মতামত ও বিশ্লেষণ

রাঙ্গামাটি আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ঊষাতন তালুকদারের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আপনাদের সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।
সারাদেশের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামেও আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আপনারা জানেন যে, গুম-অপহরণ, গণগ্রেপ্তার, হামলা-মামলা, সাম্প্রদায়িকতা, দুর্বৃত্তায়ন, দলীয়করণ, লুটপাট, দুর্নীতি এবং বিচার, সভা-সমাবেশ ও বাক-স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ ইত্যাদির ফলে সারাদেশে এক সংকটজনক অবস্থা বিরাজ করছে। অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজ করছে নিরাপত্তাহীন শ্বাসরুদ্ধকর এক নাজুক পরিস্থিতি। শাসকগোষ্ঠীর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, চরম দুর্নীতি, চাঁদাবাজি- টেন্ডারবাজি, দলীয়করণ, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে অব্যাহত গড়িমসি, পার্বত্য চুক্তি ও জুম্ম স্বার্থ বিরোধী ষড়যন্ত্র, ফ্যাসীবাদী দমনপীড়নের ফলে রাঙ্গামাটি জেলাসহ সমগ্র পার্বত্যাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে পার্বত্যবাসী আজ গভীরভাবে শঙ্কিত ও ক্ষুদ্ধ। এমনিতর নাজুক পরিস্থিতিতে সারাদেশের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামেও একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধান এবং জনমুখী ও পরিবেশ-বান্ধব সুষম উন্নয়নের অঙ্গীকার নিয়ে ২৯৯ পার্বত্য রাঙ্গামাটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি আবারো প্রতিদ্বন্দ্বীতায় অবতীর্ণ হয়েছি।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সুষম উন্নয়নের অঙ্গীকার নিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছি তাতে রাঙ্গামাটি জেলাবাসী আমার প্রতি আস্থা রেখে আমার পক্ষে বলিষ্ঠ রায় দিয়ে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করেছিলেন। সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত পাঁচ বছরে জাতীয় সংসদের ভেতরে ও বাইরে পার্বত্যাঞ্চলের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জোরালো দাবিতে সোচ্চার থাকার চেষ্টা করেছি। জাতীয় সংসদের ভেতরে ও বাইরে বরাবরই পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক ও কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহলের মানবতা বিরোধী তৎপরতা, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন ও অনাচারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছি। বলাবাহুল্য, আমার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও প্রস্তাবনায় ৩৩ বছর পর মহান জাতীয় সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার উপর শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল, যা আমার সংসদীয় সংগ্রামে অন্যতম অর্জন হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। একথা বললে কখনোই বাগাড়ম্বর হবে না যে, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের গণপরিষদ ও প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার পর আমিই একমাত্র সংসদ সদস্য হিসেবে পার্বত্যবাসীর উপর শোষণ-বঞ্চনা ও তাদের অধিকারের কথা জাতীয় সংসদে সর্বদা জোরালোভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আপনারা নিশ্চয় অবলোকন করেছেন, রাঙ্গামাটি জেলাসহ তিন পার্বত্য জেলার জনমুখী ও পরিবেশ-বান্ধব সুষম উন্নয়নের পক্ষে সরকারের নিকট নিরলসভাবে ক্রমাগত জোরালো দাবি জানিয়ে এসেছি। আর সে কারণেই আজ তিন পার্বত্য জেলায় ৫৬৬ কোটি টাকা বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণকরে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ব্যাপক সৌর বিদ্যুৎ স্থাপনের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চল আলোকিত হচ্ছে। শিক্ষার উন্নয়নের জন্য দুর্গম অঞ্চলে ইউএনডিপি পরিচালিত ২১৮টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তম্মধ্যে ৮০টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শিক্ষাখাতে নি¤œ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন সম্প্রসারণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ পর্যন্ত রাঙ্গামাটি জেলায় প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ১০০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। এমপিওভুক্তির জন্য ১৫টি নি¤œ মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা ৬টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ১০ উপজেলায় ১০টি নি¤œ মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চারতলা বিশিষ্ট একাডেমিক নতুন ভবন নির্মাণ ও ১০টি নি¤œ মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উর্ধমুখী সম্প্রসারণ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে জেলা সদর হাসপাতাল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীত করে নতুন হাসপাতাল নির্মাণ কার্যক্রম অব্যাহত আেেছ। