সিলেটে আবারো দুর্বৃত্ত কর্তৃক খাসিয়াপুঞ্জির পানজুমের দুই হাজার গাছ কর্তন

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের প্রতাপপুর ক্যাম্প সংলগ্ন লামাপুঞ্জির পানজুমে প্রায় ২,০০০ পান গাছে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত ২৮ জুলাই সোমবার গভীর রাতে খাসিয়া আদিবাসীদের দুইটি পানজুমে অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত কর্তৃক কেটে ফেলা হয়েছে প্রায় ২ হাজার পান গাছ, যার বাজারমূল্য কয়েক লক্ষ টাকা বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের।
লামাপুঞ্জির প্রধান রিসন কংওয়াং আইপিনিউজকে জানান, তার নিজের এবং প্রতাপপুর পুঞ্জির পরমা ডিখারের পান জুমে গভীর রাতে হামলা চালিয়ে প্রায় দুই হাজার পান গাছ কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ে নিজেদের প্রথাগত উপায়ে পান ও সুপারি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছে খাসিয়ারা। এটি তাদের আয়ের একমাত্র উৎস।তার নেতৃত্বে দুইটি পানজুমে কয়েকজন পরিবার মিলে এসব গাছ পরিচর্যা করতেন। কিন্তু দুর্বৃত্তরা অতর্কিতে পানজুমে হানা দিয়ে রাতের আঁধারে পুরো বাগান কেটে ফেলায় তারা এখন শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।

তিনি আরো জানান, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই পানজুম পরিদর্শন করা হয়েছে এবং তারা আইনী সহায়তা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই সংবাদ প্রকাশের সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসারও পানজুম পরিদর্শন করার জন্য রওয়ানা দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং আইপিনিউজকে বলেন, এ ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই। আমার জানামতে সাধারণত জাফলং এলাকায় এ ধরনের ঘটনা আগে ঘটেনি। অন্যান্য এলাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও এ এলাকায় আগে ঘটতো না। এটি আরো বেশি উদ্বেগের বিষয়। এতে, ঐ অঞ্চলের খাসিয়া আদিবাসীদের উচ্ছেদ করার কোন ষড়যন্ত্র আছে কিনা সেটি খটিয়ে দেখা উচিত এবং গুরুত্ব সহকারে নিয়ে প্রশাসনের উচিৎ দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় আনা । একইসাথে যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা যেন করা হয় এ দাবি উত্থাপন করেন মি. দ্রং।

এদিকে, এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং আদিবাসীদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহ-সভাপতি টনি চিরান। তিনি আরও বলেন, সমতলের আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি না দেওয়া এবং বিগত সময়গুলোতে এই ধরনের দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ ও বিচার না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধান এবং প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতির জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের বিকল্প নেই বলে মনে করেন মি. চিরান।
জানা গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত পানজুমের বয়স প্রায় পচিঁশ বছর। পানগাছের পানগুলো এই মাসেই উত্তোলনের উপযোগী ছিল এবং প্রতিটি গাছে গড়ে পাচঁ-ছয়শত টাকার পান ছিল, যার মোট বাজারমূল্য বছরে প্রায় ১৬-১৭ লক্ষ টাকা। বছরে পাঁচ থেকে ছয়বার পান সংগ্রহ করা গেলেও একটি পানগাছের পান উৎপাদনের উপযোগী হতে প্রায় দুই-তিন বছর সময় লাগে। প্রতিটি জুমে ১৫-২০ জন কর্মী নিয়মিতভাবে কাজ করে এবং উৎপাদিত পানের আয় থেকে শ্রমিক ও চাষ ব্যবস্থাপনার পেছনে প্রায় ৭৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়।