আন্তর্জাতিক

সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত বার্সেলোনা

ইউরোপের শীর্ষ পর্যটন নগরীগুলোর অন্যতম স্পেনের বার্সেলোনায় মানুষের ভিড়ে দ্রুতগড়ির গাড়ি উঠিয়ে দেওয়ায় বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন।
পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় লাস রামব্লাসে বৃহস্পতিবারের এ হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত এবং ৫০ জনের মতো আহত হয়েছেন বলে কাতালান প্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জোয়াকিম ফর্ন নিশ্চিত করেছেন।

একে সন্ত্রাসী হামলা বলছে কাতালান পুলিশ। হামলায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটকের কথা জানিয়েছে তারা।

গত বছর ১৪ জুলাই ফ্রান্সের নিস শহরে বাস্তিল দিবসের উৎসবে যোগ দিতে আসা মানুষের ভিড়ে ট্রাক উঠিয়ে ৮৬ জনকে হত্যার এক বছরের মাথায় একই ধরনের হামলা হল বার্সেলোনায়।
ওই ট্রাকচালক মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে হামলা চালিয়েছিলেন বলে বলা হয়েছিল।

বার্সেলোনায় হামলায়ও আইএস দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে। আইএসের কথিত সংবাদ সংস্থা আমাক বলেছে, তাদের সৈনিকরা এই হামলা চালিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লাস রামব্লাস এভিনিউয়ে দ্রুতগতির ভ্যানটি পথচারীদের উপর উঠিয়ে দিলে অনেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

টম গুয়েলার নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমি অনেকের আর্তনাদ ও ভাঙাচোরার শব্দ শুনতে পাই। তারপরই দেখি ভ্যানটি রামব্লাসের মাঝ বরাবর এগিয়ে যাচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পারি, এটা সন্ত্রাসী হামলা বা এ রকম কিছু একটা। “এটা মোটেই গতি কমায়নি। এটা ভিড়ের মাঝখান দিয়ে সোজা চলে যাচ্ছিল।”

মোবাইলে ধারণ করা ঘটনার ভিডিওচিত্রে রামব্লাস এভিনিউয়ে অনেকের দেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়, সেগুলোর কয়েকটি ছিল নিথর। যারামেডিক ও আশপাশের লোকজন ছুটে তখনও যাদের জ্ঞান রয়েছে, তাদের সেবা করেন।

বার্সেলোচনায় ছুটি কাটাতে আসা এলেন ভার্কাম বলেন, “আমরা দেখলাম, সাদা রঙের একটি ভ্যান লোকজনের উপরে উঠিয়ে দেওয়া হল। এতে লোকজনকে উড়ে যেতে দেখলাম, তিন সাইকেল আরোহীও উড়ে গিয়েছিল।” হামলার পর লোকজন কাছাকাছি দোকান ও ক্যাফেগুলোতে আশ্রয় নেয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় স্থানীয় মেট্রো ও ট্রেন স্টেশনগুলো।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বার্সেলোনার শহরতলির একটি বারে দুইজন অস্ত্রধারীর অবস্থানের খবর দিলেও পরে তা নাকচ করে পুলিশ। এই হামলার নিন্দা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, স্পেনবাসীকে সহায়তায় যা যা করা দরকার তা তারা করবেন। “কঠোর ও শক্ত হও, আমরা তোমাদের ভালোবাসি!,” বলেন তিনি।
নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে বলেছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্পেনের পাশে থাকবে তার দেশ।

হামলার নিন্দা জানিয়ে স্পেনের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো ও জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল।

রয়টার্স বলছে, প্রতিবছর বার্সেলোচনায় এক কোটি ১০ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেন। সেখানে পর্যটন মৌসুম যখন তুঙ্গে সে সময় এবারের হামলা হল।

২০০৪ সালের মার্চে মাদ্রিদের কমিউটার ট্রেনে ইসলামি জঙ্গিদের পুঁতে রাখা বোমায় ১৯১ জন নিহত হওয়ার পর দেশটিতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটল এই হামলায়।

Back to top button