জাতীয়

সাংবাদিক রাজীব নূরসহ তাঁর সহকর্মীদের উপর হামলা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি: সমাবেশে আদিবাসী ছাত্র ও যুব নেতৃবৃন্দ

সুমেধ চাকমা, আইপিনিউজ: সাংবাদিক রাজীব নূরসহ তাঁর সহকর্মীদের উপর হামলা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করেছেন আদিবাসী ছাত্র ও যুব নেতৃবৃন্দ।  হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলার শিকার হওয়া সাংবাদিক রাজীব নূর এবং তার সহকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে আদিবাসী যুব ও ছাত্র সংগঠনগুলোর আয়োজনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এই কথা বলেন। আজ রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে দোষীদের শাস্তির  দাবি করে আদিবাসী ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলো।

মূলত গতকাল ভূ-পর্যটক ও ভ্রমণ কাহিনী লেখক রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি দখলের ঘটনায় তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন সাংবাদিক রাজীব নূর ও তার সহকর্মীরা। হামলায় আহত অন্য সাংবাদিকেরা হলেন কালের কণ্ঠের বানিয়াচং প্রতিনিধি মোশাহেদ মিয়া, স্থানীয় সাংবাদিক তৌহিদ মিয়া ও আলমগীর রেজা।

উক্ত বিক্ষোভ সমাবেশে সূচনা বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সতেজ চাকমা বলেন, “আদিবাসীদের ওপর সংঘটিত অবিচারের বিরুদ্ধে এবং আদিবাসীদের পক্ষে যারা সরব আছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন রাজীব নূর। সাংবাদিক রাজীব নূর তার অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেসব অনাচার সংগঠিত হয়ে আসছে, সেই অনাচারের বিরুদ্ধে রাজীব নূর একজন অন্যতম কলম যোদ্ধা।

সংবাদমাধ্যমকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “এই রাষ্ট্রব্যবস্থায় সাংবাদিক রাজীব নূরের ওপর যে হামলা হওয়া মানে হচ্ছে গণতন্ত্রের অবস্থান সংকুচিত হয়ে আসা। তিনি ও তার সহকর্মীদের ওপর যে হামলা হয়েছে সেই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। গণমাধ্যম হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার  চতুর্থ স্তম্ভ। সেই স্তম্ভকে গলা টিপে যারা হত্যা করতে চায়, তারা কখনোই গণতন্ত্রের জন্য সুখকর হতে পারে না।”

সমাবেশে অংশগ্রহনকারীদের একাংশ। ছবি- আইপিনিউজ।

বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক টনি ম্যাথিউ চিরান বলেন, “হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক রাজীব নূর ও তার সহকর্মীদের ওপর যে হামলা হয়েছে সেই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। এই হামলার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। পুলিশ প্রশাসনের ওপর জোর দাবি জানাতে চাই একদিন পার হওয়ার পরেও  ওয়াহেদ গংদের পুলিশ প্রশাসন গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি।”

তিনি বলেন, “আমাদের রাষ্ট্রের কলমযোদ্ধাদের উপর যারা হামলা করে, তাদের এই রাষ্ট্রে থাকার কোন অধিকার নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পালনকারী আমাদের যে কলমযোদ্ধারা যদি দিনে-দুপুরে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে এরকম বর্বরোচিত হামলার শিকার হন, তাহলে রাষ্ট্রের যে সাধারণ নাগরিক রয়েছে তাদের কি অবস্থা হবে!” বলেও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।”

সংহতি বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিপুন ত্রিপুরা বলেন, “গতকাল আদিবাসী মানুষের বন্ধু সাংবাদিক রাজীব নূর ভূ-পর্যটক ও ভ্রমণ কাহিনী লেখক রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি দখলের ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। ২নং বানিয়াচং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্বীকার করেছেন রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি দখল করেছে ওয়াহেদ মিয়া। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, জনপ্রতিনিধি জানে, মিডিয়া জানে, প্রশাসন জানে কিন্তু কিভাবে ওয়াহেদ মিয়া এতো বছর যাবৎ কিভাবে বাড়িটি দখল করে রাখলো! প্রশাসন কেন নির্বিকার হয়ে ওয়াহেদ মিয়াদের ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছে!”

বিক্ষোভ সমাবেশের সঞ্চালনা করেন আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ। তার বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমরা প্রায় সময় দেখি, যারা সমাজ এবং রাষ্ট্রের ক্রান্তিকালে অন্যায়গুলো সামনে নিয়ে আসেন সেই সাংবাদিকদের ওপর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে হামলা হচ্ছে, নিপীড়ন হচ্ছে। এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়ার ফলে একের পর এক হামলা হচ্ছে। এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করতে হবে।”

বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের দপ্তর সম্পাদক মনিরা ত্রিপুরা। তিনি রামনাথ বিশ্বাসের দখলকৃত বাড়ি উদ্ধার এবং সাংবাদিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, “রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি দখলের ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটন করতে  গিয়ে  আমাদের সাংবাদিক বন্ধু রাজীব নূর ও তার সহকর্মীরা হামলার স্বীকার হয়েছেন। তাই হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

উক্ত সমাবেশে আরো উপস্থিত থেকে সংহতি জানিয়েছেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাবেক তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হালিম মোহাম্মদ প্রমুখ।

Back to top button