে ১১ দিনে ১ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৫ টাকা বিল নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় এই রোগী যতক্ষণ পর্যন্ত টাকা পরিশোধ করতে পারেনি ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে হাসপাতালে আটকে রাখার ঘটনাও ঘটেছে। যদিও এই ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর প্রায় সোয়া লাখ টাকা ঐ রোগীকে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও চট্রগ্রামের বেসরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে আইসিইউ শয্যা খালি থাকা সত্বেও আইসিইউ চাহিদাসম্পন্ন রোগীর জন্য আইসিইউ শয্যার বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরতে ঘুরতে অ্যাম্বুলেন্সেই রোগীর মৃত্যু ঘটেছে বলে সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। সিলেটেও হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে অবশেষে অ্যামন্বুলেন্সেই রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। প্রায় প্রতিদিনই এমন ঘটনার সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে, যা একটি স্বাধীনÑসার্বভৌম দেশের নাগরিকের জন্য খুবই অবমানজনক ও অমানবিক। আমরা লক্ষ্য করেছি, সেবা বি ত মৃত রোগীদের অনেকেরই মৃত্যুর পর পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়নি। এ ধরনের ঘটনায় প্রমাণ হয় যে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে স্বাভাবিক ও দৈন্দিন সেবাকার্য যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে ন্ াযাচ্ছে।

সম্প্রতি আরও যে বিষয়টি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, হাসপাতালগুলোতে বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক করোনা পরীক্ষার সনদ ছাড়া রোগীকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে না। অর্থাৎ স্বাস্থ্যসেবার জন্য করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে! দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উপসর্গযুক্ত রোগীরাই যেখানে করোনা পরীক্ষা করতে হিমসিম খাচ্ছেন, সেখানে উপসর্গহীন রোগীরা কিভাবে করোনা পরীক্ষা করে সনদ নিয়ে তারপর ননÑকোভিড রোগী হিসেবে সেবা গ্রহণ করবেনÑ সেটি প্রশ্ন সাপেক্ষ। স্বাস্থ্যসবো খাতে এ ধরনের অব্যবস্থাপনা ও সেবা ব ণা রীতিমতো অমানবিক এবং উদ্বেগজনক।

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনা রোগী সনাক্তের পর থেকে স্বাস্থ্যসেবা খাতের এ ধরনের অব্যবস্থাপনা সেবা ব ণার ঘটনা এবং চিকিৎসাহীনতায় রোগীর মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হলেও কোনো ঘটনায়ই স্বাস্থ্যখাতের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর কোনো প্রকার দায়িত্বশীল ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এমন কোনো নজির নেই। সাম্প্রতিক স্বাস্থ্যখাতের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বহীনতার আরও একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত হলো, কোনো প্রকার মানদÐ বা নিয়মনীতির অনুসরণ না করে বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতাল করোনা আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করলেও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে ঐ আইসোলেশন সেন্টারে গত ২৭ মে অগ্নিকান্ডের ঘটনার ৫ জনের প্রাণহানীর পর সেখানকার অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অবহেলা সম্পর্কে সকলে জানতে পারে। স্বাস্থ্যখাতের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে চলমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি এবং এই খাতের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা, দায়িত্বহীনতা, উদাসীনতা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে আমরা নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ চরম ক্ষুব্ধ এবং ব্যথিত চিত্তে অত্র বিক্ষুব্ধ যৌথ বিবৃতি প্রদান করছি। একইসাথে স্বাস্থ্যসেবা ব ণার ঘটনায় দায়ী সকল সেবাদানকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের মালিক ও পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষসহ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য সরকার ও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।

বিবৃতি স্বাক্ষরকারী:
পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সভাপতি, ঐক্য ন্যাপ
অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, প্রাক্তণ শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, আইনজীবি, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
জিয়া উদ্দিন তারেক আলী, সভাপতি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন
এস.এম.এ সবুর, সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি
নাজমুল হক প্রধান, সাবেক সংসদ সদস্য,রাজনীতিবিদ
ড. আজিজুর রহমান, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
খুশী কবির, মানবাধিকার কর্মী
রোকেয়া কবির, উন্নয়ন কর্মী
অ্যাডভোকেট জাহিদুল বারী, সাধারণ সম্পাদক, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি
এম. এম. আকাশ, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সালেহ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন
অ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম, আইনজীবি, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব)
অ্যাডভোকেট জীবনানন্দ জয়ন্ত, সংগঠক, গণজাগরণ ম
মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ, সভাপতি, জাতীয় শ্রমিক জোট
এ কে আজাদ, সংস্কৃতি কর্মী
এফ এম শাহীন, সাধারণ সম্পাদক
সালমা ইসলাম শান্তনা, সভাপতি, মাদারল্যান্ড গার্মেন্টস ওয়াকার্স ফেডারেশন
রাখী ম্রং, সমাজকর্মী
শাহজান আলী সাজু, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল)

Back to top button