যশোরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পোড়া জনপদ পরিদর্শনে ঢাকার নাগরিক প্রতিনিধিদল

আইপিনিউজ: গত ২২ মে, ২০২৫ তারিখে যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার ডহর মশীহটি গ্রামে স্থানীয় কৃষকদল নেতা তরিকুল ইসলাম (৪৮) নৃশংসভাবে খুন হওয়ার পর সেদিনই সন্ধ্যায় সনাতন ধর্মাবলম্বী নিম্নবর্গীয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অন্তত ২০ টি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও হামলার ঘটনা ঘটে। এদের বেশির ভাগই মতুয়া সম্প্রদায়ের।
এ ঘটনার পর আজ ৩ জুন, ২০২৫; মঙ্গলবার, ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেল ঢাকা থেকে একটি নাগরিক প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধি দলে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, নারী ঐক্য পরিষদের সভানেত্রী সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য, মানবাধিকার কর্মী দীপায়ন খীসা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এর সাবেক সভাপতি দীপক শীল, অধিকার কর্মী এবং আইপিনিউজ এর নির্বাহী সম্পাদক সতেজ চাকমা।
নাগরিক প্রতিনিধি দল আক্রান্ত স্থান পরিদর্শনে গিয়ে আক্রান্ত পরিবারগুলোর সাথে কথা বলেন এবং ঘুরে ঘুরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ প্রশাসন এবং সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন। এছাড়া সেখানে উপস্থিত অভয়নগর থানার এস.আই. অনিষ চক্রবর্তীর সাথে ঘটনার বিচার ও তদন্ত বিষয়ে কথা বলেন এবং স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দীপ চক্রবর্তীর সাথে মুঠোআলাপও করেন।

সাংবাদিক ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলার সময় নিজের পর্যবেক্ষণ জানিয়ে পরিদর্শন টিমের সদস্য অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, প্রথমত যে কৃষকদল নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে সেটা খুবই নিন্দনীয় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন । এই নিন্দনীয় ঘটনার পর যে গরীব ও নিরীহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দিয়ে সর্বশান্ত করা হয়েছে তা খুবই নির্মম। আমরা লক্ষ্য করেছি হামলা ও অগ্নিসংযোগের পর এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী নিরীহ মানুষজন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আমরা প্রত্যাশা করি স্থানীয় প্রশাসন তাদের নিরাপত্তা এবং ত্রাণ দিয়ে তাদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনবেন।
নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন, আমরা দেখলাম যাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তারা এখন সর্বশান্ত। এ গ্রামের ২০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, তাদের গরু চুরি এবং কিছু গরু মারাত্মকভাবে আহত ও শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন, গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ও দোকানগুলোতে লুটপাট এবং বিপুল পরিমাণ ধান নষ্ট করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের পর্যবেক্ষণে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি আমরা লক্ষ্য করলাম সে পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা তারা পাচ্ছে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে এবং ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে সেটা খুবই নগণ্য ৷ আমরা আশা করি প্রশাসন এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপন করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবেন৷
এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িঘর পরিদর্শনের পর হত্যাকান্ডের শিকার কৃষকদল নেতা তরিকুল ইসলামের বাড়িঘরও পরিদর্শন করেন নাগরিক প্রতিনিধি দল। সেখানে নিহতের ভাই এবং পরিবারের সদস্যদের সাথেও কথা বলেন এবং মতবিনিময় করেন।
এরপর এক পর্যবেক্ষণে অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, আমাদের মনে হয়েছে এ হত্যাকান্ড ক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব কেন্দ্র করে। তবে এ হত্যাকান্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য নিরীহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর অগ্নিসংযোগ ও বাড়িঘরে লুটপাট চালানো হয়েছে। আমরা এ হত্যাকান্ডের সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবি করি এবং একই সাথে নিরীহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে যারাই জড়িত থাকুক তাদেরকে আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে প্রতিনিধিদলেন সদস্য নারী ঐক্য পরিষদের সভানেত্রী সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের বিগত ৫৩ বছরে সবসময় ক্ষমতাবান জনগোষ্ঠী সবসময় সংখ্যালঘুদের টার্গেট করেছে। ক্ষমতার পালাবদলে কিংবা ক্ষমতা ও আধিপত্যের দ্বন্দ্বে ভুক্তভোগী হয় জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। আমরা আশা করবো আক্রান্ত পরিবারগুলোর নিরাপত্তা, বিচার ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানে প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করবে ৷