আঞ্চলিক সংবাদ

রাজশাহীতে উলগুলানের মহানায়ক বিরসা মুন্ডার ১২৩তম শহীদ দিবস পালিত

আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন “উলগুলানের” মহানায়ক বীর বিরসা মুন্ডার ১২৩তম শহীদ দিবস পালন উপলক্ষে আদিবাসী ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে গতকাল ৯ জুন ২০২৩ শুক্রবার বিকাল ৪.০০টায় রাজশাহীর গণকপাড়াস্থ জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার শুরুতে বিরসা মুন্ডাসহ অপরারপর সকল শহীদ আদিবাসী নেতাদের আত্মার শান্তি কামনায় এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। বিরসা মুন্ডার জীবনীর উপর সংক্ষিপ্ত ধারনা পত্র পাঠ করেন আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক পলাশ পাহান।

আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নকুল পাহানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ক্রিষ্টিনা বিশ্বাস, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গনেশ মার্ডি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়, দপ্তর সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম, রাজশাহী জেলা সাধারণ সম্পাদক সুশেন কুমার শ্যামদুয়ার, পবা উপজেলা সভাপতি মুকুল বিশ্বাস, আদিবাসী যুব পরিষদ রাজশাহী জেলা সভাপতি উপেন রবিদাস, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক তরুন মুন্ডা, বিশ^বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি সুশান্ত মাহাতো।

আলোচনা সভায় আলোচনায় বক্তারা বলেন, শহীদ বীর বিরসা মুন্ডা আদিবাসী মুন্ডাদের রক্ষাকর্তা হিসেবে আবির্ভুত হয়েছিলেন। বিরসা মুন্ডা ১৮৭৫ সালে জন্মগ্রহন করেন। আদিবাসীদের জীবনাচারণ জুড়ে ছিল ভূমি আর জঙ্গল। কিন্তু ১৯৯৪ সালে ব্রিটিশদের বন আইন এবং ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার ফলে আদিবাসীরা অসহায় হয়ে ভূমি এবং জঙ্গল হারাতে থাকে। পুর্ব পুরুষদের কর্ষণ করা ভূমি এবং জঙ্গলে তাদের স্বাধীনতা বিনষ্ট হতে থাকে। তাছাড়া বহিরাগত জমিদার, জোতদার, মহাজন নায়েব, গোমস্তারা আদিবাসীদের ভূমি এবং জঙ্গলের নিয়ন্ত্রন নিয়ে আদিবাসীদের জনজীবনে দুঃর্বিস অস্থিরতা সৃষ্টি করে। অত্যাচার আর শোষনে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে মুন্ডাদের জীবন। নিজের আগলে রাখা ভূমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া, কর দেওয়া এগুলো আদিবাসীরা মেনে নিতে পারে নি। যে কারনে বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে ১৮৯৯ থেকে ১৯০০ সালে উলগুলান বা মহাবিদ্রোহ সংগঠিত হয়। বিরসা মুন্ডা তার স্বল্পায়ু জীবনে ১৮৯৫ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন আদিবাসীদের মুক্তির জন্য। বিরসা মুন্ডাকে ১৯০০ সালে ৯ জুন চাইবাসা (রাচি) জেলে বিষপানে হত্যা করা হয়।

তিনি তৎকালিন মুন্ডা সমাজসহ অন্যান্য আদিবাসী কৃষক, খেতমজুর, দিনমজুর জন্য যে ত্যাগ, সংগ্রাম করেছেন তা ইতিহাসে বিরল। তিনি মুন্ডা সমাজকে নতুনভাবে বিনির্মান করতে চেয়েছিলেন। তৎকালীন মুন্ডা সমাজের কুসংস্কার অন্ধবিশ^াস দুর করার চেষ্টা করেছিলেন। এজন্য বর্তমান আদিবাসী নতুন প্রজন্মকে তার ইতিহাস, সংগ্রাম জানতে হবে। তার সেই সংগ্রামী চেতনা আমাদের লড়াই, সংগ্রামে ধারন করতে হবে। বিরসা ভগবান মুন্ডাদের জন্য লড়াই করলেও তার সংগ্রামী জীবন এ অঞ্চলের সকল আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে অনুপ্রাণিত করে। আদিবাসীদের উপর সব ধরনের শোষন, নির্যাতন এবং বঞ্চনার প্রতিবাদী কন্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বিরসা মুন্ডা মৃত্যুর ১২৩ বছর অতিবাহিত হলেও আদিবাসীরা তাদের সাংবিধানিক ও ভূমির অধিকার এখনো পায়নি। এছাড়াও বক্তারা দেশের শিক্ষা পাঠ্য পুস্তকে বিরসা মুন্ডা ও সাওতাঁল বিদ্রোহের ইতিহাস অর্ন্তভুক্ত করার দাবি জানান।

Back to top button