মহান সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৬৯তম বার্ষিকীতে ঢাকায় আলোচনা সভা
ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৬৯ তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাকায় এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ৩০ জুন রবিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ফোক সেন্টারে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ বৃহত্তর ঢাকা কমিটি, জনউদ্যোগ ও আদিবাসী যুব পরিষদের যৌথ উদ্যোগে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ বৃহত্তর ঢাকা কমিটির দপ্তর সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক নিরলা মার্ডির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ বৃহত্তর ঢাকা কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হরেন্দ্রনাথ সিং, সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক বিভূতী ভূষণ মাহাতো, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঠাকুরগাঁও জেলার সাধারণ সম্পাদক বিশুরাম মুর্মু, আদিবাসী যুব ফোরামের সাবেক সভাপতি অনন্ত ধামাই, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ, ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলমেন্টের (আইইডি) সিনিয়র কোঅর্ডিনেটর জ্যোতি প্রকাশ চট্টোপাধ্যায়, জনউদ্যোগের সদস্য সচিব তারিক হোসেন মিঠুল, শান্ত সরেন, নয়ন মাহাতো প্রমুখ।
সভার শুরুতে সাঁওতাল বিদ্রোহসহ সকল মুক্তি সংগ্রামের শহিদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এসয় বক্তারা বলেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামের অংশ হিসেবে ১৮৫৫ সালের মহান সাঁওতাল বিদ্রোহ এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ভারতীয় উপমহাদেশে এটিই সাম্রাজ্যবাদবিরোধী প্রথম সশস্ত্র গণসংগ্রাম। সাঁওতাল বিদ্রোহীহের দেশপ্রেমিক সংগ্রামীদের সেদিনের মহান আদর্শ ও অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ পরবর্তীকালে ভারতবর্ষের জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করেছিল। জুগিয়েছিল সাহস ও উদ্দীপনা। মুক্তিকামী মানুষের কাছে আজও তা অনুপ্রেরণার উৎস।
আলোচনা সভায় বক্তারা আরো বলেন, ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র সংগ্রাম করেন সাঁওতালরা। এটি ছিল মূলত কৃষকদের সংগ্রাম, সাঁওতালদের ব্যাপক অংশগ্রহণের কারণে এটি সাঁওতাল বিদ্রোহ নামে পরিচিতি পায়। তখন সাঁওতালরা প্রতিরোধ গড়ে না তুললে হয়ত উপমহাদেশে স্বাধীনতার চেতনার উন্মেষ হতো না।
বক্তারা আরও বলেন, আদিবাসীরা ঐতিহ্যগত সাংস্কৃতিক ও নৃতাত্ত্বিক বিষয়গুলো ধরে রেখেছেন। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আদিবাসীদের সাঁওতাল বিদ্রোহ থেকে শিক্ষা নিয়ে আত্মসচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বক্তারা গৌরবময় সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাসকে পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
সভাপতির বক্তব্যে নিরলা মার্ডি বলেন, ব্রিটিশরা স্থানীয় ভূস্বামীদের সহায়তায় প্রান্তিক কৃষকদের ভূমি কেড়ে নিতে চেয়েছিল। সাঁওতালদের নেতা দুই ভাই সিধু-কানুর নেতৃত্বে তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল। সেদিন ব্রিটিশদের ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছিল মেহনতি কৃষকরা। অত্যাচারের সেই ধারা আজও অব্যাহত। ভূমিদস্যুরা আজও সক্রিয়। ভূমি দখলসহ সব প্রবঞ্চনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৬৯ তম বার্ষিকীকে সামনে রেখে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ঢাকা ছাড়াও বগুড়া, নাটোর, নওগাঁ, রংপুরসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় রেলী এবং আলোচনা সভার আয়োজন করে।