জাতীয়

‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জাতীয় নেতা, তাকে সার্বজনীন ভাবেই স্মরণ করা উচিত’- আলোচনা সভায় বক্তারা

শ্যাম সাগর মানকিন:’মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা কেবল আদিবাসী বা পাহাড়িদের নয়, তিনি একজন জাতীয় নেতা। তাকে সার্বজনীন ভাবেই স্মরন করা উচিত। তার সংগ্রাম ও আদর্শ পাহাড়ের আদিবাসী ছাড়াও দেশের আপামর মেহনতি মানুষ ও নারীদের পক্ষে ছিলো।’ মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৭৯ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আদিবাসী ফোরামের এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আজ রাজধানীর বাংলামটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মিলনায়তনে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। তিনি বলেন ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা চেয়েছিলেন। যেখানে সব জাতির মানুষের সমান অধিকার থাকবে। এমনটি যে চায় সেতো আসলে বড় দেশপ্রেমিক। এমন দেশপ্রেমিক, হতে পারেন তিনি পাহাড়ের আদিবাসী কিন্তু তিনি আমাদের জাতীয় নেতা।’

তিনি আরো বলেন, ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাকে আমার কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। আমি তাকে একজন সৎ, অকপট, দৃঢ় ও সজ্জন মানুষ হিসেবেই চিনি। তিনি বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন।’

ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য তার বক্তব্যে বলেন, ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা আদিবাসীদের জীবন, জীবনাচার অস্তিত্বের স্বীকৃতির জন্য তার জীবন উৎসর্গ করে গেছেন।’

‘পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ আজ বিচারহীন এক সংকটময় সময়ে বসবাস করছে। এমন সময়ে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার আদর্শ ও সংগ্রামকে জানা খুব প্রাসঙ্গিক। তিনি আজীবন গণমানুষের জন্য লড়াই করে গেছেন। তিনি কেবল জুম্ম বা আদিবাসী নেতা নন, তিনি আমাদের জাতীয় নেতাও’ বলেও জানান বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা একাধারে শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও রাজনীতিবিদ। শিক্ষকতার পেশা গ্রহণের মধ্যে দিয়ে তিনি যেমন একদিকে শিক্ষা বিস্তার করার কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন তেমনি সমাজ সংস্কারক হিসেবে ঘূণে ধরা সামন্তীয় সমাজব্যবস্থা, পশ্চাৎপদ সমাজব্যবস্থাকে বদলানোর জন্য নিরলস সংগ্রাম করে গিয়েছিলেন।

‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সারাদেশের মানুষের জন্য কথা বলে গেছেন। তিনি কৃষক-শ্রমিক-জনতা গণমানুষের কথা বলেছিলেন। তার জীবন ও কাজ থেকে বর্তমানের সকলের শিক্ষা নেয়া উচিত’ বলে বক্তব্য রাখেন জনসংহতি সমিতির অন্যতম নেতৃত্ব ও সাংসদ ঊষাতন তালুকদার।

তিনি আরো বলেন, ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার যে চাওয়া সে চাওয়া আজও পূরণ হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মধ্যে দিয়ে তার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের যে চেষ্টা সেটাও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো অবাস্তবায়িত থাকার ফলে ভেস্তে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আদিবাসীদের দেশান্তরী হতে বাধ্য করা হচ্ছে।’

‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা বলতেন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকতে হলে গর্বের সহিত বেঁচে থাকতে হবে। উচ্চমার্গীয় চিন্তা আর সাধারণ জীবনযাপন ছিল তার জীবনাদর্শ’ বলেও ঊষাতন তালুকদার উল্লেখ করেন।

কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার মতন মানুষকে কেবল একটা জাতিগোষ্ঠীর মানুষ স্মরণ করছে এটা দুঃখজনক। তার কাজের জন্য দেশের সমস্ত মানুষেরই স্মরণ করা উচিত।’

‘পাহাড়ে ভাতৃঘাতী সংঘাত আমরা দেখি। গত কয়েক মাসে আমরা অনেককে হারিয়েছি। যারা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাকে আদর্শ হিসেবে ধারণ করেন তাদের আত্মসমালোচনা করার সময় এসেছে’ বলেও মন্তব্য করেন বিশিষ্ট এই সাংবাদিক।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘সামন্তকালীন সময়েও মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা মানবিক সমাজের কথা বলেছিলেন, শিক্ষা বিস্তারের কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন। এম এন লারমার দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ছিল। এম এন লারমার চেতনা, তার আদর্শ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে এম এন লারমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।’

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য মেইনথিন প্রমীলার সঞ্চালনায় আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং এর সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. খায়রুল চৌধুরী প্রমুখ। এছাড়াও তরুণ প্রজন্মের ভাবনায় এম এন লারমা শীর্ষক প্রারম্ভিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সতেজ চাকমা এবং এম এন লারমা স্মরণে গান পরিবেশন করেন এএলআরডির জান্নাত-ই ফেরদৌসী।

Back to top button