জাতীয়

মিরনজিল্লার হরিজন সম্প্রদায়কে পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ না করার আহ্বান ৬০ বিশিষ্টজনের

আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): দেশের ৬০ জন নাগরিক ঢাকা (দক্ষিন) সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক মিরনজিল্লার হরিজন সম্প্রদায়কে পূনর্বাসন ব্যতিরেখে উচ্ছেদ করার চেষ্টার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সেই সাথে বিষয়টি মানুষের জীবনের স্বাধিনতা এবং মানবাধিকারের বিষয়টি বিবেচনা করে মিরনজিল্লা হরিজন সম্প্রদায়কে পূর্নবাসন ছাড়া উচ্ছেদ না করার দাবি জানিয়ে আজ বৃহষ্পতিবার (১৩ জুন) বিবৃতি প্রদান করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়,  “আমরা গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগের সাথে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জেনেছি যে, ঢাকা (দক্ষিন) সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মিরনজিল্লা কলোনিতে ৩ ও ৪ জুন উচ্ছেদ অভিযান চার প্লাটুন পুলিশ চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছিল। ঐ নির্ধারিত দিনে তারা কিছু করেনি। কিন্তু গত ৯ জুন বেলা এগারটার দিকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ নিয়ে ঐ এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গেলে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন বাধা দেন। কর্তৃপক্ষ একটি বাউন্ডারী দেয়াল ও কয়েকটি স্থাপনা ভেঙ্গে ঐদিনের মতো ফিরে আসে। এর পূর্বে ৬ জুন, ২০২৪ তারিখ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মিরনজিল্লা হরিজন পল্লী উচ্ছেদের প্রতিবাদে বংশালের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের আগা সাদেক সড়কে কলোনির সামনে ‘বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ’ মানববন্ধনের আয়োজন করে। তারা সমস্বরে বলেছেন- বংশালের এই পল্লী ঘিরে ৪০০ বছরের পুরোনো বসতি। যেখানে কয়েক হাজার মানুষ গাদাগাদি করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। চলমান এই অবস্থার এখান থেকে উচ্ছেদ হলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব, মেয়রের এই সিদ্ধান্ত চরম মানবাধিকার লঙ্খনের সামিল বলেও মনে করেন হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ।“

বিবৃতিতে আরো বলা হয় যে, “যদিও বস্তি উচ্ছেদ মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে পুনর্বাসন ছাড়া কোন বস্তি বা কলোনী উচ্ছেদ করা যাবে না। কারণ সংবিধানে জনগনের বাসস্থানের অধিকার রাষ্ট্র পরিচালনার মুলনীতির অন্তর্ভুক্ত। সেই সাথে সুপ্রীম কোর্ট অভিমত দেয় যে বাস্তস্থানের অধিকার তার জীবন ধারনের অধিকারের সামিল যা আমাদের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত।”

কলোনিতে বসবাস করা লোকজনের বরার দিয়ে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, “৪০০ বছর আগে তাদের পূর্বপুরুষদের এই অঞ্চলে পরিচ্ছন্নতা কাজের জন্য আনা হয়। বর্তমানে সাত শতাধিক পরিবার এই কলোনিতে গাদাগাদি করে বসবাস করছে। তাদের মধ্যে পাঁচ শতাধিক পরিবারের সদস্য সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত। বাদবাকি দুই শতাধিক পরিবারের সদস্যের সবাই কোনো না কোনো সময়ে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত ছিলেন। নগরবাসীর সেবার জন্য তাঁদের আনা হয়েছিল। তাঁরা স্বেচ্ছায় এসে ঢাকা শহরে গেঁড়ে বসেননি। এমন বাস্তবতায় অবৈধ বলে সিটি করপোরেশনে কর্মরতদের বাইরে অন্যদের উচ্ছেদ করলে পথে নামতে হবে।”

বিবৃতি দাতারা আরো বলেন, “হরিজন সম্প্রদায়ের সবার জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী-অস্থায়ী ঠিকানা এই কলোনি। হরিজন সম্প্রদায়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ২ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর মিরনজিল্লা হরিজন সিটি কলোনিভুক্ত জায়গায় বসবাসকারীদের জন্য আবাসিক ভবন ছাড়া কোনো বাণিজ্যিক ভবন কিংবা মার্কেট না করার অনুরোধ জানানো হয়। ওই বছরের ৫ জুলাই সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এক চিঠিতে সাবেক দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে কলোনিতে বসবাসকারীদের চাকরি ও আবাসন সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানান। ২০২২ সালের ১৬ মে হরিজন সেবক সমিতির পক্ষ থেকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র বরাবর দেওয়া চিঠিতে কলোনির আবাসন সংকট সমাধানে পাঁচটি ১০ তলা ভবন নির্মাণের আবেদন করা হয়। একই বছরের ১৬ মে দক্ষিণ সিটির ৩৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আওয়াল হোসেন মেয়র বরাবর দেওয়া চিঠিতে মিরনজিল্লা হরিজন সুইপার কলোনিতে ১০ তলা বিশিষ্ট পাঁচটি ভবন নির্মাণের অনুরোধ জানান। (সুত্র: কালবেলা, ৬ জুন, ২০২৪)”

