জাতীয়

সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য নারী আন্দোলন শক্তিশালী করে বিপ্লব ঘটাতে হবে:সন্তু লারমা

আজ ৮ মার্চ ২০২৫, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির উদ্যোগে রাঙ্গামাটির আশিকা কনভেনশন সেন্টারে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় মহিলা সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি রিতা চাকমার সভাপতিত্বে ও সহ সাধারণ সম্পাদক আশিকা চাকমার সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য জামাবি তঞ্চঙ্গ্যা, বরকল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেএসএস রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য বিধান চাকমা, সিএইচটি হ্যাডম্যান নেটওয়ার্কের সহসভাপতি এডভোকেট ভবতোষ দেওয়ান ও এডভোকেট সুষ্মিতা চাকমা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমাজ মূলত ক্ষয়িষ্ণু সামন্ততান্ত্রিক সমাজ। এ সমাজে নারী-পুরুষ ভেদাভেদ, পুরুষের তুলনায় নারীদের অধিকার অবহেলিত-উপেক্ষিত। নারীর সমমর্যাদা, সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অনেক ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণে বাঁধা দেওয়া, নিরুৎসাহিত করা বিষয়গুলো বিদ্যমান। অপরদিকে বর্তমানে অধিকাংশ নারীরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত হলেও তারা স্বীয় অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়। তারা উপলব্ধি করতে পারে না যে তারা কি ধরনের অধিকার বঞ্চিত?
তিনি আরও বলেন, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ বিভিন্নক্ষেত্রে সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য নারী আন্দোলন সংগ্রাম আরো শক্তিশালী করে বিপ্লব ঘটাতে হবে। কারণ সমাজব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত নারীদের অধিকার অবহেলিত-উপেক্ষিত হতে থাকবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীদের সম অধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠাকল্পে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের বিকল্প থাকতে পারে না। তরুণ সমাজ যারা প্রগতিশীল, নীতি ও আদর্শবান এবং যারা অবহেলিত ও সংগ্রামের সাথে যুক্ত তারাই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিবে ।
অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা বলেন, নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বপ্রথম যে বিষয়টি দরকার তা হলো রাজনৈতিক সচেতনতা। পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠীর শাসন-শোষণের বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আদিবাসী নারীরা শাসন-শোষণ,ধর্ষণ, ধর্ষণের পর ইত্যাদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার শিকার হতে হয় । তাই আদিবাসী নারীদের নিজেদের অধিকার, দায়িত্ববোধ বিষয়ে সচেতন হয়ে এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
আইনজীবী ভবতোষ দেওয়ান বলেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে আছে। সমাজে নারীদের বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বিদ্যমান যেগুলো শুধু প্রকল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ। নারীর ক্ষমতায়ন, অধিকার নিশ্চিত করার জন্য পুরুষদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিধান চাকমা বলেন, মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অবদান কোনো অংশে কম নয়। সমাজে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার সঠিক মতাদর্শের ভিত্তিতে লড়াই সংগ্রামের। আন্দোলন সংগ্রামে নারী সমাজের অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে মহান পার্টি প্রতিষ্ঠা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন জরুরি। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তথা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন সংগ্রামে নারীদের অংশগ্রহণ জরুরী।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য জামাবি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত একটি দেশ যার কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা, নারী সহিংসতা, ধর্ষণ, খুন, ইত্যাদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা। পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রতিনিয়ত শঙ্কিত থাকতে হয়। নারীরা একদিকে ঘুণে ধরা সমাজে প্রতিনিয়ত অবহেলিত অপরদিকে শাসকগোষ্ঠীর শোষণের শিকার। এসবের থেকে উত্তোরণের জন্য দরকার সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন। আর এসবের পরিবর্তনে নারীদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
সভাপতির বক্তব্যে রিতা চাকমা জুম্ম নারীর সম অধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য নারী ও পুরুষ সম্মিলিতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আলোচনা সভা সমাপ্তি করেন।

Back to top button