জাতীয়

মধুপুর বনের গারো ও নাহার পুঞ্জির খাসিয়াদের উচ্ছেদ বন্ধের দাবিতে মানব বন্ধন

আইপিনিউজ ডেস্কঃ মধুপুর বনের গারো ও নাহার পুঞ্জির খাসিয়াদের উচ্ছেদ বন্ধের দাবিতে ঢাকায় মানব বন্ধন করেছে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন। ২৪ জুলাই শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানব বন্ধন আয়োজনকারী অন্যান্য সংগঠনসমূহ হচ্ছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা, আদিবাসী পরিবেশ আন্দোলন, জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ, চানচিয়া, আজিয়া, আচিক মিচিক সোসাইটি, কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ,বাগাছাস, গাসু, আদিবাসী যুব ও ছাত্র পরিষদ, কাপেং ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ বানাই উন্নয়ন সংগঠন, আইপিডিএস, মিচিকরাংনি, ডব্লিউএসজেএস, খাসি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন।
মানব বন্ধনে সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী ফোরমের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। সংহতি বক্তব্য রাখেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, নাট্যকার মামুনুর রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মেসবাহ কামাল, রোবায়েত ফেরদৌস, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারাণ সম্পাদক সালেহ আহাম্মেদ, গারো ক্রেডিট ইউনিয়নের সভাপতি জেভিয়ার স্কু, বাগাছাস সভাপিত সুবিট রখো, গাসু সভাপতি ডেনি দ্রং এবং আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি হরেন্দ্রনাথ সিং, চানচিয়ার সমন্বয়কারী আন্তনী রেমা, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি সুমন মারমা প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, আদিবাসীরা সত্যি কঠিন সময় পার করছে এখন। সরকারি প্রশাসনের একদল দুর্নীতিবাজ আমলা ও ভূমিগ্রাসী চক্র মিলেমিশে আদিবাসীদের আত্ম-পরিচয়ের সংকট তৈরি করে এখন আদিবাসীদের নিজভূমি থেকে উচ্ছেদের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। স্মরণাতীত কাল থেকে টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চলে ২৫ হাজারের অধিক গারো, কোচ, বর্মন ও অন্যান্য আদিবাসীরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। এই আদিবাসীরাই পরম মমতায় বন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করেছিল। সরকার ও বনবিভাগ বিভিন্ন সময় বন ও পরিবেশ ধবংসকারী মুনাফামুখি প্রকল্প গ্রহণ করে এই প্রাকৃতিক বনকে ধ্বংস করা হয়েছে। উডলট ও রাবার বাগানের নামে প্রাকৃতিক শাল বন উজাড় হয়ে গেছে। বক্তারা আরো বলেন, বনের ভেতরে বিভিন্ন স্থাপনা, ন্যাশনাল পার্ক, পিকনিক স্পট, বিমান বাহিনীর ফারারিং রেঞ্জ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করে এই প্রাকৃতিক বনের সর্বনাশ করা হচ্ছে। অন্যদিকে আদিবাসীদের নানা মিথ্যা মামলায় হয়রানিসহ হত্যা করা হচ্ছে বলে মানব বন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০০৪ সালে বিশাল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আদিবাসীরা ইকো-পার্ক প্রকল্প বাতিল করতে সরকারকে বাধ্য করেছিল। ইকো-পার্ক আন্দোলনে পিরেন স্নাল জীবন দিয়েছিলেন। বক্তারা আরো বলেন, সম্প্রতি ২০ ধারা জারী করে বন বিভাগ গ্রাম-বনাঞ্চল-স্কুলঘর-মসজিদ-মন্দির-সমাধিক্ষেত্র-হাসপাতাল সবকিছুকেই রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা করা হয়েছে গত ফেব্রুয়ারি মাসে। জনগণকে না জানিয়ে গোপনে এই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। আদিবাসীরা এই খবর জেনেছে মে মাসে। সেই থেকে মধুপুরের গারো- কোচ-বর্মন ও সাধারণ জনগণ অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

মানব বন্ধনে নেতৃবৃন্দ বলেন, অন্যদিকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের নাহার পুঞ্জির ৭০০ খাসিয়া পরিবারকে গত ৩০ মে উচ্ছেদ নোটিশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ওই নোটিশে বলা হয়েছে, খাসিয়াদের ১২ জুনের মধ্যে বাড়িঘর, জায়গা জমি ছেড়ে চলে যেতে হবে, নইলে পুলিশ ফোর্স নিয়ে তাদের উচ্ছেদ করা হবে। খাসিয়ারা এখন আদালত ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারের এই আচরণ অবিচার ও অত্যাচারের চূড়ান্ত নমুনা। মধুপুর ও খাসিয়া পুঞ্জির ভূমি হলো ঐতিহ্যগত ও প্রথাগতভাবে আদিবাসীদের। এই অধিকারের স্বীকৃতি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার দলিলে আছে। আইএলও কনভেনশন ১০৭ অনুযায়ী অধিকৃত সকল ভূমির মালিকানা হলো আদিবাসীদের। জোর করে তাদের প্রথাগত ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা হলো মানবাধিকার লংঘন।
মানব বন্ধন থেকে ৫দফা দাবিনামা উত্থাপন করা হয়। দাবিসমূহঃ

১. অবিলম্বে মধুপুর বনের আদিবাসীদের ভূমি “রিজার্ভ ফরেস্ট” ঘোষণা বাতিল করতে হবে। আদিবাসীদের প্রথাগত ও ঐতিহ্যগত ভূমি মালিকানার স্বীকৃতি দিতে হবে।
২. মধুপুর জাতীয় উদ্যান প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে আদিবাসীদের সাথে যথাযথ ও অর্থপূর্ণ আলাপ-আলোচনা করতে হবে এবং আদিবাসীদের দখলীকৃত সব ভূমি জাতীয় উদ্যান প্রকল্পের বাইরে রাখতে হবে।
৩. খাসিয়াদের প্রথাগত জমি দখলের সকল ষড়যন্ত্র অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। নাহার পুঞ্জির খাসিয়াদের উচ্ছেদ নোটিশ বাতিল ঘোষণা করতে হবে।
৪. আদিবাসী ভূমিতে কোনো প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে আদিবাসীদের স্বাধীন মতামত গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৫. আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সকল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে।

Back to top button