জাতীয়

মানবাধিকারের ধ্বজাধারীরা মানবাধিকার নিয়ে কথা বললেও নারীর অধিকার দিতে চায়না: পঙ্কজ ভট্টাচার্য

চিরন্তন রাজনৈতিক সমস্যা তথা ফ্যাসিবাদী শাসনের মধ্যে আদিবাসী নারী ও শিশুরা যে অবস্থা থাকার কথা পাহাড়ের আদিবাসী নারী ও শিশুরাও একই অবস্থা বলে মন্তব্য করেছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ এবং ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক ও ‘গার্লস নট ব্রাইড বাংলাদেশ’ এর অংশগ্রহনে আদিবাসী নারীদের মানবাধিকার বিষয়ক আয়োচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, মানবাধিকারের ধ্বজাধারী হিসেবে পরিচিত যারা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেন তারাও নারীদের অধিকার দিতে চাইনা। সার্বিকভাবে নারীরা উপেক্ষিত বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন এই বামনেতা।

তিনি আরো বলেন, ‘রাষ্ট্রে যদি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী থাকে তবে সেখানে বৃহৎ নৃ-গোষ্ঠীও থাকবে। আর এ বৃহৎ নৃগোষ্ঠী যদি বাঙালি হয় তাহলে বাঙালি একটি ফ্যাসিস্ট জাতি। সে অবস্থায় আদিবাসী নারীর কী রকম অবস্থায় থাকতে পারে সে অবস্থায় আছে বাংলাদেশের আদিবাসী নারীরা।’

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সুফিয়া কামাল ভবনের আনোয়ারা বেগম, মুনিরা খান মিলনায়তনে আজ (১২ নভেম্বর,২০১৯ ইং) বিকাল ৩.৩০ ঘটিকায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা: ফওজিয়া মোসলেম এর সভাপতিত্বে এবং মহিলা পরিষদের এডভোকেসি এন্ড লবি’র পরিচালক জনা গোস্বামী’র পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আন্দোলন সম্পাদক রেখা চৌধুরী।

মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরা। তাঁর মূল বক্তব্যে তিনি বলেন, সামরিকায়ন এবং বিভিন্ন দ্ব›দ্ব সংঘাতেও আদিবাসী নারী ও কন্যা শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে। অথচ আদিবাসী নারীরা অপরাপর নারীদের মত নিজ নিজ কমিউনিটি উন্নয়নের জন্য যেমন অবদান রাখে তেমনি টেকসই সম্পদ ব্যবস্থাপনা, খাদ্য উৎপাদন এমনকি আদিবাসীদের চিরায়ত জ্ঞানের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা, সাম্প্রদায়িক সম্পীতি রক্ষা তথা শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

তিনি আরো দাবী করেন, বাংলাদেশে জেন্ডার বাজেটে আদিবাসী নারীদের জন্য পৃথক কোনো বরাদ্দ থাকে না। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ কার্যাদি বিভাগ থেকেও আদিবাসী নারীদের ঐতিহ্যগত অর্থনৈতিক কাজে ও আদিবাসী নারীদেও দক্ষতা বৃদ্ধিতে আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিশেষ বরাদ্দ থাকে না। এছাড়া তিনি আদিবাসী নারীদের প্রন্তিক অবস্থান থেকে তুলে আনার জন্য সরকারের কাছে ১২ দফা সুপারিশ প্রণয়ন করেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক রাখী দাশ পুরকায়স্থ বলেন, আদিবাসী নারীর সংকটে আদিবাসী পুরুষকে যেমন দাঁড়াতে হবে তেমনি সামগ্রিকভাবে নারীর সংকটে পুরুষ দাঁড়াবে আর পুরুষের সংকটে দাঁড়াবে নারী এভাবেই সামগ্রিক সংগ্রামের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্যেও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব সঞ্চনা চাকমা তাঁর বক্তব্যে পাহাড়ের পরিস্তিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘পাহাড়ে সাম্প্রতিক জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে যে অবস্থা ছিল নির্বাচনের পরে তা আরো অবনতি হয়ে অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় আদিবাসী নারী ও কন্যা শিশুরা আরো বেশি অনিরাপদ জীবন যাপন করছে বলে দাবী করেন এই নারী নেত্রী।

আদিবাসী তরুণ ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মৃক্ত আলোচনা ও মতামতের শেষে সমাপনি বক্তব্যে মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, সরকার নানাভাবে তাঁর কর্তব্যকে অস্বীকার করছে। আমরা এ রাষ্ট্রযন্ত্রের পরিবর্তন চাই।এছাড়া বক্তারা পাহাড়ের আদিবাসী নারীদের মানবাধিকারের সুরক্ষায় পার্বত্য চুক্তি অবিলম্বে বাস্তবায়ন ও আদিবাসী পরিচয়ের স্বীকৃতির মাধ্যমে তাদের উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে বলে জোড় দাবী জানান।

Back to top button