
শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনীতে গারো আদিবাসীদের শতবর্ষী ফলের বাগান বন বিভাগ কর্তৃক দখল এর ঘটনার প্রতিবাদে আজ বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমতল আদিবাসী ছাত্র জনতা বিক্ষোভ সমাবেশ সমাবেশ করেছে।
বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক সৃজম মৃ এর সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) ঝিনাইগাতী শাখার সভাপতি সৌহার্দ্য চিরান।
সংহতি বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গা। তিনি তার বক্তব্যে বলেন অভ্যন্তরীণ সরকারের এক বছর পূরণ হলেও এমন কোন মাস যায়নি যে আমরা শাহবাগে আদিবাসীদের সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিনি, এর আগেও আমরা অনেকবার এই শাহবাগে দাঁড়িয়েছি। তিনি বক্তব্যে মধুপুরের বাসন্তী রেমার কলা গাছ কেটে ফেলার কথা তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন শুভ চাকমাকে বিজিবি কর্তৃক পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে তার কোনো আইনী ব্যবস্থা সরকার এখন পর্যন্ত নেয়নি। তিনি আরও বলেন বিভিন্ন সরকারের আমলে আমরা আস্থা রেখেছিলাম কিন্তু কোনো সরকার আমাদের সমস্যার সমাধান করে দেয়নি। তিনি আরও ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির প্রতিটি হিসেবে সাদা কবুতর উড়ানো হয়েছিল, কিন্তু সেই কবুতর টি উড়ার আগেই তার ডানা কেটে ফেলা হয়েছে। যার ফলে এখনও শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি। আদিবাসীদের প্রতি সরকারের আচরণ হতাশা মূলক। তিনি বলেন আমরা এমন এক পরিস্থিতিতে দাড়িয়ে আছি যেখানে আমরা প্রশাসনের প্রতি আস্থা রাখতে পারছি না। আদিবাসীদের যা দরকার যেমন স্কুল / হসপিটাল সেগুলো কে পৃষ্ট করে আমাদের কে উন্নয়নের জোয়ারের ভাসিয়ে ফেলা হচ্ছে, এখন সরকারের উন্নয়নের কথা বললে আমরা আদিবাসী ভয় পায় কারণ আবার কোনো না কোনো আদিবাসীর পরিবার না উচ্ছেদ হয়।
সমাবেশে সংহতি বক্তব্য রাখেন গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন,গাসুর শিক্ষা ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক জানোকি চিসিম, তিনি বলেন আদিবাসী সবসময় বন কে রক্ষা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন মধুপুরে উচ্ছেদ অভিযান কিছু সময়ের জন্য স্থগিত বন্ধ থাকলেও এখন আবার গজনীর দিকে নজর দিচ্ছে বন বিভাগ। তিনি আরও বলেন নিতাই, সোমেশ্বরী ও মহাঢেউ নদীর বালু অন্যায় ভাবে উত্তোলন করে নদীগুলোকে মেরে ফেলা হচ্ছে, তিনি এর তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানান।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে গারো স্টুডেন্ট ফেডারেশন জিএসএফ, ঢাকা মহানগরের সভাপতি নিপুল মং বলেন, “আদিবাসীদের শুধু পিছিয়ে রাখা হয়”।
আরও সংহতি বক্তব্যে হাজং স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (হাসুক) ঢাকা মহানগরে তপন হাজং বলেন, ২৪ এর বিপ্লবের পরেও অনেক নেকারজনক ঘটনা ঘটেছে আদিবাসীদের উপর।আদিবাসীরা পূর্বপুরুষ ধরে সে জায়গায় বসবাস করে আসছে,কিন্তু উচ্ছেদ ষড়যন্ত্র এইটা দুঃখজনক। তিনি আরও বলেন এইটা আমরা এমন বাংলাদেশ চাইনি।