জাতীয়

মন্ত্রীর আশ্বাস প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষকদের অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

সরকারি অনুমোদনে কার্যক্রম চালানো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্তির ব্যবস্থা নিতে অর্থমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়ার কথা জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আন্দোলনরত শিক্ষকদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানালেও অনশনে থাকা শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

এমপিওভুক্তির সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিনয় ভূষণ রায়।

সরকারি অনুমোদনে কার্যক্রম চালানো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্তির দাবিতে গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন দেশের বিভিন্ন এলাকার কয়েকশ শিক্ষক। গত রোববার সকাল থেকে তারা আমরণ অনশন শুরু করেন।

তাদের অনশন ভাঙাতে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশনস্থলে যান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ডজনখানেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।

পরে আন্দোলনরত শিক্ষকদের নেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন,

“গত কয়েক মাস ধরে আমি অর্থমন্ত্রীকে কনভিন্স করার চেষ্টা করছি, বলেছি নীতিমালা করে দেন ওটা মেনেই কাজ করব। রোজ চাপ দিচ্ছি, রোজ দেখা করছি। গতকাল (সোমবার) নীতিমালা করে দিয়ে বলেছি এটা দিলাম, আপনারা দেখেন। আপনারা কষ্টে আছেন, আমিও কষ্ট পাচ্ছি।

“গত রাতে আমি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি সম্মতি দিয়েছেন, এমপিওভুক্ত যারা হননি তাদের এমপিওর ব্যবস্থা করা হবে। এটা আমাদের বিজয়, প্রথম স্বীকৃতি। নীতিমালা বাস্তবায়ন করার ব্যবস্থা নেব, কাজ শুরু করেছি।”

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমি কথা দিচ্ছি এমপিওভুক্তির দাবি পূরণ করে দেব। … টাকা, পয়সা, অর্থের ব্যাপার আছে। অর্থমন্ত্রী রাজী হয়েছেন, আমরা কাজ এগিয়ে রেখেছি।”

আন্দোলনে থাকা শিক্ষকরা এ সময় ‘কবে, কবে’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। কেউ কেউ এ বছরের শুরু থেকেই এমপিওভুক্তির দাবি কার্যকরের দাবি জানান। অনেকে স্লোগান দেন- ‘এমপিও না নিয়ে/ঘরে ফিরে যাব না’, ‘শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা/মানি না মানব না।’

হট্টগোলের এক পর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নীতিমালা করে এমপিওভুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করার জন্য সময় লাগবে। শিক্ষকরা যেন আর এভাবে কষ্ট না করে বাড়িতে ফিরে যান।

“আপনারা শিক্ষা পরিবারের সদস্য, আমি একজন কর্মী। আপনারা খুবই কষ্ট করছেন, দুঃখিত। আপনারা কয়েক দিন ধরে এখানে আছেন। শিক্ষকরা আমাদের মাথার মনি, সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি, নিয়ামক শক্তি। শিক্ষকদের প্রতি অবেহলা কেউ গ্রহণ করে না।”

মন্ত্রীর বক্তব্যের পর শিক্ষকরা হৈ-হল্লা শুরু করলে সচিব সোহরাব বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী (শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) বাছাই করে এমপিও দেওয়া হবে, একটু সময় লাগবে।

এরপর শিক্ষক নেতা বিনয় ভূষণ মাইকে বলেন, “শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য আমরা প্রত্যাখ্যান করলাম। মন্ত্রী আমাদের সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস দিতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আমরা আমরণ অনশন চালিয়ে যাব।”

শিক্ষক নেতার মুখ থেকে এই ঘোষণা পেয়ে আরও জোরে স্লোগান ধরেন শিক্ষকরা। মন্ত্রী আসার পরও যে শিক্ষকরা শুয়ে ছিলেন, তারাও কয়েকজন দাঁড়িয়ে স্লোগান ধরেন।

এমন পরিস্থিতিতে আর কোনো কথা না বলে কর্মকর্তাদের নিয়ে গাড়িতে ওঠেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি চলে যাওয়ার পরও বেশ খানিকক্ষণ শিক্ষকদের স্লোগান চলতে থাকে।

সবশেষ ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করে সরকার। এরপর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি বন্ধ আছে।

শিক্ষামন্ত্রী বলে আসছেন, সরকারের কাছ থেকে অর্থ পেলে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে তাদের কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সেই অর্থ দিচ্ছে না।

এমপিও নিয়ে এর আগে জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্যদের তোপের মুখেও পড়তে হয়েছে শিক্ষামন্ত্রীকে।

Back to top button