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ৫০ শয্যায় উন্নীত করে ভবন নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তবে এটি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থারক্ষেত্রে কিছু উন্নয়ন ত্বরান্বিত হলেও শাসকশ্রেণির টালবাহানা ও অসদিচ্ছার ফলে সামগ্রিকভাবে পার্বত্যাঞ্চলে এখনো পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক বিশেষ শাসনব্যবস্থা এবং জনমুখী ও পরিবেশ-বান্ধব সুষম উন্নয়নের ধারা গড়ে উঠেনি। ২১ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্যাঞ্চলে এখনো সেই কাক্সিক্ষত সুশাসন, শান্তি ও উন্নয়ন অর্জিত হয়নি। পক্ষান্তরে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে শাসকশ্রেণির অব্যাহত গড়িমসির সুযোগে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর ইন্ধনে প্রতিনিয়ত সাম্প্রদায়িক উস্কানী, হামলা, অগ্নিসংযোগ, নারীর উপর সহিংসতা, ভূমি বিরোধ, হত্যা-অপহরণ-চাঁদাবাজি ইত্যাদি ঘটনা পার্বত্য জনজীবনে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সকল প্রকার উন্নয়নের ধরাছোঁয়ার বাইরে অবস্থান করছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের হতদরিদ্র কৃষক, শ্রমিক, ভূমিহীন, জুমচাষী, ফরেষ্ট ভিলেজার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি শ্রমজীবী মানুষ। কর্মসংস্থানের অভাবে শত শত শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী গ্লানিকর বেকার জীবন অতিবাহিত করছে। গ্রামীণ নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন আশাব্যঞ্জক নয়। পর্যাপ্ত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ব্যাহত হচ্ছে পার্বত্যাঞ্চলের গ্রামীণ উন্নয়ন।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
শাসকগোষ্ঠীর স্থানীয় নেতৃত্ব তাদের অগণতান্ত্রিক ও সংকীর্ণ দলীয় নীতির কারণে, সর্বোপরি একান্ত ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার বশবর্তী হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন তথা পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার যথাযথভাবে সমাধানে দৃঢ় ও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে বরাবরই ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁরা অব্যাহতভাবে চুক্তি বিরোধী এবং জনমুখী ও পরিবেশ-বান্ধব উন্নয়ন পরিপন্থী ভূমিকা পালন করে চলেছে। এই স্বার্থান্বেষী মহল সরকারি পর্যায়েও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টির ক্রমাগত অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
তাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে এসব শাসকশ্রেণির তাবেদার গোষ্ঠী, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী রাজনৈতিক দালাল ও প্রতিক্রিয়াশীলদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিরোধ করার সময় এসেছে। দেশের এই বিশেষ ক্রান্তিলগ্নে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশের জনগণের উন্নয়নের স্বার্থে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এলাকায় স্থায়ী শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠাকল্পে প্রয়াত মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার উত্তরসূরী হিসেবে আমাকে সিংহ মার্কায় আপনার মূল্যবান ভোট প্রদান করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাকে আবারো জয়যুক্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি। সরকারের অসহযোগিতা ও কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহলের নানামুখী বাধা সত্ত্বেও দশম জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে বিগত পাঁচ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নসহ এলাকার শান্তি প্রতিষ্ঠা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও সুষম উন্নয়নে যথাসাধ্য জোরালো রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করতে এতটুকু পিছপা হইনি।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আপনাদের মাধ্যমে রাঙ্গামাটি জেলাবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিতে চাই যে, আমি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাকে আবারো নির্বাচিত করা হলে পূর্বের মতো নিম্নোক্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নে জোরালো ভূমিকা পালন করতে সর্বদা সচেষ্ট থাকবো-
১। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান এবং এতদাঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়নে জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
২। এলাকায় জনমুখী ও পরিবেশ-বান্ধব সুষম উন্নয়নের ধারা গড়ে তোলার মাধ্যমে সুযোগ-বঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে অনুকুল পরিবেশ গড়ে তোলা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপন এবং স্থানীয়ভিত্তিক বাণিজ্য প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হবে।
৩। সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদী অপতৎপরতা, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস নির্মূলীকরণে দেশের গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল শক্তির সাথে একাত্ম হয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করা হবে।
৪। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রে নারীর সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে। নারী উদ্যোক্তা শ্রেণি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং স্বল্প ও বিনা সুদে ঋণদান কর্মসূচি গ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়া হবে। নারীদের উপর সকল প্রকার সহিংসতা ও নিপীড়ন বন্ধের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৫। আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্প গ্রহণ ও শিল্পকারখানা স্থাপনের মাধ্যমে বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। স্বকীয় সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও বিকাশে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে।
