আঞ্চলিক সংবাদ

ভূমি কমিশনের সভা স্থগিত করাটা নতজানু নীতি : ষড়যন্ত্র দেখছেন রুহিন হোসেন প্রিন্স

আইপিনিউজ, বিশেষ সংবাদ পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসিত হওয়া সেটলার বাঙালিদের সংগঠন ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম  নাগরিক পরিষদ’ এর ডাকা হরতালের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের আহুত সভা স্থগিত করা হয়েছে। পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক পাহাড়ের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি’র জন্য গঠিত এই কমিশনের বৈঠক আগামীকাল বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) হওয়ার কথা ছিল রাঙ্গামাটিতে। সেটলার বাঙালিদের উক্ত সংগঠনটির ডাকা হরতালের কারণে আজ উক্ত  সভার স্থগিতাদেশ  নোটিশ দিয়েছে  পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন। কমিশনের সচিব (যুগ্ম জেলা জজ) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, “কমিশনের অন্যতম সদস্য আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান মহোদয়ের সূত্রোক্ত স্মারক মূলে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান মহোদয় কর্তৃক  স্বাক্ষরিত পত্রে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় ০৬ ও ০৭ সেপ্টেম্বর/২০২২ খ্রি. ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ’ কর্তৃক হরতাল আহ্বান করার প্রেক্ষিতে অত্র ভূমি কমিশনের ০৭/০৯/২০২২ খ্রিস্টাব্দ তারিখের পূর্ব নির্ধারিত সভা স্থগিত করার অনুরোধ করায়  ও  কমিশনের অন্যান্য সদস্যদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে অত্র কমিশনের আগামী ০৭/০৯/২০২২ খ্রিস্টাব্দ তারিখ রোজ বুধবার এর সভা স্থগিত করা হল।”

উক্ত সভার তারিখ পরবর্তীতে জানানো হবে বলেও জানানো হয় উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে। এদিকে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে  পাহাড়ের অধিকার কর্মী ও সাধারণ মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে তারা।

এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স আইপিনিউজকে বলেন, “পাহাড়ের সমস্যা সমাধানে অনেক কাজের মধ্যে একটা কাজ হচ্ছে ভূমি সমস্যার সমাধান করা। সেই লক্ষ্যে ভূমি কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো ভূমিকা নেয়নি। তারা সভাও করতে পারে না। এইবার তারা সভা আহ্বান করেছে। সেই সভাটি খুব জরুরী ছিল এবং সেই সভার মধ্য দিয়ে কিছু অগ্রগতির প্রত্যাশা আমাদের দিক থেকে ছিল।”

তিনি আরো বলেন, “আমি দূর থেকে পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম বিরোধী অংশ (পার্বত্য নাগরিক পরিষদ) এমনভাবে তারা হরতাল আহ্বান করল যাতে করে এই কমিশনের সভাটি না হয়। অর্থাৎ পাহাড়ীদের সমস্যা যাতে সমাধান না হয়। ভূমির উপরে তাদের অধিকার  প্রতিষ্ঠার জন্য যে কার্যক্রম করা দরকোর সেটা যেন বিঘ্নিত হয়।”

হরতালের কারণে সভা স্থগিত করাটাকে ভূমি কমিশনের  নতজানু নীতি’  আখ্যা দিয়ে রুহিন হোসেন প্রিন্স আরো বলেন,  “এর পেছনে কোনো রহস্য আছে কী না সেটা খুঁজে বের করা দরকার। যারা হরতাল ডেকেছে তারা কোনো বিশেষ মহলের ইঙ্গিতে এই হরতাল ডাকার মধ্য দিয়ে সভা বন্ধ করার পায়তাঁরা করেছে কী না সেটাও খুঁজে বের করার দাবী জানাই। একই সাথে ভূমি কমিশনের সভা চলমান রাখারও জোর দাবী জানাই।”

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পাহাড়ের নাগরিক সমাজের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মংসানু চৌধুরী আইপিনিউজকে বলেন, “এই কমিশন তো সরকারের কমিশন। পাহাড়ের ভূমি বিবরোধ নিষ্পত্তির জন্য এই কমিশন গঠন করা হয়েছে। কাজেই এই কমিশন যাতে কাজ করতে পারে তার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সরকারকে তৈরী করে দিতে হবে। যদিও হরতাল ডাকা একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। তারা এর বিরুদ্ধে সভা করবে, সমাবেশ করবে, সরকারের কাছে দাবী জানাবে কিন্তু তারা এভাবে এই কমিশনকে বাঁধা দিতে পারে না।  আমি মনে করি এর পেছনে সম্পূর্ণভাবে সরকারই দায়ী।”

তিনি আরো বলেন, “তারা হরতাল দিয়েছে বলে কমিশন বৈঠকে বসবে না এটা কোনো কথা হতে পারে না। তাহলে আগামীতে কমিশন বৈঠক ডাকলেই হরতাল দেবে তারা। তাহলে কী কমিশন আর সভা করতে পারবে না।” কমিশন যাতে সভা করতে পারে তার জন্য ‍উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারের কাছে জোর দাবীও জানান এই শিক্ষাবিদ।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা আইপিনিউজকে বলেন,  পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। এই কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে না দেওয়া মানে এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র আছে। কিন্তু পাহাড়ের মানুষ অধিকার চায়। চুক্তির মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের ভূমি অধিকার ফিরে পেতে চায়।

ছাত্র নেতা নিপন ত্রিপুরা আরো বলেন, এভাবে যদি বার বার হরতাল ডেকে ভূমি কশিনের কার্যক্রমকে ব্যহত করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে আমাদেরকে অন্যভাবে ভাবতে হতে পারে। চুক্তি স্বাক্ষরের পেছনে সরকারের যেমন ভূমিকা আছে তেমনি চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনেও সরকারের দায় আছে। এভাবে যদি বার বার হরতাল ডেকে চুক্তি বাস্তবায়নের কার্যক্রম ব্যহত করা হয় তাহলে পাহাড়ের ছাত্র যুব সমাজ তা কোনো ভাবেই মেনে নেবে না এবং তারা নিজেদের অধিকারের জন্য  সচেষ্ট হবে। এক্ষেত্রে যেকোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সরকারকে তার দায় নিতে হবে।

 

Back to top button