জাতীয়

শান্তির জন্যই চুক্তি করেছি: পিসিপি’র সমাবেশে জেএসএস নেতা ঊষাতন তালুকদার

আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): শান্তির জন্যই চুক্তি করেছি। এটা চুরি করা কোনো বিষয় নয় বলে মন্বব্য করেছেন জনসংহতি সমিতির নেতা ঊষাতন তালুকদার।  আজ ২৫শে নভেম্বর ২০২২ রোজ শুক্রবার সকাল ১০ টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর উপলক্ষ্য  দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণাপূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখার আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন। উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সংহতি বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সংগ্রামী সহ-সভাপতি ও সাবেক সাংসদ উষাতন তালুকদার। সকাল ১০ টায় সংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে আবার অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। সেখানে বিভিন্ন ছাত্র যুব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি রেং ইয়ং ম্রো’র সভাপতিত্বে ও সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চাকমা’র সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদান বলেন, পার্বত্য চুক্তি সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করতে হবে, বোঝাতে হবে। না হলে বিরোধিতার সৃষ্টি হবে। এই চুক্তি কোন চুরি করা জিনিস নয়, এই চুক্তি পাহাড়ের শান্তির জন্যে। অনেক অভিজ্ঞ সংবিধান বিশ্লেষকদের নিয়ে সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে সেখানে নতুন করে কোন বিশেষ শাসনব্যবস্থা হচ্ছে না,  ব্রিটিশ আমল থেকে সেখানে বিশেষ ব্যবস্থা ছিলো। এই চুক্তি শুধু সেই শাসনব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা। চুক্তির ধারা অনুযায়ী সেখানে স্থানীয়দের নিয়ে পুলিশ বাহিনী গঠন করা হবে। এইটা কোন আলাদা স্বাধীন দেশের পুলিশ নয়, এইটা বাংলাদেশের পুলিশই থাকবে। এখানেও তাদের বিরোধিতা।
 সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের ভূমিকার নিন্দা জানিয়ে জনসংহতি সিমিতির এই নেতা আরো বলেন, চুক্তির মাধ্যমর  গঠিত ভূমি কমিশনের বৈঠক স্থগিত করতে সেখানে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা কিছু দালাল সংগঠন হরতাল ডাকছে, বিক্ষোভ করেছে। কিন্তু সরকার চুপ করে আছে কেন? কারণ তারা চায় না বৈঠক হোক। তারা চায় ভূমি সমস্যা জিইয়ে রাখতে। সরষের ভেতর ভূত থাকলে ভূত তাড়াবে কে, বলেও প্রশ্ন রাখেন তিনি।
পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার মিছিল। স্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ২৫ নভেম্বর, ২০২২। ছবি আইপিনিউজ।
জনসংহতি সিমিতির এই নেতা আরো বলেন, পাহাড়ের মানুষকে জন্তু জানোয়ার ভাববেন না। তারাও এদেশের মানুষ। তাদেরও সমভাবে বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে। দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বত্ত্বাকে মেনেই আমরা চুক্তি করেছি। সেই চুক্তি অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় যে কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির দায় সরকারকে নিতে হবে।
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা তার সংহতি বক্তব্যে বলেন, এই চুক্তি হয়েছিলো তৎকালীন অধিষ্ঠিত বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতন, অত্যাচার শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে।  আমাদের পূর্বপুরুষেরা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের দাবিতে, গ্রামে গঞ্জে, শহরের আনাচে কানাচে সংগ্রাম চালিয়েছে। আজ আমরা উত্তরসূরীরা তার চেয়েও অধিক আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তিনি আরো বলেন, শাসকগোষ্ঠী যদি মনে করে যে, দমন পীড়ন ও পাহাড়ী মানুষদের ভাগ করে শাসন শোষণ অব্যাহত রাখা যাবে, সেটা ভুল। ব্রিটিশ উপনিবেশিক সাম্রাজ্যকেও পালিয়ে যেতে হয়েছিল। কাজেই এই রাষ্ট্রকে সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা তার সংহতি বক্তব্যে বলেন, আজ সরকার মগ পার্টি, কুকি চিন সহ আরো কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নিয়ে যে একটা ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি দিয়ে আন্দোলন দমিয়ে রাখার অপচেষ্টা চালাচ্ছে সেটা কখনো সফল হবে না। পার্বত্য চুক্তি যদি বাস্তবায়ন করা না হয় তবে সকল ধরনের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির দায় সরকারকে নিতে হবে বলেও হুশিয়ারী দেন তিনি।
সমাবেশের সভাপতি রেং ইয়ং ম্রো বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে আপনি কথা বলতে পারবেন না। আপনি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কিন্তু প্রতিবাদ করতে পারবেন না। এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করে রেখেছে শাসকগোষ্ঠী। আপনারা দেখতে পাবেন যে, যারা চুক্তি বিরোধিতা করে ঘাপতি মেরে থাকেন তারা ২ ডিসেম্বর নাটক শুরু করবে, কনসার্ট করবে। কিন্তু এই ছাত্র সমাজ আন্দোলনের মাধ্যমে এইসব নাটক চুরমার করে দিবে।
এবং সহতি বক্তব্যে বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের সাংগঠনিক সম্পাদক অংশৈসিং মারমা বলেন, চুক্তির মৌলিক ধারা “ভূমি অধিকার” ফিরিয়ে দেওয়ার বদলে আজ চিম্বুকের ম্রো পাড়া, লামার শত শত একর জুম ভুমি বেদখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। লামার সরই ইউনিয়নে আদিবাসীদের জুম ভূমি পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে, ঝিরিতে বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে। আমরা এই ধরণের নিপীড়নের তীব্র নিন্দা জানাই।
উক্ত মিছিল পরবর্তী  সমাবেশে সংহতি জানিয়ে আরো বক্তব্য রাখেন আদিবাসী যুব ফোরামের দপ্তর সম্পাদক মনিরা ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমান, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীলসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

Back to top button