রাজধানীতে আয়োজিত হচ্ছে আদিবাসী খাদ্য ও শস্যমেলা

আইপিনিউজ ডেস্ক (ঢাকা): আগামী ২১ ও ২২ নভেম্বর (শুক্র ও শনিবার) রাজধানীতে আয়োজিত হচ্ছে আদিবাসী খাদ্য ও শস্যমেলা।
আদিবাসী খাদ্য ও শস্য মেলা-২০২৫ আয়োজক কমিটির সদস্য মিঠুন রাকসাম কর্তৃক প্রেরিত এক বার্তায় জানা যায়, উন্নয়ন সংগঠন নাগরিক উদ্যোগ ও আদিবাসী সুহৃদদের আয়োজনে এই উদ্যোগটি পার্বত্য বৌদ্ধসংঘ কমপ্লেক্স, মিরপুর-১৩, প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে।
আয়োজকদের পক্ষে মেইনথিন প্রমীলা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মেলার স্টল বরাদ্দের বিষয়টি প্রচার হওয়ার পর থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। পাবর্ত্য অঞ্চলের পাশাপাশি সমতলের মান্দি, মনিপুরী, সাঁওতাল ও রাখাইনদের অনেক উদ্যোক্তা ইতোমধ্যেই স্টলের জন্য বুকিং দিয়েছেন। স্টল বুকিং-এর মধ্যে আদবিাসী নারী উদ্যোক্তাদের প্রধান্য রয়েছে বলে তিনি জানাচ্ছেন। মেলায় স্টল নিয়েছেন রাজধানীর ভোজন রসিকদের কাছে সুপরিচিত পাহাড়ী নারীদের দ্বারা পরিচালিত “হেবাং রেস্তোরাঁ”। আদিবাসীদের ঐতিহ্যমন্ডিত রন্ধন প্রণালির তেল ও মসলামুক্ত বিভিন্ন জনপ্রিয় খাবার নিয়ে অনেক স্টল থাকছে। থাকছে পাহাড়ের জনপ্রিয় ব্যাম্বু শুট, কলা পাতার রান্না করা বিভিন্ন পদের হেবাঙ। পাহাড়ী মুরগী ও কাপ্তাই হ্রদের মাছসহ নানান জুমিয়া সবজির মুখরোচক খাবার থাকছে। এইছাড়াও পার্বত্য অঞ্চলের জনপ্রিয় খাবার পাজনের স্বাদ নিতে পারবেন মেলায় আগত দর্শনার্থীরা।
সমতলের আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় খাবারের পসরা সজিয়ে বসবেন মনিপুরী, গারো ও রাখাইনরা। কালো ও সাদা বিনি চাউলের বিভিন্ন প্রকার মুখরোচক পিঠা নিয়ে হাজির হচ্ছেন রাখাইন ভোজন রসিকরা। থাকছে হাল নাগাদ বাঙালিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠা অনেক ধরণের মুন্ডি। মেলার বিশেষ অকর্ষণ থাকছে পাহাড়ের বাঁশের হুক্কা। যা বাঁশ দাবা নামে বেশি পরিচিত। থাকবে নানা প্রকার টাটকা ফলের ঝাল আইটেম। এই ঝাল আইটেম লাকসো নামে অধিক পরিচিত । মেলায় থাকছে কালা বিনিসহ বিভিন্নজাতের বিনি চাউলের সমাহার। পাহাড়ী মধুও মেলায় পাওয়া যাবে বলে আয়োজকরা জানাচ্ছেন।
এইছাড়া জুমের শাকসবজি, ফলমূল, বৈচিত্র্যপূর্ণ নানা জাতের কৃষিপণ্যের সমাহার এবং শুঁটকির পসরা নিয়ে অনেক উদ্যেক্তা উপস্থিত হবেন। অন্যতম আয়োজক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী মেলার বিষয়ে জানান, দেশের শহুরে নাগরিক জনগোষ্ঠীকে আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় সমৃদ্ধ জুম কৃষির বিভিন্ন শস্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য এই মেলার আয়োজন। তিনি বলেন, আদিবাসী উদ্যোক্তরা যেন বেশি বেশি ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে পারেন সেই তাগিদ থেকেই আদিবাসী খাদ্য ও শস্য মেলা-২০২৫-এর আয়োজন করা। তিনিও আরো জানান এই বছরসহ টানা ৪ বছর আদিবাসী খাদ্য ও শস্য মেলাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি জানান, মেলাটি ইতোমধ্যে রাজধানীবাসীর কাছে বেশ সমাদৃত হয়েছে।
মেলার বিষয়ে আয়োজকদের অন্যতম সদস্য মেন্টল চাকমা বলেন আমাদের দেশে বহুত্ববাদী সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আদিবাসীদের বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবার। এই বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবারের সাথে বাঙালি জনগণের খাদ্যাভাসের মেলবন্ধন ঘটানোর লক্ষ্যে আদিবাসী খাদ্য ও শস্য মেলার মাধ্যমে তারা সেই প্রয়াস চালাচ্ছেন। আয়োজকরা আশা করছেন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়াতে ২১ ও ২২ নভেম্বর ২ দিন ব্যাপী মেলাতে ব্যাপক লোকজনের সমাগম হবে ।
মেলার পাশাপশি প্রতি সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ আদিবাসী সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাও দর্শনার্থীরা উপভোগ করতে পারবেন। ২১ নভেম্বরের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় থাকবেন জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী জলিপ্রু মারমা ও সমান্তর চাকমা।

২২ নভেম্বরের সাংস্কৃতিক আয়োজনে মঞ্চ মাতাবেন বাংলাদেশ আইডল মং, সংগীতিশিল্পী কুলিন চাকমা ও গারোদের উদীয়মান গায়ক মার্কুস চিসিম । এইছাড়াও থাকছে পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশনা।

মেট্রোরেল মিরপুর ১০ স্টেশন থেকে রিকশা যোগে মাত্র ৫ মিনিটে মেলার স্থলে পৌঁছা যাবে। মেলার স্থান পার্বত্য বৌদ্ধ সংঘ কমপ্লেক্সের পাশেই রয়েছে স্কলাসটিকা এবং এস ও এস শিশু পল্লী। বিপরীতে রয়েছে বিআরটিএর কার্যালয়।


