রোহিঙ্গা সঙ্কট: বাংলাদেশে বৌদ্ধদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কটকে কেন্দ্র করে একটি ‘স্বার্থান্বেষী’ মহল বাংলাদেশে বসবাসরত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ‘বিচ্ছিন্নভাবে’ হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজ।
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের উপর ‘হামলা ও নির্যাতনের’ ঘটনায় শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির সঙ্গে আয়োজিত এক সমাবেশে এ অভিযোগ করা হয়। সমাবেশে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজের মুখ্য সমন্বয়ক অশোক বড়ুয়া।
তিনি অভিযোগ করেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে ‘স্বার্থান্বেষী’ মহলটি সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে।
“ফেইসবুকসহ সোশাল মিডিয়াগুলোতে উসকানিমূলক প্রচারণার মাধ্যমে মিয়ানমার পরিস্থিতির অকারণ দায়ভার এ দেশের শান্তিপ্রিয় নিরীহ বৌদ্ধদের উপর চাপিয়ে তাদের উপর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চাইছে।” এই ক্রমাগত হুমকির মুখে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও ভিক্ষু সংঘ ‘শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতায়’ ভুগছেন বলে জানান সমাবেশে উপস্থিত বৌদ্ধ নেতারা।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কক্সবাজারে রামুতে বৌদ্ধ পল্লী পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ইসলাম অবমাননার গুজব তুলে রামুর ওই ধ্বংসযজ্ঞের প্রসঙ্গ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয়ে থাকার পর গত ২৪ অগাস্ট রাখাইনে পুলিশ চেকপোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির হামলার পর সেখানে পাল্টা সেনা অভিযানের মুখে দেশ ছাড়তে থাকা রোহিঙ্গা মুসলিমরা ফের বাংলাদেশমুখী হয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাবে, বুধবার পর্যন্ত এই দফায় প্রায় এক লাখ ৪৬ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। এর আগে গত বছরের অক্টোবরেও রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের একই ধরনের হামলার পাল্টা সেনা অভিযানে প্রায় ৮৭ হাজার মিয়ানমার নাগরিক বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে।
ইসলাম ধর্মানুসারী এসব রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোয় শঙ্কিত সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজের নেতারা রামুর ঘটনার পর প্রশাসনিক তৎপরতা ও ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনার’ বাঙালিদের পাশে পাওয়ার কথাও তুলে ধরেন।
অশোক বড়ুয়া বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক ও হিংসাত্মক কাজ কখনও সমর্থন করে না, আমরা সবসময় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে। আবহমানকাল থেকে বাংলাদেশে যে অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে এই পরম্পরা সমুন্নত রাখতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”
মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের উপর ‘সহিংস’ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে রোববার ঢাকার মিয়ানমার দূতাবাসে স্মারকলিপি পেশ করবেন সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজের প্রতিনিধিরা।
এ অনুলিপি জাতিসংঘের কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব মহলে পাঠানো হবে বলে জানান অশোক বড়ুয়া।
মিয়ানমারের ঘটনাকে ‘নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বৌদ্ধ সমাজের পক্ষে সঙ্কট নিরসনে জাতিসংঘের জরুরি পদক্ষেপ কামনা করেন অশোক বড়ুয়া।
একইসঙ্গে কক্সবাজারের সীমান্তে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তার জন্য বৌদ্ধ ধর্মীয় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান।