স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সাথে “সমতল আদিবাসী অধিকার আন্দোলন” এর প্রতিনিধিবৃন্দের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

আজ ২৬ জানুয়ারি ২০২৫ সকালে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সাথে “সমতল আদিবাসী অধিকার আন্দোলন” এর প্রতিনিধিবৃন্দের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সমতলের আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ে বিভিন্ন সুপারিশ ও মতামত দেওয়া হয়।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটে (এনআইএলজি) এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য এড. আব্দুর রহমান, ইলিরা দেওয়ান ও মাশহুদা খাতুন শেফালী। সমতল আদিবাসীদের পক্ষে ‘সমতল আদিবাসী অধিকার আন্দোলন’ এর আহ্বায়ক উজ্জ্বল আজিম, সদস্য সচিব রিপন বানাই, সদস্য হেলানা তালাং, টনি চিরান, অলিক মৃ, আন্তনী রেমা, বিভূতি ভূষণ মাহাতো, অলি কুজুর, টুম্পা হাজং এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রাজকুমার শাও উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের কাছে সমতলের আদিবাসীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মতামত ও লিখিত সুপারিশ তুলে ধরা হয়। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে (জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন) আদিবাসীদের জন্য আলাদা আসন সংরক্ষণ, আদিবাসী বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি (ভূমি ব্যাবস্থাপনা, জলাশয়, বন ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা) ও নির্বাচনকালীন সময়ে আদিবাসীদের নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
এছাড়া, সমতলের আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ভূমি ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের (যেমনঃ গারোদের নকমা প্রথা, হাজংদের গাওবুড়া, সাঁওতালদের মানঝি/পরগানা, পঞ্চায়েত প্রথা ইত্যাদি) স্বীকৃতি, ক্ষমতায়ন, ভাতা প্রদান ও পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়। প্রথাগত ব্যবস্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে বিদ্যমান স্থানীয় সরকার আইনের সংস্কার করে সমন্বয়ের ব্যবস্থা করারও জোরালো সুপারিশ জানান সমতল আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।

উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের ১১ টি জাতিগোষ্ঠীর প্রথাগত সামাজিক প্রতিষ্ঠানের (যেমন রাজা, হেডম্যান, কারবারি) স্বীকৃতি রয়েছে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের মতে, এদেশে ৫০ টির অধিক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর প্রায় ৪০ লক্ষাধিক জনসংখ্যা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৯ টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস সমতলের বিভিন্ন অঞ্চলে, যা মোট আদিবাসী জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ। তারা তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, নিজস্ব সমাজ কাঠামো, সংস্কৃতি, রীতিনীতি, ভাষা, ধর্ম ও প্রশাসনিক কাঠামো বজায় রেখে এদেশে বসবাস করে আসছে।
সমতল আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক উজ্জ্বল আজিম জানান, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেড়িয়ে গেলেও সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীসমূহের অধিকার এবং জীবনমান উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্র তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরী করেনি। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ন্যায় সমতলের দুই- তৃতীয়াংশ আদিবাসী জনগোষ্ঠীসমূহের অধিকার এবং জীবনমান উন্নয়নের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন অতীব জরুরি। ঐতিহাসিক কাল থেকে সমতলের আদিবাসীরা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। আমরা বিশ্বাস করি এই রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্য দিয়ে সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসান হবে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।