৬। রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে অনার্স ও স্নাতকোত্তর কোর্সের সংখ্যা বৃদ্ধি করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পার্বত্যাঞ্চলে কারিগরী শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে ভোকেশনাল ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়াও প্রাথমিকসহ শিক্ষার সকল ক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টি ও মানোন্নয়ন করার লক্ষ্যে ছাত্রাবাসের ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৭। কাপ্তাই হ্রদের জলসীমা নির্ধারণ, জলে ভাসা কৃষি জমির চাষাবাদ নিশ্চিত করা এবং হ্রদের পানির উচ্চতা হ্রাস-বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণসহ কৃষি ঋণের ব্যবস্থা চালু করার প্রচেষ্টা নেয়া হবে।
৮। ফলজ-বনজ বাগান সম্প্রসারণসহ উৎপাদিত ফল-মূল রক্ষণাবেক্ষণ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণের জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হবে। সহজ শর্তে কৃষি ঋণসহ জুমচাষীদের কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন, জুম চাষের সময় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের হয়রানি বন্ধের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
৯। প্রতিবন্ধীদের সমস্যাদি নিরসনে এবং জেলে-তাঁতিসহ শ্রমজীবী মানুষের সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
১০। এশিয়ার বিখ্যাত কাগজ কারখানা কর্ণফুলী পেপার মিলকে লাভজনক অবস্থায় উন্নতি করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
পার্বত্যবাসীর সাথে আমিও একান্তভাবে চাই যে, সারাদেশের মতো ২৯৯ পার্বত্য রাঙ্গামাটি আসনের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ও কোন প্রকার হস্তক্ষেপ ও বাধা ছাড়া ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে ও তাদের মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেটাই রাঙ্গামাটি জেলাবাসী যেমনি চায়, তেমনি আমিও মনেপ্রাণে ও আন্তরিকভাবে তাই প্রত্যাশা করি।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ থেকে জানা যায় যে, ২৯৯ পার্বত্য রাঙ্গামাটি আসনের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী দীপংকর তালুকদার অপপ্রচার চালাচ্ছেন যে, “রাঙ্গামাটিতে জনসংহতি সমিতি অবৈধ অস্ত্রের মাধ্যমে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৯৫% থেকে ৯৬% ভোট ডাকাতি করেছিল। ভোট ডাকাতি করে আমি বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছিলাম।” দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পার্বত্য রাঙ্গামাটি আসনে যেখানে সেসময় নির্বাচন কমিশন ও তৎকালীন রির্টানিং অফিসার তথাকথিত ‘ভোট ডাকাতি’র কোন অভিযোগ আনেননি, বরঞ্চ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছিলেন, সেখানে দীপংকর তালুকদার তথা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাঙ্গামাটি জেলা নেতৃত্বের ‘ভোট ডাকাতি’র অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। বরঞ্চ ২০১৫ সালে রাঙ্গামাটি পৌরসভা নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে ১১টি কেন্দ্রে ভোট কেন্দ্র দখল করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টের উপর হামলা করে ও বের করে দিয়ে ব্যাপকভাবে জাল ভোট প্রদান ও নজীরবিহীন ভোট ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে, যা সেসময় সংবাদ মাধ্যমে ফলাওভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। বস্তুত দীপংকর তালুকদারের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পরিপন্থী ও গণবিরোধী ভূমিকার কারণে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙ্গামাটি জেলাবাসী তাঁর বিরুদ্ধে ভোট বিপ্লব ঘটিয়েছিল। তাঁর সেই ব্যর্থতাকে ধামাচাপা দিতেই জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে দীপংকর তালুকদার এই মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য-প্রণোদিত অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন, যা নির্বাচন আচরণবিধির সরাসরি লঙ্ঘন এবং নির্বাচনী পরিবেশকে উপ্তত্ত করার সামিল বলে আমি মনে করি।
আপনাদের মাধ্যমে আমি সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, জনসংহতি সমিতি কোন ধরনের বৈধ বা অবৈধ অস্ত্রবাজি করে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে পার্বত্যবাসীকে সঙ্গে নিয়েই গণতান্ত্রিক উপায়ে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চুক্তি বিরোধী ও তাবেদারী ভূমিকা নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দীপংকর তালুকদার যতই অপপ্রচারে লিপ্ত হোক না কেন, রাঙ্গামাটি জেলাবাসী তাঁর সেই গোয়েবলসীয় অপপ্রচারে কখনোই বিভ্রান্ত হবেন না।
পরিশেষে আমি আশা করি, নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী, গণমাধ্যম কর্মী সারাদেশের সাথে ২৯৯ পার্বত্য রাঙ্গামাটি আসনেও শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে যথাযথ ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবেন। নির্বাচন আরচনবিধি সুরক্ষায় তারা সকলেই যথাযথ সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।
আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।

ঊষাতন তালুকদার
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী, সিংহ প্রতীক
২৯৯ পার্বত্য রাঙ্গামাটি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

Back to top button