জাতীয়
লামার আদিবাসীরা কী রাবার খাবে? শাহবাগের সমাবেশে প্রশ্ন আদিবাসী নেতা দীপায়ন খীসার

আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): লামার সরই ইউনিয়নের আদিবাসীরা কী রাবার খেয়ে জীবন ধারণ করবে? তারা জুম চাষ করে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা। আজ বান্দরবানের লামায় ম্রো ও ত্রিপুরাদের ভূমি বেদখল প্রচেষ্টা বন্ধ ও রাবার কোম্পানির লীজ বাতিলের দাবিতে সমাবেশ করে আদিবাসী যুব সংগঠনসমূহ। উক্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কবি, সাহিত্যিক ও নেতা কর্মীরা বক্তব্য রাখেন।
আজ সোমবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে আদিবাসী ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলোর আয়োজনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে লিখিত বক্তব্যে আদিবাসী ফোরামের দপ্তর সম্পাদক মনিরা ত্রিপুরা বলেন, গত ২৭ এপ্রিল লামার সরই ইউনিয়নে রেংয়েন ম্রো কার্বারি পাড়া, লাংকম ম্রো কার্বারি পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কার্বারি পাড়া- এই তিন গ্রামের ৪০০ একর জুমভূমি, ফলজ বাগান ও বন পুড়িয়ে দেয় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এ ঘটনায় জড়িত লামা রাবার কোম্পানির কামাল উদ্দিন, মোয়াজ্জেম হোসেনকে শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। বরং বিভিন্নভাবে উচ্ছেদের চিন্তা করছেন। তিন গ্রামের ৩৯ টি পরিবারের প্রায় দুই শতাধিক মানুষকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা আরো বলেন, বারবার আগুন দেয়া হচ্ছে, পানিতে বিষ দেয়া হচ্ছে, আম বাগান কাটা হচ্ছে। এসবকিছু দিনদুপুরে প্রকাশ্যে হচ্ছে। আমরা যুগের পর যুগ, পজন্মের পর প্রজন্ম এখানে বাস করে যাচ্ছি। আজ আমাদের বলা হচ্ছে কাগজ পত্র দেখাতে হবে। এখন মনে হচ্ছে সরকার ক্ষমতায় নেই আছে দখলদারিত্বরা। সরকার বলছেন দুর্ভিক্ষ হবে। এদিকে তাদের বাগানের গাছ কেটে দেয়া হচ্ছে তাহলে কি লামার গ্রামবাসীরা রাবার খাবেন। তাদের বাগান কেন কেটে দিচ্ছেন।

কবি ও মানবাধিকারকর্মী শাহেদ কায়েস বলেন, আমরা যে মুহুর্তে এখানে সমাবেশ করছি সে মুহুর্তে এই তিনটি পাড়ায় দুই শতাধিক মানুষ ভয়াবহ জীবন যাপন করছে। সাত মাস ধরে সেখানে তারা নানাভাবে নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। এই কাজটা করছে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ। যারা সরকার থেকে লিজ নিয়েছে। যে লিজটাও পুরোপুরি অবৈধ। ২৭ এপ্রিল জুম বাগান পুড়িয়ে দেয়া হল তারপর ধারাবাহিকভাবে বিহারে ভাঙচুর করা হল, পরে পানিতে বিষ মিশিয়ে দেয়া হল, ২৬ সেপ্টেম্বর আদিবাসীদের বাগান কেটে দেয়া হল। এমন পরিস্থিতি কোনো সভ্য দেশে হতে পারে না। সেইসঙ্গে গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাগুলোও প্রত্যাহার করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি পারভেজ হাসেম বলেন, পাহাড়ের ভূমি অনুশীলন ও ভূমি ভোগের ধরন সমতল থেকে ভিন্ন। তবে এখানে নিশ্চিত এ ভূমির মালিকানা ম্রো ও ত্রিপুরা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর। সেখানে লিজ নেয়ার প্রশ্ন আসে না। এই লিজ কখনোই বৈধ না। আদিবাসী ফোরামের ভূমি ও আইন বিষয়ক সম্পাদক উজ্জ্বল আজিম বলেন, ভূমি বেদখল নতুন কিছু নয়, অথচ আদিবাসীরা ভূমিকেই তাদের জীবন মনে করে। আজকে সমতলের দিকে তাকান সিলেটের খাসিদের প্রতিনিয়ত ভূমি রক্ষায় সংগ্রাম করতে হচ্ছে। মধুপুরবাসীদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে। একইভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামেও প্রতিনিয়ত এই ঘটনা ঘটছে। রাষ্ট্র আমাদের পক্ষে নেই। পার্বত্য চুক্তি সফল হলে আজ এমন একটি সময় আসতো না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খাইরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ নির্যাতন থেকে মুক্তি পেয়েছে মাত্র ৫০ বছর হলো এখন তারা নিজেরাই নির্যাতনের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আমি বাঙালি হিসেবে চাই তাদের অধিকার আদায় হোক। আমরা আরেকটা রক্তপাত দেখতে চাই না। উন্নয়নের নামে মানুষকে উচ্ছেদ করে রাবার চাষ করার পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে।
সংহতি বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সহ-সভাপতি সতেজ চাকমা বলেন, আমরা অল্প কয়েকদিন পরেই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বর্ষপূর্তি পালন করবো। কিন্তু এই সময়েও আমাদেরকে ভূমি রক্ষার জন্য দাঁড়াতে হচ্ছে। লামায় যা হয়েছে তা মূলত ভাতে মারার, পানিতে মারার একটা প্রয়াস। এসব মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলেই সংঘটিত হচ্ছে। কিন্তু আমরা এত দাবী করছি, প্রতিবাদ করছি তার পরও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। মনে রাখতে হবে, প্রতিবাদ যখন প্রতিকারহীন, প্রতিরোধ তখন অনিবার্য হয়ে ওঠে। তিনি অবিলম্বে পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের দাবীও জানান।
উক্ত সমাবেশে আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলীক মৃর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন, বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান লিপন, আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম প্রমুখ।
