রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে চতুর্থ সংঘরাজ তিলোকানন্দ মহাথেরোর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত

আইপিনিউজ বিডি: পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সাংঘিক ব্যক্তিত্ব, পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের চতুর্থ সংঘরাজ এবং “সাদা মনের মানুষ” হিসেবে পরিচিত শ্রীমৎ তিলোকানন্দ মহাথেরোর জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে সম্পন্ন হয়েছে। গত ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, বৃহষ্পতিবার শুরু হয় তিন দিন ব্যাপী জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার এই আয়োজন। রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার মগবান শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহারে শুরু হওয়া এই আয়োজনে গতকাল ছিল দ্বিতীয় দিন। এ দিন বিকেলে হাজার হাজার পূণার্থী প্রয়াত তিলোকানন্দ মহাথেরোর মরদেহ দিয়ে পুরাতন ঐতিহ্য অনুসরণ করে “গাড়ীটানা”র আয়োজন করা হয়। এতে হাজারো পূণ্যার্থী অংশ নেন এবং পরে সাজানো চিতায় মরদেহ আগুনে ভষ্মিভূত করা হয়। আজ ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, সকালে ভষ্মিভূত এই মরদেহের হাড় সংগ্রহ অনুষ্ঠানও সম্পন্ন হয়।
জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পরিচালনা কমিটির আয়োজনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চাকমা সার্কেল চীফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি প্রয়াত সংঘরাজের জীবন ও দর্শনের ওপর আলোকপাত করেন।গত বৃহষ্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে বাঘাইছড়ি উপজেলার শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহার মাঠে আয়োজিত ধর্মসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। ধর্মদেশনা প্রদান করেন মিরপুর শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো। উপস্থিত ছিলেন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্রদ্ধালংকার মহাথেরো, মালয়েশিয়ার ধর্মীয় গুরু ধম্মাজ্যোতি মহাথেরো, থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ ভিক্ষু পারা সামান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনবোধি মহাথেরো, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান, খাগড়াছড়ি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রুমান আক্তার, রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খিসা, বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমেনা মারজানসহ বিশিষ্টজনরা।

তিন দিনব্যাপী এই আয়োজনের প্রথম দিনে প্রয়াত ভদন্ত তিলোকানন্দ মহাথেরোর জীবনীগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এ সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বৌদ্ধ ভিক্ষু ও পুণ্যার্থীরা প্রয়াত এই মহান ধর্মগুরুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আজসহ বিগত তিনদিন ধর্মীয় আলোচনা, বিশ্ব শান্তি কামনায় প্রার্থনা এবং বিবিধ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথি সুপ্রদীপ চাকমা তাঁর বক্তব্যে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের পথে রয়েছে। দুই মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করে নতুন নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে। এজন্য সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাই।
তিনি বলেন, তিলোকানন্দ মহাথেরো পার্বত্য চট্টগ্রামে যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে গেছেন, তা আমাদের ধরে রাখতে হবে। যদি আমরা তা বজায় রাখতে না পারি, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ আমাদের ক্ষমা করবে না।

অনুষ্ঠানে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যোতি মহাথেরো বলেন, শ্রদ্ধেয় ভদন্ত তিলোকানন্দ মহাথেরো মহোদয় ছিলেন ধর্ম, মানবতা ও অহিংসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যাঁর জীবন ও কর্ম ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আলোকিত করে রাখবে।
উল্লেখ্য, মহাপ্রয়াণ তিলোকানন্দ মহাথেরো পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি মিয়ানমার সরকারের প্রদত্ত “অগ্রমহাপণ্ডিত” উপাধিতে ভূষিত, এটিএন বাংলা ও ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড কর্তৃক “সাদা মনের মানুষ” হিসেবে স্বীকৃত, এবং কাচালং শিশু সদনের অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২ নভেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে তার মহাপ্রয়াণ ঘটে।