বাংলাদেশ যেন সম-অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় সেই লক্ষ্যে দেশ সরকার কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল এর সাধারণ সম্পাদক অংশৈসিং মারমা তার সংহতি বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকার উন্নয়ন মূলক কাজের জন্য আদিবাসীদের ভূমির উপর নজর দেন। কয়েকদিন আগেও গাইবান্ধার ইপিজেড, খাসিয়া পুঞ্জির পান গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, আলীকদমে গুরু আদিবাসীদের কলা গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, লামায়ে জুম ভূমির দান ফসল আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন নিরপরাধ বম জনগোষ্ঠীকে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে তিনি এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রের কাছে প্রশ্ন করেছেন নিরপরাধ বম নারী ও শিশুরা কি অন্যায় করেছে যার জন্য তাদের কারাবাসে থাকতে হবে? তিনি আরও বলেন বাংলাদেশ রোহিঙ্গারা পাঁচ থেকে ছয় বছর বাংলাদেশে বসবাস করছে কিন্তু বম জনগোষ্ঠীরা বাংলাদেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে সরকার চিন্তা করলেও বম জাতি গোষ্ঠীর জন্য সরকার এখনো চিন্তাভাবনা করিনি। তিনি আরও আদিবাসীদের উপর নির্যাতন বন্ধের দাবি জানান। তিনি আরও আদিবাসীদের প্রতি বৈষম্যের তীব্র নিন্দা জানান।
আরও সংহতি বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ঢাকা মহানগরের সভাপতি জগদীশ চাকমা তিনি তার বক্তব্যের শুরুতেই পরিবেশ ও বন উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান ” আপনি আদিবাসীদের জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেটি রক্ষা করুন “। তিনি আরও বন বিভাগ শুধু সমতলে নয় তারা সুযোগ পেলেই সব জায়গাতেই দখল ও উচ্ছেদের চেষ্টা চালায়, বন বিভাগ যেন তাদের উচ্ছেদ ও দখল ষড়যন্ত্র বন্ধ করে। তিনি এই সমাবেশ থেকে বলেন বন বিভাগ যদি তাদের ষড়যন্ত্র বন্ধ না করে তাহলে আদিবাসী ছাত্র জনতা কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। ২৪ শের ৫ ই আগস্ট যেভাবে ফ্যাসিস্ট সরকার কে বিতারিত করতে বাধ্য করেছে ঠিক সেভাবে বন বিভাগের প্রতি আদিবাসী ছাত্র জনতা রুখে দাড়াবে।
আরও সংহতি বক্তব্য রাখেন বম স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন এর কেন্দ্রীয় সভাপতি লালরিনথাং বম। তিনি তার সংহতি বক্তব্যে বলেন আপনারা উন্নয়ন করবেন, করেন কিন্তু কাউকে উচ্ছেদ করে নয়। তিনি আরও বলেন কতিপয় কুকি-চিন এর কারণে কেন সাধারণ বম জনগোষ্ঠী কে কারাবন্দী হয়ে থাকতে হবে?
শেষাংশে তিনি আহ্বান জানান , শতবর্ষ জমি দখলের পায়তারা থেকে বেরিয়ে আসুন।
সমাবেশের শেষ প্রান্তে আজকের বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতি সৌহার্দ্য চিরান তার সমাপনী বক্তব্য রাখেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন গজনী তে গারো আদিবাসীদের বসবাস বহুকাল ধরেই। কিন্তু যখন থেকে বন বিভাগ জন্ম নিল তখন থেকেই গারো আদিবাসীদের উপর অত্যাচার শুরু হয়। তিনি আরও বলেন শুধু গজনী তে নয় পার্শ্ববর্তী উপজেলার বালীজুরীতে বন বিভাগ কতৃক উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। তিনি বলেন যে জমিটি দখলের চেষ্টা করা হয় সেটি ছিল গজনী ব্যাপ্টিষ্ট চার্চের ফলের বাগান যা ১৯২৫ সালে স্থাপিত হয়। তিনি বন বিভাগের কাছে প্রশ্ন করেন ফলজ গাছের জন্য পরিবেশ নষ্ট হয় নাকি আকাশমনি গাছের জন্য পরিবেশ নষ্ট হয়? তিনি আরও বলেন বন বিভাগ শুরু শেরপুরেই নয় মধুপুর থেকে শুরু করে পিরোজপুর, রাঙামাটি, বান্দরবান সমগ্র বাংলাদেশে শুধু আদিবাসীদের জমির উপরেই তাদের নজর যায়। তিনি আরও বলেন সব সরকারের আমলেই কেন আদিবাসীদের উপরই অন্যায়, অত্যাচার করা হয়? তিনি বলেন আদিবাসীরা কখনও অন্যায় কে প্রশ্রয় দেয়নি এবং অন্যায়ের সাথে থাকে না, যদি এইভাবে চলতে থাকে তাহলে সামনের দিনে আরও দুর্বার আন্দোলনের করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন আমরা এই বন এবং মাটিকে মা বলে মানি,এই বন থেকে আমাদের বিতাড়িত করার চেষ্টা করবেন না। আমাদের শান্তিতে বসবাস করতে দিন।