মনোরঞ্জন হাজং ন্যায় বিচার বঞ্চিত হচ্ছেনঃ আইপিনিউজ এর আলোচনায় বক্তারা
বিশেষ প্রতিবেদনঃ মনোরঞ্জন হাজং ন্যায় বিচার বঞ্চিত হচ্ছেন এবং এই ঘটনাটি প্রিন্ট মিডিয়ায় যেভাবে এসেছে সেভাবে ইলেকট্রিক মিডিয়াতেও আরো বেশি এটি নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. সাদেকা হালিম। গতকাল বৃহষ্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) ‘সীমান্ত প্রহরী মনোরঞ্জন হাজংয়ের জন্য ন্যায় বিচার’ শিরোনামে আইপিনিউজ আয়োজিত এক অনলাইন আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ড. সাদেকা হালিম আরো বলেন, যারা অনেক বেশি ক্ষমতাবান, ক্ষমতা যন্ত্রের কাছাকাছি আছেন, রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান বা পেশাগতভাবে ক্ষমতাবান, তারা যখন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলছেন তখন যে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই সে ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ এ ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হলে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, মনোরঞ্জন হাজং প্রতিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, উনার মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, উনার বিচার পাবার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। যারা বলেন বাংলাদেশে আইনের শাসন আছে তাদের এই বিষয়ে সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল। মহুয়া (মনােরঞ্জন হাজং এর মেয়ে) মামলা করতে গেছেন বলে কোথা থেকে চাপ আসছে কেন চাপ আসছে সে বিষয়গুলো তদন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করেন এই আইনজীবি। তাছাড়া মামলা নিতে বিলম্ব হওয়ার ঘটনাটিও আলাদা তদন্তের আওতায় আনা দরকার বলেও মনে করেন তিনি।
আলোচনায় যুক্ত হয়ে নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন, “যারা দুর্বল তাদের জন্য বিচার এখন অনেকটাই বন্ধ। যিনি দূর্বল তিনি যদি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর হন,হাজং জনগোষ্ঠীর হন তখন দুর্বলতা দ্বিগুণ হয়ে যায়।মহুয়া হাজংকে মামলা না করতে এক প্রকার হুমকি দেয়া হচ্ছে।
মনোরঞ্জন হাজংয়ের বিষয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, অনেক সময় অনেক বড় বড় ভূমিদস্যু পত্রিকার মালিক হয়ে উঠে, যেন তার ভূমিদস্যুতার খবর, তার অপরাধের খবর গণমাধ্যম প্রকাশ করতে না পারে কিংবা সরকারকে এক ধরণের চাপে রাখা যায়। বাংলাদেশ সব মানুষের দেশ হয়ে উঠতে পারেনি এবং তার উদাহরণ মহুয়া হাজং এবং তার বাবা এই মনোরঞ্জন হাজং। এই ঘটনা একটা সীমাহীন রাষ্ট্রীয় অবিচারের চূড়ান্ত নমুনা, যার ফলে আসামির নাম জানার পরও বলা হচ্ছে অজ্ঞাতনামা এবং উল্টো ভিকটিমের নামে জিডি করা হয়েছে।
মনোরঞ্জন হাজং এর সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য সোহেল হাজং বলেন, গতকাল (২২ ডিসেম্বর) বনানী থানা থেকে ওসি তদন্ত দেখা করতে এসেছিলেন এবং পরিবারের সাথে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন তদন্ত রিপোর্ট এখনো কোর্টে জমা দেয়া হয়নি, কবে জমা দেয়া হবে তাও তিনি জানেন না। মনোরঞ্জন হাজংয়ের দুই পা থেতলে গিয়েছে। ডান পা কেটে ফেলতে হয়েছে, বাম পায়ের অবস্থাও খুবই খারাপ। এমনকি বাম পা কেটে ফেলা হতে পারে বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন। এ অবস্থায় রোগী স্ট্রোক করেছিলেন এবং পরবর্তী অস্ত্রোপচার করার মতো অবস্থায় তিনি নেই।
আলোচনায় অংশ নিয়ে মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, বাংলাদেশের কোন কিছু স্বাভাবিক গতিতে চলছে না সেটি বলা যায় বিচারের ক্ষেত্রে,পুলিশি তৎপরতার ক্ষেত্রে। একটি ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য যে প্রক্রিয়াগুলোর কথা আমরা শুনছি, সেই কর্মকান্ডের সাথে বিচারপতির যদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা থাকে তাহলে তারও বিচার হওয়া দরকার।
উল্লেখ, গত ২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের চেয়ারম্যানবাড়ী এলাকায় ইউটার্নে একটি দ্রুতগতির বিএমডব্লিউ গাড়ির ধাক্কায় আহত হন মনোরঞ্জন হাজং। পরে তাঁকে প্রথমে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করে তাঁর ডান পা বাদ দেওয়া হয়। এরপর তাঁকে বারডেম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ ঘটনায় মনোরঞ্জন হাজং এর মেয়ে পুলিশ সার্জেন্ট মহুয়া হাজং মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। উল্টো গাড়ি চালক বিচারপতি রেজাউল হাসান এর ছেলে সাইফ হাসান থানায় জিডি করে মনোরঞ্জন হাজং এর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে নাগরিক প্রতিবাদ উঠলে পরে পুলিশ মহুয়া হাজং এর মামলা গ্রহন করে। তবে এই মামলায় আসামিকে ‘অজ্ঞাত’ হিসেবে দেখানো হয়। এতে নাগরিক সমাজের বিভিন্ন পর্যায় থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়।