 

বিবৃতিদাতারা মনে করে বর্তমানে দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক কাঁচাবাজার করার নামে হরিজনদের কলোনির একাংশ গুঁড়িয়ে দেয়া শুধু অমানবিক নয়, তা চরম মানবাধিকার লংঘেনের সামিল।

বিবৃতিদাতারা আরো বলেন, “সর্বোপরি মনানীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে ঘোষণা দিয়েছেন, বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না বা আবাসন থেকে বঞ্চিত হবেনা, সেখানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) পুরান ঢাকার বংশালের আগা সাদেক রোডের মিরনজিল্লার সুইপার কলোনির সংখ্যালঘু হরিজন সম্প্রদায়কে গৃহহারা করতে উঠে পড়ে লেগেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কি প্রধানমন্ত্রীর এই অঙ্গীকার মানার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেনা? তাই নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আমরা দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে দাবি জানাচ্ছি কোন অবস্থায়ই মিরনজিল্লার হরিজন সম্প্রদায়কে পূনর্বাসন না করে উচ্ছেদ করা যাবে না। এ বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত অঙ্গীকার বাস্তবায়নে তার হস্তক্ষেপ আশা করছি।”

একই সাথে সরকার ও সিটি করপোরেশনকে বিবৃতিদাতারা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, এই সরকার এস ডি জি বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ, যার মূল কথাই হচ্ছে কাউকে পিছনে ফেলে রাখা যাবে না, আর প্রত্যেক নাগরিকের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন- সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা; খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি; রাশেদা কে চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, গণস্বাক্ষরতা অভিযানও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা; ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি; অ্যাড. জেড আই খান পান্না, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ; অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান নির্বাহী, বেলা ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ড. স্বপন আদনান, ভিজিটিং রিসার্স ফেলো, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়; এড. জে. আই খান পান্না, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও চেয়ারপার্সন, আসক; ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, নির্বাহী পরিচালক, রীব; ড. শাহদ্বীন মালিক, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অনারারি নির্বাহী পরিচালক, ব্লাস্ট; মাকসুদুল হক, সংগীত শিল্পী; ড. ফস্টিনা পেররা, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ড. আসিফ নজরুল, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ড. মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ড. জোবাইদা নাসরীন কণা, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ড. সীমা জামান, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; তাপস কুমার দাস, চেয়ারম্যান, আইন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; ড. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী; আবুল হোসেন, কেন্দ্রিয় নেতা, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি; রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; শাহেদ কায়েস, কবি ও মানবাধিকার কর্মী; সালেহ আহমেদ,সাধারণ সম্পাদক, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন; কাজল দেবনাথ, প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ; শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এসোসিয়েশ ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি); গীতি আরা নাসরিন, অধ্যাপক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ড. আকমল হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অ্যাড. তবারক হোসেইন আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; এড. জামিউল হক ফয়সাল, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; হরেন্দ্রনাথ সিংহ, ছাত্র ‍ও যুব বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম; পারভেজ হাসেম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; মনিন্দ্র কুমার নাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ; ফিরদৌস আজিম, অধ্যাপক, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়; রাহনুমা আহমেদ, কবি ও লেখক; তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; রেজাউর রহমান লেনিন, গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী; ফারাহ তানজীন তিতিল, শিক্ষক, অর্থনীতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়; ড. মির্জা তাসলিমা সুলতানা অধ্যাপক, নৃ-বিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; রেজাউল করিম চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ট্রাস্ট; মাইদুল ইসলাম, পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, পেন্সেলভিয়া, যুক্তরাষ্ট্র; সাঈদা গুলরুখ, সাংবাদিক; সায়মা খাতুন, নৃবিজ্ঞানী ও প্রাক্তন সহযোগি অধ্যাপক, জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; রোজিনা বেগম, গবেষক ও অধিকারকর্মী; জাকির হোসেন, নির্বাহী পরিচালক, নাগরিক উদ্যোগ; অ্যাড. সাইদুর রহমান, প্রধান নির্বাহী, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন; নুর খান, মানবাধিকার কর্মী; অধ্যাপক ড. নোভা আহমেদ, শিক্ষক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়; মাহবুবা আক্তার, পরিচালক, ব্লাস্ট; ব্যারিস্টার আশরাফ আলী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ব্যারিস্টার শুভ্র চক্রবর্তী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ব্যারিস্টার শাহাদাত আলম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; দীপায়ন খীসা, কেন্দ্রিয় সদস্য, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম; মেইনথেন প্রমীলা, অর্থ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম; হানা শামস আহমেদ, আদিবাসী অধিকার কর্মী; অরূপ রাহী, সাংস্কৃতিক কর্মী; মুক্তাশ্রী চাকমা, কোর গ্রুপ মেম্বার, সাঙ্গাত।

 

Back to top button